Group Discussion




Powered by Froala Editor

কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব

Powered by Froala Editor

বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ দেশ। বাংলাদেশের আবওহাওয়ার জন্য ব্রিটিশরা ভারতবর্ষে এসেছিলো ব্যবসা করতে, লুট করতে। তারা জানত, এই অঞ্চলে চাইলে সোনা ফলানো যাবে। মোট কথা, এই দেশ কৃষি প্রধান দেশ। কিন্তু উন্নয়নের জোয়ারে বাংলাদেশ ক্রমেই শিল্পপ্রধান দেশ হয়ে উঠছে। চলতি বছরের অর্থনৈতিক খাতে কৃষির অবদান ছিলো তাই শিল্পক্ষেত্রের চেয়ে কম। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে কৃষিতে বিনয়োগ কমে যাওয়া। কৃষিতে বিনিয়োগ কেবল খাদ্য নিরাপত্তার উন্নতি এবং টেকসই উন্নতির জন্য সবচেয়ে কার্যকরী কৌশল। এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও অপরিহার্য। 
 প্রাচীন কৃষি সমাজ থেকে আধুনিক জনসমাজে রূপান্তরিত হওয়ার এই প্রক্রিয়ায় বা আধুনিকায়নে, সনাতন সমাজের কৃষি অর্থনীতি যে অবদান রেখেছে তা নিঃসন্দেহে ধারণা করা যায়। কৃষি খাতের আধুনিকায়ন ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানো ছাড়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন সম্ভব হতো না। কৃষির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সমাজের শিল্পায়ন ও আধুনিকায়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমাজের উন্নয়ন, পরস্পর নিবিড় সম্পর্কিত। তবে ১৯৫০ সালের পর থেকে কৃষি খাতকে অবহেলা করে শিল্পায়নের দিকে মনোযোগ দেয়া হয়। যা সফল ও হয়। কৃষিকাজ করে লোকসানের মুখ দেখা কৃষক তখন শিল্প প্রতিষ্ঠানে অধিক মজুরি পাওয়া শুরু করে। তবে ক্রমেই কৃষিকাজে অবহেলিত ও বঞ্চিত হওয়া কৃষক শ্রমিক হিসেবেও তার ন্যায্য থেকে বঞ্চিত হয়। যার ফলে ধনী আরো ধনী হয় এবং গরীব হয় আরো গরীব।
 ক্রমেই গড়ে ওঠা এই পুঁজিবাদ সমাজে সাম্যতা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে কৃষিখাতের অবদান অনস্বিকার্য। কৃষিখাতে দ্রুত উন্নতি সম্ভব কারণ অল্প বিনিয়োগে অধিক লাভ করা যায় যা শিল্পক্ষেত্রে কিছুটা কঠিনই বটে। একারণে বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নতুন করে কৃষি নিয়ে আগানোর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে।
 অপরদিকে, শিল্পখাতের উন্নয়নের সম্প্রসারণে বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তবে কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। অধিক বিনিয়োগ, কৃষিকাজের সরঞ্জামের আধুনিকায়ন, কৃষকের প্রাপ্য পাওনা নিশ্চিতকরণ, দূর্নীতি রোধে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে কৃষিখাতের অবদান বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে অধিক প্রতিপন্ন হবে।
  
 তবে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে বাংলাদেশকে পরিকল্পিত পরিবর্তন আনতে হবে সকল ক্ষেত্রে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এখন উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, পরিবহন, কৃষি এবং নির্মাণ-এই পাঁচ খাতের অবদান ৬৭ শতাংশ। এছাড়া পোশাক শিল্প থেকে আসে জিডিপির একটি বড় অংশ। তুলনামূলক পিছিয়ে রয়েছে সেবা খাত। এই খাতেও উন্নয়ন প্রয়োজন। অপরদিকে কৃষিখাত অবদান রাখছে ১০ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ কৃষিখাতে উন্নয়নের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে যার অবদান কমপক্ষে ২০ শতাংশ পার হয়ে যাবে। 
 বলা যায়, লোশন, শ্যাম্পু, ঘড়ি ছাড়া মানুষ একদিন বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু খাদ্য ছাড়া একদিন ও না। এই মৌলিক চাহিদা পূরণে যখন বাংলাদেশের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে তখন দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে কৃষিখাতের ভূমিকা সবার আগে থাকা উচিত।

Powered by Froala Editor

See More

Powered by Froala Editor

জেষ্ঠ্যতার অভিজ্ঞতা নয়, তারুণ্যের শক্তিই উন্নয়নের প্রভাবক

Powered by Froala Editor

পক্ষে যুক্তি:
 ● তারুণ্য হল জীবনের একটি সময় যখন মানুষ নতুন জিনিস শিখতে এবং নতুন ধারণা তৈরি করতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। তারা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি উৎসাহী।
 ● তারুণ্য হল জীবনের একটি সময় যখন মানুষ সবচেয়ে বেশি শক্তি ও উদ্যম রাখে। তারা নতুন লক্ষ্য অর্জনের জন্য সবচেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী।
 ● তারুণ্য হল জীবনের একটি সময় যখন মানুষ নতুন আশা ও স্বপ্ন দেখে। তারা একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য কাজ করতে সবচেয়ে বেশি উদ্বুদ্ধ।
 ● বয়স্করা তাদের জীবনে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়। এই অভিজ্ঞতা থেকে তারা অনেক কিছু শিখে এবং জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উপায় শিখে। এই অভিজ্ঞতা তাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
 ● তরুণরা সাধারণত নতুন ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসে। এই নতুন ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
 ● তরুণরা সাধারণত উদ্যোগী ও সাহসী হয়। এই উদ্যোগ ও সাহস উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
 ● তরুণরা সাধারণত পরিবর্তনের প্রবণতা রাখে। এই পরিবর্তনের প্রবণতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
 ● তারুণ্য হল শক্তি ও উদ্ভাবনের প্রতীক। তারুণ্যরা নতুন ধারণা, নতুন পদ্ধতি ও নতুন সমাধান নিয়ে আসে। তারা পুরনো ধারণা ও পদ্ধতিকে চ্যালেঞ্জ করে নতুনত্বের পথ তৈরি করে। 
 ● তারুণ্য পরিবর্তনের প্রেরণা। তারা সমাজের সমস্যাগুলিকে সমাধান করার জন্য উদ্যমী হয়। তারা নতুনত্বের মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন আনতে চায়।
 ● তারুণ্য আত্মবিশ্বাস ও সাহসী। তারা নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে ভয় পায় না। তারা তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য দৃঢ়সংকল্প।
  
