Group Discussion




মাস্তানদের প্রতহত করার জন্য আইন প্রয়োগই যথেষ্ট নয়

উক্তির পক্ষে যুক্তি
মাস্তানরা হল এমন ব্যক্তি যারা শক্তি, ভয় দেখানো বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে অন্যদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে। তারা সাধারণত অপরাধমূলক কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকে, যেমন চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অপহরণ, খুন ইত্যাদি। মাস্তানদের প্রতিরোধ করার জন্য আইন প্রয়োগের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি মাস্তানদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদেরকে শাস্তি দিতে পারে। এছাড়াও, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি মাস্তানদের আস্তানা ও কার্যকলাপের উপর নজরদারি করে তাদেরকে প্রতিহত করতে পারে। সভ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। সর্বপ্রকার অসভ্য ও অনৈতিক কাজ দমনে সরকারকে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌম ক্ষমতাকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। কারণ এর ওপরই জনকল্যাণ নির্ভর করে। কেবল আইন প্রণয়ন করলেই চলবে না, সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

এজন্য রাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ, এমনকি নির্মম হতে হবে। সপ্তদশ শতাব্দীর দার্শনিক টমাস হব্সের ভাষায় বলতে গেলে ‘লেভিয়াথান’ হতে হবে। লেভিয়াথান অর্থ বৃহৎ ভয়ংকর এক দানব। হব্স বিশ্বাস করতেন, রাষ্ট্রীয় শক্তি কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে ক্রমেই দেশ প্রকৃতির রাজ্যে রূপান্তরিত হতে পারে। বর্তমানে এ দেশে ধর্ষণসহ ভয়ংকর সব অপরাধ দমনে রাষ্ট্র ও সরকারের ‘লেভিয়াথান’ হওয়ার বিকল্প আছে বলে মনে হয় না। তবে তা অবশ্যই ন্যায়ের স্বার্থে, জনকল্যাণের স্বার্থে।
 
উক্তির বিপক্ষে যুক্তি
আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মাস্তানদের প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন প্রয়োজন। মাস্তানদের প্রতিরোধ করার জন্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা । মাস্তানি একটি সামাজিক সমস্যা। মাস্তানদের উৎপত্তি হয় দারিদ্র্য, বেকারত্ব, শিক্ষার অভাব, সামাজিক বৈষম্য ইত্যাদি কারণে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন প্রয়োজন। সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, শিক্ষার অভাব, সামাজিক বৈষম্য ইত্যাদি সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। এতে মাস্তানির মতো সমস্যাও কমে যাবে। সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষকে সহিংসতা, অপরাধমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সচেতন করা সম্ভব। এতে মাস্তানির মতো সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিশোর গ্যাং বা মাদক নির্মুলে সমাজিক ভাবে নানা কর্মসূচীর সাথে সাথে ক্রীড়া চর্চা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বেশি করে আয়োজন করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের একাডেমিক ক্যালেন্ডারে সারাবছরব্যাপি এসব কর্মসূচী আয়োজন করতে হবে। তবেই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম এসব অসঙ্গতি থেকে সরে আসবে। আমাদের মনে রাখতে হবে অপরাধ নির্মুলে শুধু আইন প্রয়োগই যথেস্ট নয়। তাদের যথাযথ মোটিভেশন প্রয়োজন। কারণ একজন কিশোর বা মাদক ব্যবসায়ী জেল বা সংশোধনাগার থেকে বের হলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ঘটনা খুবই কম দেখা যায়।