Group Discussion




Powered by Froala Editor

শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য পরিবারের চেয়ে কি পরিবেশের ভূমিকাই বেশি?

Powered by Froala Editor

পক্ষে 
 ● পরিবেশের ভূমিকা বিতার্কিক শিশুর সঠিক বিকাশে অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরা তাদের চারপাশের পরিবেশ থেকে অনেক কিছু শেখায়। তারা তাদের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক, এবং অন্যান্যদের কাছ থেকে শিখতে পারে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত যে শিশুর শারীরিক বিকাশের মতো মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে তার জীবনের প্রথম বছরগুলো।
 ● যে শিশুটি জীবনের প্রথম সাত-আট বছর তার বিকাশের জন্য সহায়ক পরিবেশ পায়, সে অন্য শিশুদের (যারা সহায়ক পরিবেশ পায়নি) চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান, সামাজিক ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়। তার কথা বলার দক্ষতা, সামাজিক দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস প্রভৃতির বিকাশ ঘটে, যা পরবর্তী জীবনে তাকে সুখী ও সুন্দর থাকতে সহায়তা করে। শিশুরা জীবনের প্রথম বছরগুলো পরিবারের সঙ্গেই কাটায়। পরবর্তী সময়ে স্কুল, শিক্ষক, খেলার সাথি যুক্ত হয়ে শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। বর্তমানে স্কুল বয়সি শিশুরাও গৃহবন্দি অবস্থায় সময় কাটাচ্ছে। আমরা একটু সচেতন হয়ে শিশুদের বিভিন্ন কাজে, খেলায় নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে তাদের সময়টা আরো উপভোগ্য করে তুলতে পারি। 
 ● শিশুর সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য বয়স অনুযায়ী কী বলতে হবে, কী কী করতে হবে, কোন কাজ কীভাবে করতে হবে—এগুলো জানা জরুরি। এমন কিছু কথা আছে যেগুলো শিশুর সঙ্গে বললে তার মেধা, বুদ্ধি, বোঝার ক্ষমতা অনেক গুণ বৃদ্ধি পায় এবং তা পরবর্তী শিক্ষাজীবনে সহায়ক হয়; আবার অনেক কথা ও কাজ, যা আমরা সচরাচর শিশুদের বলি বা তাদের সঙ্গে করে থাকি, যেগুলো শিশুদের হতাশা, ক্ষোভ ও মানসিক বিপর্যয়ের কারণ হয়।
 
 
 বিপক্ষে 
 ● নরম কাদা মাটিসদৃশ শিশুরা শৈশবে যে পরিবেশে বেড়ে ওঠে, তার প্রভাব তার জীবনে স্থায়ী হয়ে যায়। এ কারণে পরিবার হচ্ছে শিশুর প্রথম বিদ্যালয়। প্রতিদিন মা-বাবার ঝগড়ার প্রত্যক্ষদর্শী অনেক শিশুর মধ্যে পরবর্তীকালে ব্যক্তিত্বের অস্বাভাবিকতাও দেখা যায়। সমাজে মানিয়ে চলতে অসুবিধা হয় তাদের। গর্ভকালে যেসব মা নির্যাতনের শিকার হন অথবা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকেন, তাঁদের সন্তানও জন্মের পর নানা জটিলতায় ভোগে। 
 ● নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই মেডিক্যাল সেন্টারের ট্রমাটিক স্ট্রেস স্টাডিজ বিভাগে সম্পন্ন এক গবেষণায় দেখা যায়, মাতৃগর্ভে থাকার সময় যাদের মা মানসিক আঘাতের শিকার হয়েছিলেন, সেই শিশুরা সহজেই মানসিক চাপে ভেঙে পড়ে এবং তাদের মধ্যে অ্যাংজাইটি বা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিস-অর্ডার হওয়ার আশঙ্কা বেশি। ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পারিবারিক কলহের মধ্যে বেড়ে ওঠা অথবা মাকে নির্যাতিত হতে দেখা শিশুদের জীবনের প্রথম দিকের বছরগুলোতে তারা হয় বিশেষভাবে অরক্ষিত ও অসহায়। এসব শিশু পরবর্তীকালে হিংস্র, ঝুঁকিপূর্ণ বা অপরাধমূলক আচরণ করতে পারে। বিষণ্নতা বা তীব্র দুশ্চিন্তায় ভোগার ঝুঁকিতেও পড়তে পারে এসব শিশু।’ শিশুর মানসিক বিকাশে মা-বাবার ভালোবাসা ও সান্নিধ্যের কোনো বিকল্প নেই। 
 ● পরিবারে মাকে নির্যাতিত হতে দেখলে শিশু নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। শিশুর মা-বাবার বন্ধুত্বপূর্ণ ও মধুর সম্পর্ক শিশুর মধ্যে পরম সুখ ও নিরাপত্তাবোধ জাগায়। বাবাকেও তাই শিশুর মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখতে হবে। ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টারের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ইশরাত শারমীন রহমান বলেন, ‘পারিবারিক নির্যাতন দেখে বেড়ে ওঠা শিশুরা এমন ধারণা নিয়ে বেড়ে ওঠে যে অন্যকে আঘাত করা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। সে যে কাউকে আঘাত করতে পারে। আবার সেও অন্যের কাছ থেকে আঘাত পেতে পারে। তাই বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই তাদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।’
 
 
 পরিবেশ এবং পরিবার উভয়ই শিশুর সঠিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিবেশ শিশুকে বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। পরিবার শিশুর মৌলিক দক্ষতা, মূল্যবোধ, এবং আত্মবিশ্বাস গঠন করে। পরিবেশের ভূমিকা শিশুর বিকাশে বেশি হতে পারে, কারণ শিশুরা পরিবারের বাইরে বেশি সময় ব্যয় করে এবং বিভিন্ন ধরনের মানুষকে দেখে এবং তাদের কাছ থেকে শিখে। তবে, পরিবারের ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। পরিবার শিশুর প্রথম স্কুল এবং শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Powered by Froala Editor