 বিপক্ষে যুক্তি:
 ● জেষ্ঠ্যতা হল জীবনের একটি সময় যখন মানুষ অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এই অভিজ্ঞতা তাদেরকে সমস্যা সমাধানে এবং নতুন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাহায্য করে।
 ● জেষ্ঠ্যতা হল জীবনের একটি সময় যখন মানুষ অনেক জ্ঞান অর্জন করে। এই জ্ঞান তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে এবং সঠিক পথ বেছে নিতে সাহায্য করে।
 ● জেষ্ঠ্যতা হল জীবনের একটি সময় যখন মানুষ নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করে। এই গুণাবলী তাদেরকে অন্যদেরকে অনুপ্রাণিত করতে এবং একটি লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করতে সাহায্য করে।
 ● বয়স্করা সাধারণত তারুণ্যের তুলনায় বেশি জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে। এই জ্ঞান ও দক্ষতা তাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
 ● বয়স্করা সাধারণত তারুণ্যের তুলনায় বেশি নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করে। এই নেতৃত্বের গুণাবলী তাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
 ● জেষ্ঠ্যরা অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান সমৃদ্ধ। তারা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এই অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান তারা তারুণ্যদের সাথে শেয়ার করতে পারে।
 ● জেষ্ঠ্যরা নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা প্রদান করতে পারে। তারা তারুণ্যদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে।
 ● জেষ্ঠ্যরা স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্য প্রদান করতে পারে। তারা তারুণ্যদেরকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করতে পারে।
 
 জেষ্ঠ্যতার অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের শক্তি উভয়ই উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জেষ্ঠ্যদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান উন্নয়নের পথকে সুগম করে। অন্যদিকে, তারুণ্যের শক্তি ও উদ্ভাবন উন্নয়নকে গতিশীল করে। উভয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করা সম্ভব। উন্নয়নের প্রভাবক হিসেবে জেষ্ঠ্যতার অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের শক্তি উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জেষ্ঠ্যতার অভিজ্ঞতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করে, অন্যদিকে তারুণ্যের শক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রে গতিশীলতা ও পরিবর্তনকে নিশ্চিত করে। উভয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব।একটি দেশের উন্নয়নের জন্য তারুণ্যের শক্তি গুরুত্বপূর্ণ। তারুণ্য হল উদ্ভাবনের সময়। তারা নতুন জিনিস শিখতে এবং নতুন ধারণা তৈরি করতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। তারা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি উৎসাহী। তবে, উন্নয়নের জন্য জেষ্ঠ্যতার অভিজ্ঞতাও গুরুত্বপূর্ণ। জেষ্ঠ্যতা হল অভিজ্ঞতার সময়। তারা অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এই অভিজ্ঞতা তাদেরকে সমস্যা সমাধানে এবং নতুন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাহায্য করে। জেষ্ঠ্যতা হল জ্ঞানের সময়। তারা অনেক জ্ঞান অর্জন করে। এই জ্ঞান তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে এবং সঠিক পথ বেছে নিতে সাহায্য করে। জেষ্ঠ্যতা হল নেতৃত্বের সময়। তারা নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করে। এই গুণাবলী তাদেরকে অন্যদেরকে অনুপ্রাণিত করতে এবং একটি লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। সুতরাং, একটি দেশের উন্নয়নের জন্য তারুণ্যের শক্তি এবং জেষ্ঠ্যতার অভিজ্ঞতা উভয়ের সমন্বয় প্রয়োজন।

Powered by Froala Editor

See More

বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু, তবে ধর্মান্ধ নয়

উক্তির পক্ষে যুক্তি
বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের কিছু উদাহরণ -
বাংলাদেশের মানুষ প্রতিদিন নামাজ পড়ে। তারা রমজান মাসে রোজা রাখে এবং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উদযাপন করে। বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষকে সম্মান করে। তারা বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব পালন করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পহেলা বৈশাখ, দুর্গাপূজা, বড়দিন, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। তারা মনে করে যে, ধর্ম শান্তি ও সম্প্রীতির প্রচার করার জন্য ব্যবহার করা উচিত। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় রীতিনীতি ও অনুষ্ঠান পালনে অত্যন্ত ভক্তিশীল। তারা ধর্মীয় স্থানগুলোতে গিয়ে প্রার্থনা করে।
এই যুক্তিগুলো থেকে বোঝা যায় যে, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু হলেও তারা ধর্মান্ধ নয়। তারা ধর্মের গুরুত্বকে বুঝে এবং ধর্মের শিক্ষাকে অনুসরণ করে নৈতিক ও সুশীল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে চায়।
 
উক্তির বিপক্ষে যুক্তি
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু হলেও তারা ধর্মান্ধ নয় এই উক্তির বিপক্ষে কিছু যুক্তিও রয়েছে।
বাংলাদেশে ধর্মের নামে সহিংসতা ও অন্যায়ের ঘটনা ঘটেছে। যেমন হিন্দুদের উপর হামলা, বৌদ্ধ মন্দির ভাঙচুর, বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি।
বাংলাদেশের কিছু ধর্মীয় নেতা ধর্মের নামে সহিংসতা ও বিভাজনের প্রচার করে থাকেন।
এই যুক্তিগুলো থেকে বোঝা যায় যে, বাংলাদেশের মানুষ সবসময় ধর্মভীরুতা ও ধর্মান্ধতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে না। কিছু ক্ষেত্রে তারা ধর্মের নামে সহিংসতা ও অন্যায়ের সাথে জড়িত হয়।
 
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু, তবে ধর্মান্ধ নয় এই উক্তিটি মোটামুটি সঠিক। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মের গুরুত্বকে বুঝে এবং ধর্মের শিক্ষাকে অনুসরণ করে নৈতিক ও সুশীল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে চায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে তারা ধর্মের নামে সহিংসতা ও অন্যায়ের সাথে জড়িত হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করা প্রয়োজন। ধর্মীয় নেতা ও শিক্ষকদেরকে ধর্মের নামে সহিংসতা ও বিভাজনের প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচির মাধ্যমে ধর্মীয় সহনশীলতা ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। দেশের ৯০% এরও বেশি মানুষ মুসলিম। মুসলমানদের পাশাপাশি এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা বাস করে। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় রীতিনীতি ও অনুষ্ঠান পালনে অত্যন্ত ভক্তিশীল। তারা ধর্মীয় উৎসবগুলোকে অত্যন্ত আনন্দের সাথে উদযাপন করে। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু হলেও তারা ধর্মান্ধ নয়। তারা ধর্মের নামে সহিংসতা বা অন্যায়ের সাথে জড়িত হয় না। তারা ধর্মের শিক্ষাকে শান্তি, সম্প্রীতি ও সহনশীলতার প্রচার করার জন্য ব্যবহার করে।

