Group Discussion




Powered by Froala Editor

মেট্রোরেলই ঢাকা শহরের যানজট নিরসনের একমাত্র সমাধান

Powered by Froala Editor

২০১৬ সালের ২৬ জুন এমআরটি-৬ প্রকল্পের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে শুরু হয় স্বপ্নের ঢাকা মেট্রোর নির্মাণকাজের সূচনা। নকশাগত ত্রুটি, কোভিড মহামারি, হোলি আর্টিজান হামলায় জাপানি প্রকৌশলীদের মৃত্যুসহ বিভিন্ন কারণে কয়েক দফা পিছিয়েছে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ। নানা কারণে বেড়েছে নির্মাণ ব্যয়ও। অবশেষে বহু প্রতিক্ষার পরে ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ সালে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। তবে তা ছিলো আংশিক, পরবর্তীতে মিরপুর, উত্তরার সকল স্টেশন এবং ২০২৩ এর অক্টোবরে মতিঝিল স্টেশন চালু করা হয়। 
 ঢাকা শহরের অসহনীয় যানজট সম্পর্কে আমরা সকলে অবগত। ঢাকা মহানগরে যানজট-শাসন-ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়, ২০০৪ সালে ঢাকার রাস্তায় প্রতি ঘণ্টায় গাড়ির গতিসীমা ছিল গড়ে ২১ দশমিক ২ কিলোমিটার, ২০১৬ সালে তা ঘণ্টায় ৬ দশমিক ৮ কিলোমিটারে এসে দাঁড়ায়। দিনের পর দিন যেন আরো বেড়ে চলেছে যানজটের প্রকট। যানজট মোকাবিলায় তৈরি হয়েছে বাইপাস, এক্সপ্রেসওয়ে, উড়াল সড়ক। তবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের দরকার ছিলো মেট্রোরেলের। আধুনিক বিশ্বের প্রায় সকল দেশে এই যানটি বিদ্যমান। দ্রুতগতি ও দ্রুতসময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য এর বিকল্প কম। মিরপুর থেকে মতিঝিল যেতে যেখানে ২ ঘণ্টা কিংবা তার বেশি সময় লাগত, সেখানে মেট্রোরেল দিয়ে সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান গণামাধ্যমকে বলেন, ঢাকার মতো একটি জনবহুল শহরে মেট্রোরেল ছাড়া যানজটের তেমন কোনো সমাধান নেই। বক্তব্যটি যুক্তিযুক্ত। 
 বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। দেশের প্রধান প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং শিল্প, উন্নত কর্মসংস্থান, বাসস্থান, শিক্ষা ঢাকা কেন্দ্রিক হওয়ায় জীবনের এক পর্যায় উন্নত জীবনযাপনের লক্ষ্যে প্রায় সবাইকেই ঢাকায় আসতে হয়। সুতরাং ধারণক্ষমতার অনেক বেশি জনসংখ্যা ঢাকায়। তারওপর রাস্তায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা। পরিসংখ্যান বলছে বিগত বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে ঢাকার রাস্তায়। যানজট তৈরির জন্য যা একটি আশংকাজনক কারণ। এমতাবস্থায় বিকল্প পন্থা অবলম্বন করা ছাড়া উপায় থাকে না। এই বিকল্প পন্থা হচ্ছে মেট্রোরেল। যা একটি যানজটমুক্ত দ্রুত গতির যাতায়াত সমাধান। স্বাভাবিকভাবে জনসংখার বিরাট একটি অংশ মেট্রোরেল ভ্রমণ করলে রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের যানজট কমে যাবে। প্রতিদিন মেট্রোতে যাতায়াত করতে পারে প্রায় ৬ লাখ মানুষ। যা ২০৫১ সালে ১৩ লাখে পৌঁছে যাবে। 
 তবে মেট্রোরেল ঢাকাবাসীদের আশার কথা শুনালেও তা ঠিক কতটা আশা পূরণ করতে পারছে তা ভাবার বিষয়। তবে কি বহু প্রতিক্ষিত মেট্রোরেল আমাদের এত ভোগান্তির সমাধান করতে পারবে না? উত্তর হ্যাঁ কিংবা না দেয়ার আগে জেনে নেয়া দরকার ঢাকা শহরের এত জ্যামের কারণ কী কী এবং কতগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। ঢাকা শহরের যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এর অধিক জনসংখ্যা। অপরদিকে ঢাকা শহর বিকেন্দ্রীকরণ হ্রাস একটি বড় কারণ যা আগেই বলা হয়েছে। অপরদিকে রাজধানীর অসহনীয় যানজটের আরেকটি বড় কারণ শহরটির দুর্বল পরিবহন ব্যবস্থাপনা ও যোগাযোগ অবকাঠামো। ঢাকার রাস্তা যে পরিমাণ গাড়ি ধারণে সক্ষম, তার চেয়ে ৩০-৪০ শতাংশ বেশি গাড়ি চলে। আবার যানজটের একটি বড় কারণ হলো সড়কের সংস্কার ও উন্নয়নের কাজ যথাসময়ে ও সঠিকভাবে সম্পন্ন না হওয়া। এর ফলে পরিবেশ ও জনজীবন ব্যবস্থা দু’টিরই ক্ষতি হয়। 
 উপরে যেকয়টি কারণ বলা হয়েছে সেগুলো যানজটের অন্যতম কারণ। এখন যদি বলা হয়ে এইসব সমস্যার একমাত্র সমাধান কি মেট্রোরেল? উত্তর সম্ভবত না বোধকই হবে। যতদিন রাজধানীর এই বড় বড় সমস্যার সমাধান না হচ্ছে ততদিন মেট্রোরেলে অর্ধেকাংশ যাত্রী উঠলেও যানজটের সমস্যার সমাধান হবেনা। অন্যদিকে, বর্তমানে মেট্রোরেল যে রুটে যাত্রা করছে সেসকল রুটের বাইরের স্থানে মেট্রোরেল না থাকায় যানজট কমছে না। মেট্রোরেলে যাত্রা করেও অনেককে আবার গন্তব্যে পৌঁছাতে সাধারণ যানবাহন ব্যবহার করতে হচ্ছে। অপরদিকে শহরের একটা বড় অংশজুড়ে আছে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত আয়ের মানুষ। দৈনিক মেট্রোরেলের ভাড়া তাদের জন্য বহন করা বেশ কষ্টেরই বটে। সুতরাং তাদের জন্য মেট্রোরেল ঠিক কতটা স্বস্তির খবর নিয়ে আসে সেটা চিন্তার বিষয়। 
 সকল আলোচনা-সমালোচনা থেকে বোঝা যায় মেট্রোরেল যানজট নিরসনের অন্যতম সমাধান হতে পারে তবে তা সঠিক অনুসন্ধান, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পদক্ষেপ নেয়ার পর।

Powered by Froala Editor