Group Discussion




Powered by Froala Editor

অপরিকল্পিত নগরায়নই কি ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার কারণ?

Powered by Froala Editor

অপরিকল্পিত নগরায়নই রাজধানীর জলাবদ্ধতার মূল কারণ
 অধিক বৃষ্টিপাতের ফলে ঢাকার নানা স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট আকারে দৃশ্যমান হয় এবং গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়। মূলত রাজধানীর বৃষ্টির পানি ঢাকা ওয়াসার খাল এবং নর্দমার লাইনের মাধ্যমে নদীতে পৌঁছানোর কথা থাকলেও নর্দমার পানি চলাচলে বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে । ফলে ভারী বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা ঢাকাবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী এবং যাতায়াতের পথে জীবন্ত মরণফাঁদ। এ কারণে প্রায়শই রিকশা, ভ্যান, সিএনজি, প্রাইভেট কার অতিরিক্ত জলাবদ্ধতার মধ্যে ম্যানহোলের গর্তে পড়ে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটছে।
 রাজধানী ঢাকা বিশ্বের অন্যতম জনবহুল মেগা সিটি। ঢাকা মহানগরের জনসংখ্যা অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে ফলে শহরটি তাদের অভ্যন্তরীণ সংস্থান এবং ব্যবস্থাপনার সীমাবদ্ধতার কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নাগরিক সুবিধা মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে জলাবদ্ধতার মতো হাজারো সমস্যা নাগরিক জীবনকে বিষিয়ে তুলছে। দিনে মশা রাতে মাছি, এ নিয়ে ঢাকায় আছি- এটি ঢাকাবাসীর পুরোনো দিনের প্রবাদ। ঠিক তেমনিভাবে বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা ঢাকাবাসীর নিত্যদুর্ভোগের সাথী। এ থেকে যেন নিস্তার নেই, দিনকে দিন এ সমস্যা আরো প্রকট হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকা শহরে বর্ষার সময় (মে থেকে অক্টোবর) পানি দূষণ, যানজট, বায়ু ও শব্দদূষণ, বর্জ্য নিষ্কাশন, কালো ধোঁয়া ইত্যাদির মতো জলাবদ্ধতাও সাধারণ ও নিয়মিত সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। এই জলাবদ্ধতা ঢাকা শহরে যদিও মুষলধারে ঝড় বৃষ্টিপাতের কারণে ঘটে এবং এ কারণে বেশ কয়েক দিন ধরে রাস্তাঘাট ডুবে থাকে।
  বর্ষাকালে ঢাকা শহরে ভারীবর্ষণ হয়, কারণ এটি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের বিস্তৃত প্লাবনভূমিতে অবস্থিত। কিন্তু অপরিকল্পিত নগর উন্নয়ন কার্যক্রম এবং দ্রুত জনসংখ্যার বৃদ্ধির কারণে জলাধারগুলোতে এবং প্রাকৃতিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সামান্য হেরফের বা কোনো যত্ন না থাকায় প্রাকৃতিক পয়ঃনিষ্কাশন পথগুলোতে নগরীর জলপ্রবাহ সঠিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে না এবং এ কারণে সেসব জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তাই শহরের বিভিন্ন অংশ বেশ কয়েক দিন ধরে জলাবদ্ধ হয়ে থাকায় সংশ্লিষ্ট এলাকাটিকে সম্পূর্ণ অচল করে দিচ্ছে। অনিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নগরবাসীর সচেতনতার অভাবে ঢাকার বেশিরভাগ ড্রেনগুলো ভারী বর্জ্য এবং প্লাস্টিকের আবর্জনায় আবদ্ধ। এই জলাবদ্ধতা ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের জন্য বিরাট বোঝা এবং বৈরী সামাজিক, শারীরিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব তৈরি করে। নির্মম সত্য হচ্ছে ঢাকা শহরজুড়ে ৬৫টি প্রাকৃতিক খাল ছিল, কিন্তু বর্তমানে এ সংখ্যা মাত্র ২৬, কারণ তাদের বেশিরভাগই আবর্জনায় ভরপুর ও অবৈধ দখলদারদের দখলে। নগরটি এমনভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে যাতে পানি ব্যবস্থাপনার কোনো পরিকল্পিত সংযোগ বিবেচনা করা হয়নি। বর্তমানে এর কোনো সুষ্ঠু ও যথাযথ কোনো স্বল্পমেয়াদি প্রতিকারও নেই। এ মেগা-সিটিতে উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে প্রাকৃতিক সংযোগগুলো এরই মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে উঠেছে এবং এটিকে একটি কংক্রিট জঙ্গলে পরিণত করা হয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন সমস্যা সৃষ্টি করেছে, কারণ ঢাকার মোট ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৩৩০ বর্গকিলোমিটার এরই মধ্যে ঘরবাড়ি, জলের প্রবাহের পথে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এখন সমস্যার ক্ষেত্রগুলো যদি সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খোঁজা হয়, তবে সঠিক সমাধান খুব কঠিন নয়। বক্স কালভার্টগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পানি খুব ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয়- সম্ভবত স্বাভাবিক প্রবাহের গতির পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ হতে পারে। জলাবদ্ধতা মোকাবিলার জন্য জনসেবা সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, সমন্বয় এবং জনসচেতনতা বাড়াতে প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিতে হবে। দিন দিন এই শহরে আগমনকারী জনসংখ্যা উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে; কিন্তু সে হারে পরিকল্পিত নাগরিক সুবিধা বাড়ছে না। অধিক জনসংখ্যা এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন পদ্ধতির জন্য পুরো নগর জীবনে নেমে আসছে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব। যেমন- পরিবেশ দূষণ, বাসস্থান ও খাদ্যের অভাব, পরিবহন সংকট, যানবাহন সংকট ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র অভাব, বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়া।
 
 জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি এবং অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে অনেক বড় বড় শহরের সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা বর্তমানে সংশ্লিষ্ট নগর কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। সুতরাং স্থায়ী জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার কার্যকর পরিচালনা এবং টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য সংশ্লিষ্ট নগর কর্তৃপক্ষ এবং সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, সমন্বয় এবং সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।
 
 
 ঢাকা মহানগরীতে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ছাড়াও সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকা, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, জলাভূমি, নিম্নাঞ্চল, খাল ও নদী ভরাট ও দখল, খাল ও নালা-নর্দমা আবর্জনায় ভরাট এবং নিয়মিত পরিষ্কার না করা, সংস্থাগুলোর দায়িত্বে অবহেলা, সমন্বয়হীনতা, জনসচেতনতার অভাব রাজধানীর জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ।নগরীতে যতগুলো প্রাকৃতিক খাল আছে তার অনেকাংশ দখল ও ভরাট হওয়ার কারণে বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারছে না। জলাশয় ও ডোবা বৃষ্টির পানির আধার হিসেবে কাজ করে থাকে। অবৈধভাবে অনেক জলাশয় ভরে সেখানে ঘরবাড়ি, আবাসন প্রকল্প, অফিস ভবন অথবা শপিংমল করা হয়েছে। ঢাকা অতিদ্রুত নগরায়ণের ফলে বৃষ্টির পানির সব অংশই নর্দমা ও প্রাকৃতিক খালের মধ্যে যাচ্ছে এবং মাটির নিচে তেমন পানির প্রবাহ যেতে পারছে না।কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে ময়লা-আবর্জনায় নর্দমা ও প্রাকৃতিক খাল ভরাট হয়ে বৃষ্টির পানি প্রবাহের ক্ষমতা অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত একাধিক সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্নয়হীনতা এ সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।ঢাকা মহানগরীতে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, জলাভূমি, নিম্নাঞ্চল, খাল ও নদী ভরাট ও দখল, খাল ও নালা-নর্দমা আবর্জনায় ভরাট এবং নিয়মিত পরিষ্কার না করা, সংস্থাগুলোর দায়িত্বে অবহেলা, সমন্বয়হীনতা, জনসচেতনতার অভাব রাজধানীর জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ।

Powered by Froala Editor