See More

Powered by Froala Editor

টাকা পয়সাই শুধুমাত্র সংসারে সুখ-শান্তি বয়ে আনতে পারে

Powered by Froala Editor

মানুষ টাকার পেছনে ছুটছে, মানুষ সুখের পেছনে ছুটছে। তাহলে কি 'টাকা' 'সুখের' সমার্থক? যার টাকা আছে, সেইই কি সুখী? উত্তরটা আসলে আপেক্ষিক এবং পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। জীবনে স্থিতিশীল হওয়ার জন্য, জীবন নির্বাহ করার জন্য টাকা অবশ্যই দরকার। 
 কথায় আছে, সংসারে অভাব আসলে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়। কথাটা সর্বজনীন সত্যতা না থাকলে অনেকাংশে কথাটা সত্য। নিত্য জীবনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা, সন্তানের চাহিদা পূরণ, সুরক্ষিত জীবন যাপনের জন্য টাকাই মূল। এই জিনিসটি বাদে সংসারের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। ধ্বংসের মুখের পড়ে বাচ্চা ও নিজেদের ভবিষ্যৎ। মানসিক অশান্তিতে ধরা দেয় সংসারে অশান্তি। 
 
 সকলেরই স্বপ্ন থাকে একটি সুন্দর জীবনের। যেই জীবনে থাকবে শান্তি। সেই শান্তি কীভাবে আসবে? হয়ত একটি ভালো সংসার, একটি ভালো চাকরি, যেখানে থাকবে না কোন অভাব। এ সব স্বপ্ন পূরণের একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে অর্থ। একটি পরিমিত পরিমাণের অর্থ উপার্জন সংসারে এনে দেয় স্থিতিশীলতা, ভারসাম্য, মানসিক শান্তি এবং সুখ। 
 
 তবে একটি কথা আমাদের সকলেরই জানা আছে। অর্থই সকল অনর্থের মূল। এ কথা সত্য যে মানুষ সুখের খোঁজে, শান্তির খোঁজে টাকার পিছনেই দৌড়ায়। অনেকে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে যান। অবৈধ পথে রোজগার করেন। ফলে ধনীরা হয় ধনী, গরিবরা হয় আরও গরিব। কোন এক বিখ্যাত ব্যক্তি বলেছিলেন যে, টাকা আপনাকে মখমলের বিছানা এনে দিতে পারে কিন্তু ঘুম নয়, টাকা আপনাকে লোভনীয় খাবার এনে দিতে পারবে কিন্তু মুখের স্বাদ নয়, টাকা দিয়ে আপনি সবচেয়ে দামী রোবট কিনতে পারবেন কিন্তু মানুষের আসল ভালোবাসা কিনতে পারবেন না। অনেক অভাবী পরিবার দিনের রোজগারে দিনে খেয়ে রাতে শান্তির ঘুম দেয়, অল্প উপার্জনে, অল্প সঞ্চয়ে, অল্প চাহিদায় তারা দিব্যি সুখে জীবন কাটিয়ে দিতে পারে। সেই অভাবের সংসারেও ভালোবাসা থাকে, আনন্দ থাকে। আবার অনেক বড়লোক কিংবা অর্থবিত্ত পরিবারে সুখ থাকে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে মাদকাসক্ত, মানসিক ব্যাধি, সম্পর্কজনিত সমস্যা ইত্যাদি। কিংবা কোন মরণব্যাধি রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায় না। প্রচুর অর্থ খরচ করেও এরকম কিছু সমস্যা থাকেই যেগুলোর সমাধান করা যায় না। আবার অনেকেদের চাহিদা এত বিপুল পরিমাণে থাকে যে যত অর্থ সংসারে আসুক না কেন সেখানে শান্তি আসতে পারে না। হয়তবা কিছুদিন পর পর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তা পূরণের জন্য মানসিক অস্থিরতা লেগে থাকে। 
 
 টাকা জীবন ধারণের জন্য অন্যতম প্রধান নিয়ামক। অর্থ ব্যতীত বেঁচে থাকা সম্ভব না। জীবনের প্রায় সকল চাহিদা অর্থ দিয়ে পূরণ করা যায়। তবে সুখ জিনিসটি অর্থ দিয়ে ক্রয় করা যায় না। ক্রয়বিক্রয়ের মাধ্যমে সাময়িক শান্তি পাওয়া যায়, সুখ পাওয়া যায় তবে তা ক্ষণস্থায়ী। সুখ নির্ভর করে নিজের মানসিক চিন্তা ধারার ওপরে। নিজেকে প্রশ্ন করে জানতে হবে যে আমার সকল সুখ কেবল অর্থ এবং অর্থ সংবলিত জিনিসেই সীমাবদ্ধ নাকি তার বাইরের কিছু ও আমাকে সুখী করে? তাহলেই বুঝতে পারা যাবে জীবন ও সংসারে শুধু টাকা সুখ আনতে পারে না কি না।

Powered by Froala Editor

See More

সমুদ্র সম্পদের ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে খনিজ সম্পদের সীমিত ব্যবহার করা সম্ভব

পক্ষে
 ● সমুদ্র সম্পদের ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে খনিজ সম্পদের সীমিত ব্যবহার করা সম্ভব। সমুদ্র খনিজ সম্পদের একটি বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে তেল, গ্যাস, খনিজ, এবং ধাতু। এই সম্পদগুলিকে খনন এবং ব্যবহার করার জন্য নতুন প্রযুক্তিগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে উন্নত হচ্ছে।সমুদ্র তেল এবং গ্যাসের বিশ্বের বৃহত্তম উৎস। 
 ● ২০২০ সালে, বিশ্বের মোট তেলের উৎপাদনের প্রায় ৩০% এবং গ্যাসের উৎপাদনের প্রায় ৩০% সমুদ্র থেকে এসেছে। সমুদ্র প্রচুর পরিমাণে খনিজ ধারণ করে, যার মধ্যে রয়েছে তামা, লোহা, ম্যাঙ্গানিজ, এবং নিকেলের মতো ধাতু। এই খনিজগুলি বিদ্যুৎ উৎপাদন, নির্মাণ, এবং অন্যান্য শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্র প্রচুর পরিমাণে ধাতু ধারণ করে, যার মধ্যে রয়েছে সোনা, রূপা, প্ল্যাটিনাম, এবং প্যালেডিয়ামের মতো মূল্যবান ধাতু। এই ধাতুগুলি বৈদ্যুতিন, গহনা, এবং অন্যান্য শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 
 ● সমুদ্র সম্পদের ব্যবহার বৃদ্ধি করা খনিজ সম্পদের উপর নির্ভরতা হ্রাস করার একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। তবে, সমুদ্র সম্পদ পরিবেশের জন্য সম্ভাব্য হুমকিও সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তেল ও গ্যাসের খনন তেল ছড়িয়ে পড়ার কারণ হতে পারে, যা পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। খনিজ ও ধাতু উত্তোলনও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সমুদ্র ও এর সম্পদকে কতভাবে ও কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে বিভিন্ন দেশে চলছে গবেষণা ও কর্মযজ্ঞ। 
 ● ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিশ্বের বিভিন্ন উপকূলীয় দেশ ও দ্বীপের সরকারগুলো অর্থনীতির এক নতুন ক্ষেত্র হিসেবে সমুদ্রের দিকে নজর দিচ্ছে এবং ব্লু ইকোনমির ওপর নির্ভর করে দেশের প্রবৃদ্ধি নীতি গ্রহণ করেছে। ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি এখন সমুদ্র অর্থনীতির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। খাদ্য, খনিজ, জ্বালানি ও ওষুধের কাঁচামালের উৎস হিসেবে সমুদ্রের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের মতো দেশগুলো বহু বছর ধরে সামুদ্রিক অর্থনীতির ওপর নির্ভর করে আসছে। চীনে সমুদ্র অর্থনীতির টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। এগুলো হলো সমুদ্র কৌশলকে জাতীয় কৌশল হিসেবে গড়ে তোলা, জমি ও সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, সামুদ্রিক সম্পদ বিকাশে অত্যাধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার, সামুদ্রিক পরিবেশের জন্য উপযুক্ত আইন প্রণয়ন এবং সমুদ্র রক্ষার নতুন ধারণা তৈরি করা। বাংলাদেশও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারে।
 বিপক্ষে 
 ● সমুদ্র সম্পদ পরিবেশের জন্য সম্ভাব্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। তেল ও গ্যাসের খনন তেল ছড়িয়ে পড়ার কারণ হতে পারে, যা পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। খনিজ ও ধাতু উত্তোলনও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সমুদ্র সম্পদগুলি খনিজ সম্পদের বিকল্প হিসাবে সীমিতভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। 
 ● সমুদ্র খনিজ সম্পদের একটি বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে, তবে এই সম্পদগুলি সবসময় খনন করা সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ, কিছু খনিজ সম্পদ সমুদ্রের গভীরতম অংশে অবস্থিত, যেখানে এগুলি খনন করা খুব ব্যয়বহুল বা প্রযুক্তিগতভাবে অসম্ভব। সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে খনিজ সম্পদের উপর নির্ভরতা হ্রাস করা যেতে পারে, তবে এটি সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা সম্ভব নয়। খনিজ সম্পদগুলি এখনও অনেক শিল্পের জন্য অপরিহার্য, এবং সমুদ্র সম্পদগুলি এই চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে না। 
 ● সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের সম্ভাব্য সুবিধা এবং ঝুঁকিগুলি বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। টেকসই উপায়ে সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার করা সম্ভব, তবে এটি করার জন্য সতর্ক পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন প্রয়োজন। তেল ও গ্যাসের খনন তেল ছড়িয়ে পড়ার কারণ হতে পারে, যা পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ২০১০ সালের মেক্সিকো উপসাগরের তেল ছড়িয়ে পড়ার প্রায় ২০০ মিলিয়ন গ্যালন তেল ছড়িয়ে পড়েছিল, যা মেক্সিকো উপসাগরের পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। খনিজ ও ধাতু উত্তোলনও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। খনিজ ও ধাতু উত্তোলন প্রায়শই জল দূষণ, মাটি দূষণ, এবং বায়ু দূষণের কারণ হয়। সমুদ্র সম্পদগুলি সবসময় খনন করা সম্ভব নয়। কিছু খনিজ সম্পদ সমুদ্রের গভীরতম অংশে অবস্থিত, যেখানে এগুলি খনন করা খুব ব্যয়বহুল বা প্রযুক্তিগতভাবে অসম্ভব। সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে খনিজ সম্পদের উপর নির্ভরতা হ্রাস করা যেতে পারে, তবে এটি সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা সম্ভব নয়। খনিজ সম্পদগুলি এখনও অনেক শিল্পের জন্য অপরিহার্য, এবং সমুদ্র সম্পদগুলি এই চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে না। 
 
সমুদ্র সম্পদের ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে খনিজ সম্পদের সীমিত ব্যবহার করা সম্ভব। তবে, এই প্রক্রিয়াটিতে পরিবেশগত ঝুঁকি রয়েছে এবং সমুদ্র সম্পদগুলি সবসময় খনন করা সম্ভব নয়। সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের সম্ভাব্য সুবিধা এবং ঝুঁকিগুলি বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।

See More

যুবসমাজের অবক্ষয়ের জন্য সমাজব্যবস্থাই দায়ী

গত ৮ অক্টোবর ঢাকার হাজারীবাগে ১০ তলা ভবন থেকে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। মীর জাওয়াদ বিন জসিম নামের ওই শিক্ষার্থী ঢাবির উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষে পড়তেন। শুধু একজন জাওয়াদ নয়, জানা গেছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত গড়ে ৪৫ দশমিক ১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এত আত্মহত্যার কারণ কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর কারণ সমাজের স্রোতের সাথে তাল মিলাতে না পারা, সামাজিক চাপ মোকাবিলা না করতে পারা, অসুস্থ প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। 
অবক্ষয় শব্দটির অর্থ কী? ক্ষয়প্রাপ্তি, নিম্নগতি, বিনাশ। যুবসমাজের ক্ষয়প্রাপ্তি ঘটছে, হচ্ছে বিনাশ। যার একটা ছোট উদাহরণ দেয়া হয়েছে। ছোট উদাহরণ এজন্য বলছি যে, যারা আত্মহত্যা করে ফেলেছে তাদের সংখ্যা গণনা করা যায় কিন্তু যারা প্রতিনিয়ত নিজেদের সাথে যুদ্ধ করে চলেছে কিংবা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েও এগোতে পারছে না তাদের সঠিক সংখ্যা গণনা করা সম্ভব নয়। তবুও পরিসংখ্যান বলছে, প্রায়ই ৫০ শতাংশ তরুণ-তরুণী মানসিক অবসাদে ভোগে ও একবার হলেও তারা আত্মহত্যার কথা ভেবেছে। তাহলে সমাজ ব্যবস্থা এই তরুণ সমাজের অবক্ষয়ের জন্য কীভাবে দায়ী? 
 বর্তমান বিশ্ব দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। প্রযুক্তির এই যুগে উন্নত বিশ্বের সাথে সমান গতিতে এগিয়ে চলতে গেলে আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে চিন্তাধারায়, পরিবর্তন করতে হবে পুরানো ঘুণে ধরা নিয়ম। আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীরা যখন প্রযুক্তির কল্যাণে কিংবা আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য নিজেদের পরিবর্তিত করতে চাচ্ছে তখনই বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে আমাদের সমাজের পুরানো মতধারা, গৎ বাঁধা নিয়ম ও কুসংস্কার। এর সাথে অন্যমাত্রায় যোগ হয়েছে প্রজন্মগত ব্যবধান। একুশ শতকে পৃথিবীতে হয়েছে অনেক পরিবর্তন, হয়েছে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, পৃথিবী এসেছে হাতের মুঠোয়। সমাজের প্রবীণ ব্যক্তিগণ এখনো অনেকেই সেই উন্নয়নের সাথে পুরোপুরি পরিচিত হতে পারেননি। কিংবা মেনে নিতে পারেনি আধুনিকায়ন। অনেকের চোখে এই আধুনিকায়ন সার্বিক অবক্ষয়। এই মতবিরোধের দোলাচালে পড়ে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যুবক-যুবতীরা। তারা এগোতে পারেছেনা। শুরুতেই তাদের সামনে দিয়ে দেয়া হচ্ছে নিয়ম ও বিবেকের বেড়িবাঁধ। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মত পার্থক্য, বাক স্বাধীনতায় বাঁধা, বিরোধ, বুঝতে না পারা এনে দিচ্ছে বিষন্নতা। 
 
 একজন শিল্পী যখন তার সম্পূর্ণ নিজের ভাবনা রঙ তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলেন তখন তা হয় সর্বশ্রেষ্ঠ, কিন্তু যখনই তাকে অনেক নিয়ম এবং শর্ত দেয়া হয় শিল্পকর্ম সৃষ্টির জন্য তখন তার শৈল্পিক স্বত্বা পুরোপুরি প্রকাশ পায়না। সমাজের যুবক-যুবতীরা প্রত্যেকে একেকজন সম্ভাবনাময় শিল্পী। তারা তাদের নিজেদেরকে প্রকাশ করতে চায়, নতুন কিছু করতে চায়, পরিবর্তন আনতে চায়। তাদের সেই সত্ত্বা প্রকাশে যখন বাঁধা দেয়া হয়, নিয়মের বেড়াজালে আটকে রাখা হয়, তখন তাদের অবক্ষয় ঘটে। এছাড়া দুর্নীতি কবলিত সমাজব্যবস্থা যুবসমাজের উন্নয়ের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। ছোট থেকে শিখে আসা মূল্যবোধের প্রয়োজনীয়তা কিংবা পরিবার থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার প্রতিফলন যখন তারা বাইরের দুনিয়ায় দেখতে পায় না তখন জীবনের প্রতি চলে আসে ঘৃণা, অবজ্ঞা, অবসাদ। এরূপ সমাজব্যবস্থার ঘূর্ণিতে নিজেদের হারিয়ে ফেলছে যুবসমাজ। 
 
 বর্তমান সময়ে আত্ম নিয়ন্ত্রণ একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তির আধুনিকতা আমাদের এনে দিয়েছে উন্নয়নের জোয়ার তেমন পরিচয় করিয়ে দিয়েছে অন্ধকার জগতের সাথে। এই সময়ের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আধুনিকতা থেকে ভালো উপকরণ আস্বাদন করে নেয়া। একটি উদাহরণ হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর অত্যাধিক নির্ভর হয়ে পড়া, ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার না জানা। এর ফলে হচ্ছে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সমস্যা, মূল্যবান সময় নষ্ট, নেশা জাতীয় দ্রব্যের প্রতি নির্ভরতা ও সহজলভ্যতা, বই বিমুখীতা, নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকর্ষণ ইত্যাদি। এখানেই আসে আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গ। প্রযুক্তি আমাদের মস্তিষ্ক নিয়ে ক্রমাগত পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। যুবকরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। মস্তিষ্কের এই খেলায় তারা নিজেদের হারিয়ে ফেলছে। তারা বুঝতে পারছে যে তারা ঠিক কাজ করছে না কিন্তু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে তারা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এছাড়া, ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা, চাকরির বাজারে অসুস্থ প্রতিযোগিতা যুবসমাজকে অন্ধকারে ঠেলছে। বর্তমানে অপসংস্কৃতি চর্চা যুবসমাজের অবক্ষয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে। বিশ্ব যখন হাতের মুঠোয়, তখন খুব সহজেই অন্য দেশের সংস্কৃতি চর্চা করা সম্ভব। এবং অপসংস্কৃতি আত্মস্থ করার ফলে যুবসমাজ দ্বিধায় পড়ে যাচ্ছে এবং নিজ দেশের সংস্কৃতির সাথে অন্য দেশের সংস্কৃতির মিশ্রণে তারা নিজেদের মূল হারিয়ে ফেলছে। অবক্ষয়ের আরেকটি কারণ হচ্ছে সুস্থ বিনোদনের অভাব। অত্যাধিক প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ায় যুবসমাজ বাইরে বের হতে পারছে না। তাদের যোগাযোগ দক্ষতা কমে যাচ্ছে, এর ফলে তাদেরকে গ্রাস করছে একাকিত্ব। 
 
 যুবসমাজের অবক্ষয় এখন বর্তমানে একটি প্রধান চিন্তার বিষয়। একটি দেশের যুবসমাজ যখন ভেঙে পড়ছে তখন সেই দেশের উন্নতির মাত্রা কমে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে, যুব সমাজের অবক্ষয়ের জন্য সমাজব্যবস্থা দায়ী? নাকি একটি নৈতিক, আদর্শ সমাজ গঠনে যুবসমাজের অবক্ষয় রোধ করা জরুরি? আমার মতে, দু’টিই সঠিক। একটি অপরটির পরিপূরক। একটি দেশের সমাজব্যবস্থা যখন যুবসমাজকে এগিয়ে যেতে বাঁধা দেয় তখন সেই সমাজের আরো অবনতি হয়, দেশের উন্নয়নে বাঁধা আসে। তাই, এসকল সমস্যার প্রতি জোরদার নজর প্রদানের মাধ্যমে এবং সমাজের সকলের সুষ্ঠু পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশকে, এই যুবসমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব।

See More

পুথিগত বিদ্যার উপর নির্ভরশীলাতাই বেকারত্বের অন্যতম কারণ

পক্ষে যুক্তিগুলো হল:
 ● অনেকেই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেও কর্মসংস্থান পায় না। কারণ তারা বাস্তব জীবনের চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে না। তারা শুধুমাত্র পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান অর্জন করে।
 ● পুথিগত বিদ্যা অর্থাৎ শুধুমাত্র বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করলে বাস্তব জীবনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না।
 ● পুথিগত বিদ্যার উপর নির্ভরশীলাতা শিক্ষার্থীদেরকে বাস্তবমুখী করে গড়ে তোলে না। 
 ● পুথিগত বিদ্যা গ্রামীণ এলাকায় বেকারত্বের প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব হল শহরাঞ্চলে অভিবাসন। যাদের বেশিরভাগই তরুণ এবং অবিবাহিত এবং তাদের টার্গেট করা শহর ঢাকা।
 
  বিপক্ষে যুক্তিগুলো হল:
 ● পুথিগত বিদ্যা মানুষের জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করে। এটি মানুষের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
 ● পুথিগত বিদ্যা বেকারত্বের একমাত্র কারণ নয়। অন্যান্য কারণগুলোও বেকারত্ব ঘটাতে ভূমিকা পালন করে।
 ● পুথিগত বিদ্যার পাশাপাশি বাস্তব জীবনের চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন। এজন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা জরুরি।
 ● অর্থনৈতিক মন্দা দূর করা, শিল্পায়নকে উৎসাহিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারের উদ্যোগ বৃদ্ধি করা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি দূর করা হলে বেকারত্ব কমানো সম্ভব।
 
 মোটকথা, পুথিগত বিদ্যার উপর নির্ভরশীলাতা বেকারত্বের অন্যতম কারণ। তবে, এটি একমাত্র কারণ নয়। অন্যান্য কারণগুলোও বেকারত্ব ঘটাতে ভূমিকা পালন করে। পুথিগত বিদ্যার পাশাপাশি বাস্তব জীবনের চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন। এজন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা জরুরি। অর্থনৈতিক মন্দা দূর করা, শিল্পায়নকে উৎসাহিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারের উদ্যোগ বৃদ্ধি করা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি দূর করা হলে বেকারত্ব কমানো সম্ভব। পুথিগত বিদ্যার উপর নির্ভরশীলতা কমাতে শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জনের জন্য উৎসাহিত করা প্রয়োজন। এছাড়াও, অর্থনৈতিক মন্দা, শিল্পায়নের অভাব, শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির অভাব দূর করার জন্য সরকার ও সমাজের সকল স্তরের মানুষের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

See More

Powered by Froala Editor

শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য পরিবারের চেয়ে কি পরিবেশের ভূমিকাই বেশি?

Powered by Froala Editor

পক্ষে 
 ● পরিবেশের ভূমিকা বিতার্কিক শিশুর সঠিক বিকাশে অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরা তাদের চারপাশের পরিবেশ থেকে অনেক কিছু শেখায়। তারা তাদের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক, এবং অন্যান্যদের কাছ থেকে শিখতে পারে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত যে শিশুর শারীরিক বিকাশের মতো মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে তার জীবনের প্রথম বছরগুলো।
 ● যে শিশুটি জীবনের প্রথম সাত-আট বছর তার বিকাশের জন্য সহায়ক পরিবেশ পায়, সে অন্য শিশুদের (যারা সহায়ক পরিবেশ পায়নি) চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান, সামাজিক ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়। তার কথা বলার দক্ষতা, সামাজিক দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস প্রভৃতির বিকাশ ঘটে, যা পরবর্তী জীবনে তাকে সুখী ও সুন্দর থাকতে সহায়তা করে। শিশুরা জীবনের প্রথম বছরগুলো পরিবারের সঙ্গেই কাটায়। পরবর্তী সময়ে স্কুল, শিক্ষক, খেলার সাথি যুক্ত হয়ে শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। বর্তমানে স্কুল বয়সি শিশুরাও গৃহবন্দি অবস্থায় সময় কাটাচ্ছে। আমরা একটু সচেতন হয়ে শিশুদের বিভিন্ন কাজে, খেলায় নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে তাদের সময়টা আরো উপভোগ্য করে তুলতে পারি। 
 ● শিশুর সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য বয়স অনুযায়ী কী বলতে হবে, কী কী করতে হবে, কোন কাজ কীভাবে করতে হবে—এগুলো জানা জরুরি। এমন কিছু কথা আছে যেগুলো শিশুর সঙ্গে বললে তার মেধা, বুদ্ধি, বোঝার ক্ষমতা অনেক গুণ বৃদ্ধি পায় এবং তা পরবর্তী শিক্ষাজীবনে সহায়ক হয়; আবার অনেক কথা ও কাজ, যা আমরা সচরাচর শিশুদের বলি বা তাদের সঙ্গে করে থাকি, যেগুলো শিশুদের হতাশা, ক্ষোভ ও মানসিক বিপর্যয়ের কারণ হয়।
 
 
 বিপক্ষে 
 ● নরম কাদা মাটিসদৃশ শিশুরা শৈশবে যে পরিবেশে বেড়ে ওঠে, তার প্রভাব তার জীবনে স্থায়ী হয়ে যায়। এ কারণে পরিবার হচ্ছে শিশুর প্রথম বিদ্যালয়। প্রতিদিন মা-বাবার ঝগড়ার প্রত্যক্ষদর্শী অনেক শিশুর মধ্যে পরবর্তীকালে ব্যক্তিত্বের অস্বাভাবিকতাও দেখা যায়। সমাজে মানিয়ে চলতে অসুবিধা হয় তাদের। গর্ভকালে যেসব মা নির্যাতনের শিকার হন অথবা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকেন, তাঁদের সন্তানও জন্মের পর নানা জটিলতায় ভোগে। 
 ● নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই মেডিক্যাল সেন্টারের ট্রমাটিক স্ট্রেস স্টাডিজ বিভাগে সম্পন্ন এক গবেষণায় দেখা যায়, মাতৃগর্ভে থাকার সময় যাদের মা মানসিক আঘাতের শিকার হয়েছিলেন, সেই শিশুরা সহজেই মানসিক চাপে ভেঙে পড়ে এবং তাদের মধ্যে অ্যাংজাইটি বা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিস-অর্ডার হওয়ার আশঙ্কা বেশি। ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পারিবারিক কলহের মধ্যে বেড়ে ওঠা অথবা মাকে নির্যাতিত হতে দেখা শিশুদের জীবনের প্রথম দিকের বছরগুলোতে তারা হয় বিশেষভাবে অরক্ষিত ও অসহায়। এসব শিশু পরবর্তীকালে হিংস্র, ঝুঁকিপূর্ণ বা অপরাধমূলক আচরণ করতে পারে। বিষণ্নতা বা তীব্র দুশ্চিন্তায় ভোগার ঝুঁকিতেও পড়তে পারে এসব শিশু।’ শিশুর মানসিক বিকাশে মা-বাবার ভালোবাসা ও সান্নিধ্যের কোনো বিকল্প নেই। 
 ● পরিবারে মাকে নির্যাতিত হতে দেখলে শিশু নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। শিশুর মা-বাবার বন্ধুত্বপূর্ণ ও মধুর সম্পর্ক শিশুর মধ্যে পরম সুখ ও নিরাপত্তাবোধ জাগায়। বাবাকেও তাই শিশুর মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখতে হবে। ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টারের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ইশরাত শারমীন রহমান বলেন, ‘পারিবারিক নির্যাতন দেখে বেড়ে ওঠা শিশুরা এমন ধারণা নিয়ে বেড়ে ওঠে যে অন্যকে আঘাত করা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। সে যে কাউকে আঘাত করতে পারে। আবার সেও অন্যের কাছ থেকে আঘাত পেতে পারে। তাই বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই তাদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।’
 
 
 পরিবেশ এবং পরিবার উভয়ই শিশুর সঠিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিবেশ শিশুকে বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। পরিবার শিশুর মৌলিক দক্ষতা, মূল্যবোধ, এবং আত্মবিশ্বাস গঠন করে। পরিবেশের ভূমিকা শিশুর বিকাশে বেশি হতে পারে, কারণ শিশুরা পরিবারের বাইরে বেশি সময় ব্যয় করে এবং বিভিন্ন ধরনের মানুষকে দেখে এবং তাদের কাছ থেকে শিখে। তবে, পরিবারের ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। পরিবার শিশুর প্রথম স্কুল এবং শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Powered by Froala Editor

See More

Powered by Froala Editor

অপরিকল্পিত নগরায়নই কি ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার কারণ?

Powered by Froala Editor

অপরিকল্পিত নগরায়নই রাজধানীর জলাবদ্ধতার মূল কারণ
 অধিক বৃষ্টিপাতের ফলে ঢাকার নানা স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট আকারে দৃশ্যমান হয় এবং গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়। মূলত রাজধানীর বৃষ্টির পানি ঢাকা ওয়াসার খাল এবং নর্দমার লাইনের মাধ্যমে নদীতে পৌঁছানোর কথা থাকলেও নর্দমার পানি চলাচলে বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে । ফলে ভারী বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা ঢাকাবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী এবং যাতায়াতের পথে জীবন্ত মরণফাঁদ। এ কারণে প্রায়শই রিকশা, ভ্যান, সিএনজি, প্রাইভেট কার অতিরিক্ত জলাবদ্ধতার মধ্যে ম্যানহোলের গর্তে পড়ে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটছে।
 রাজধানী ঢাকা বিশ্বের অন্যতম জনবহুল মেগা সিটি। ঢাকা মহানগরের জনসংখ্যা অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে ফলে শহরটি তাদের অভ্যন্তরীণ সংস্থান এবং ব্যবস্থাপনার সীমাবদ্ধতার কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নাগরিক সুবিধা মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে জলাবদ্ধতার মতো হাজারো সমস্যা নাগরিক জীবনকে বিষিয়ে তুলছে। দিনে মশা রাতে মাছি, এ নিয়ে ঢাকায় আছি- এটি ঢাকাবাসীর পুরোনো দিনের প্রবাদ। ঠিক তেমনিভাবে বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা ঢাকাবাসীর নিত্যদুর্ভোগের সাথী। এ থেকে যেন নিস্তার নেই, দিনকে দিন এ সমস্যা আরো প্রকট হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকা শহরে বর্ষার সময় (মে থেকে অক্টোবর) পানি দূষণ, যানজট, বায়ু ও শব্দদূষণ, বর্জ্য নিষ্কাশন, কালো ধোঁয়া ইত্যাদির মতো জলাবদ্ধতাও সাধারণ ও নিয়মিত সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। এই জলাবদ্ধতা ঢাকা শহরে যদিও মুষলধারে ঝড় বৃষ্টিপাতের কারণে ঘটে এবং এ কারণে বেশ কয়েক দিন ধরে রাস্তাঘাট ডুবে থাকে।
  বর্ষাকালে ঢাকা শহরে ভারীবর্ষণ হয়, কারণ এটি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের বিস্তৃত প্লাবনভূমিতে অবস্থিত। কিন্তু অপরিকল্পিত নগর উন্নয়ন কার্যক্রম এবং দ্রুত জনসংখ্যার বৃদ্ধির কারণে জলাধারগুলোতে এবং প্রাকৃতিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সামান্য হেরফের বা কোনো যত্ন না থাকায় প্রাকৃতিক পয়ঃনিষ্কাশন পথগুলোতে নগরীর জলপ্রবাহ সঠিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে না এবং এ কারণে সেসব জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তাই শহরের বিভিন্ন অংশ বেশ কয়েক দিন ধরে জলাবদ্ধ হয়ে থাকায় সংশ্লিষ্ট এলাকাটিকে সম্পূর্ণ অচল করে দিচ্ছে। অনিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নগরবাসীর সচেতনতার অভাবে ঢাকার বেশিরভাগ ড্রেনগুলো ভারী বর্জ্য এবং প্লাস্টিকের আবর্জনায় আবদ্ধ। এই জলাবদ্ধতা ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের জন্য বিরাট বোঝা এবং বৈরী সামাজিক, শারীরিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব তৈরি করে। নির্মম সত্য হচ্ছে ঢাকা শহরজুড়ে ৬৫টি প্রাকৃতিক খাল ছিল, কিন্তু বর্তমানে এ সংখ্যা মাত্র ২৬, কারণ তাদের বেশিরভাগই আবর্জনায় ভরপুর ও অবৈধ দখলদারদের দখলে। নগরটি এমনভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে যাতে পানি ব্যবস্থাপনার কোনো পরিকল্পিত সংযোগ বিবেচনা করা হয়নি। বর্তমানে এর কোনো সুষ্ঠু ও যথাযথ কোনো স্বল্পমেয়াদি প্রতিকারও নেই। এ মেগা-সিটিতে উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে প্রাকৃতিক সংযোগগুলো এরই মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে উঠেছে এবং এটিকে একটি কংক্রিট জঙ্গলে পরিণত করা হয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন সমস্যা সৃষ্টি করেছে, কারণ ঢাকার মোট ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৩৩০ বর্গকিলোমিটার এরই মধ্যে ঘরবাড়ি, জলের প্রবাহের পথে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এখন সমস্যার ক্ষেত্রগুলো যদি সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খোঁজা হয়, তবে সঠিক সমাধান খুব কঠিন নয়। বক্স কালভার্টগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পানি খুব ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয়- সম্ভবত স্বাভাবিক প্রবাহের গতির পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ হতে পারে। জলাবদ্ধতা মোকাবিলার জন্য জনসেবা সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, সমন্বয় এবং জনসচেতনতা বাড়াতে প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিতে হবে। দিন দিন এই শহরে আগমনকারী জনসংখ্যা উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে; কিন্তু সে হারে পরিকল্পিত নাগরিক সুবিধা বাড়ছে না। অধিক জনসংখ্যা এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন পদ্ধতির জন্য পুরো নগর জীবনে নেমে আসছে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব। যেমন- পরিবেশ দূষণ, বাসস্থান ও খাদ্যের অভাব, পরিবহন সংকট, যানবাহন সংকট ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র অভাব, বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়া।
 
 জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি এবং অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে অনেক বড় বড় শহরের সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা বর্তমানে সংশ্লিষ্ট নগর কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। সুতরাং স্থায়ী জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার কার্যকর পরিচালনা এবং টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য সংশ্লিষ্ট নগর কর্তৃপক্ষ এবং সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, সমন্বয় এবং সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।
 
 
 ঢাকা মহানগরীতে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ছাড়াও সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকা, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, জলাভূমি, নিম্নাঞ্চল, খাল ও নদী ভরাট ও দখল, খাল ও নালা-নর্দমা আবর্জনায় ভরাট এবং নিয়মিত পরিষ্কার না করা, সংস্থাগুলোর দায়িত্বে অবহেলা, সমন্বয়হীনতা, জনসচেতনতার অভাব রাজধানীর জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ।নগরীতে যতগুলো প্রাকৃতিক খাল আছে তার অনেকাংশ দখল ও ভরাট হওয়ার কারণে বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারছে না। জলাশয় ও ডোবা বৃষ্টির পানির আধার হিসেবে কাজ করে থাকে। অবৈধভাবে অনেক জলাশয় ভরে সেখানে ঘরবাড়ি, আবাসন প্রকল্প, অফিস ভবন অথবা শপিংমল করা হয়েছে। ঢাকা অতিদ্রুত নগরায়ণের ফলে বৃষ্টির পানির সব অংশই নর্দমা ও প্রাকৃতিক খালের মধ্যে যাচ্ছে এবং মাটির নিচে তেমন পানির প্রবাহ যেতে পারছে না।কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে ময়লা-আবর্জনায় নর্দমা ও প্রাকৃতিক খাল ভরাট হয়ে বৃষ্টির পানি প্রবাহের ক্ষমতা অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত একাধিক সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্নয়হীনতা এ সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।ঢাকা মহানগরীতে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, জলাভূমি, নিম্নাঞ্চল, খাল ও নদী ভরাট ও দখল, খাল ও নালা-নর্দমা আবর্জনায় ভরাট এবং নিয়মিত পরিষ্কার না করা, সংস্থাগুলোর দায়িত্বে অবহেলা, সমন্বয়হীনতা, জনসচেতনতার অভাব রাজধানীর জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ।

Powered by Froala Editor

See More

Powered by Froala Editor

দারিদ্র্য নয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই দুর্নীতির প্রধান কারণ

Powered by Froala Editor

পক্ষেঃ 
 বাংলায় একটি কথা আছে, যে যত বেশি পায়, সে তত বেশি চায়। বাংলাদেশের দুর্নীতির অন্যতম প্রধান জায়গা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা খাত। দুর্নীতিগ্রস্ত সেবকের নিকট যেকোন ক্ষেত্রে কাজ হাসিল করতে পকেট থেকে দুই-চার পয়সা বের করলেই নিমিষে কাজ হয়ে যায়। এই কাজে যারা জড়িত তাদের নিকট টাকার পরিমাণ কম থাকে না, তবুও টাকার লোভ তাদের সততা, বিবেক, মনুষ্যত্বকে আস্তরণ দিয়ে ঢেকে রাখে।
 
 চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যেমন স্বার্থপরতা, অনিয়ন্ত্রিত আকাঙ্ক্ষা এবং অন্যায়ের প্রতি সহনশীলতা দুর্নীতির জন্য অন্যতম প্রধান কারণ। এই বৈশিষ্ট্যগুলির অধিকারী ব্যক্তিরা দুর্নীতির জন্য আরও বেশি প্রকট হতে পারে, কারণ তারা অনৈতিক কাজগুলো করার সময় বিপরীতপাশে থাকা মানুষগুলোর কথা চিন্তা করে না। অবৈধ পথে রোজকার করার স্বাদ একবার পেয়ে গেলে তা থেকে বেরিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব বটে। 
 
 বাংলাদেশের দুর্নীতি কবলিত দেশগুলোর মধ্যে ১২ তম হওয়ার পেছনে দেশের রাঘব বোয়ালদের হাত বেশি। তার একটি বড় উদাহরণ অর্থ পাচার। দারিদ্রকে দুর্নীতির হাতিয়ার করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করে যাচ্ছে ক্ষমতার অপব্যবহার করা এক গোষ্ঠী। এছাড়া বিভিন্ন চাকরি নিয়োগ প্রক্রিয়া, গুরুত্বপূর্ণ কাজে প্রাইভেট ও সরকারি প্রায় সকল ক্ষেত্রেই দুর্নীতির চিত্র অহরহ দেখা যায়। নীতি নৈতিকতাহীন এসকল মানুষকে সঠিক পথে আনতে শুধু সামাজিক মূল্যবোধই নয়, দরকার যথাযথ আইন প্রয়োগের সুবব্যবস্থা। 
 
 
 
 বিপক্ষেঃ 
 দারিদ্র্য দুর্নীতির অন্যতম কারণ হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, দারিদ্র্য মানুষকে দুর্নীতির দিকে ঠেলে দেয়। দারিদ্র্যগ্রস্ত মানুষ প্রায়ই তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে সংগ্রাম করে। তারা সচরাচর এমন পরিস্থিতিতে থাকে যেখানে তাদের জীবন বা জীবিকার জন্য দুর্নীতিতে জড়িত হতে হয়।
 
 বাংলাদেশে প্রায় ৪০% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এখনো সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা তাদের অধিকার কিংবা চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করতে পারছেনা। কারণ বাংলাদেশে সরকারের সম্পদ এবং সুযোগ-সুবিধাগুলি প্রায়ই সঠিকভাবে বিতরণ করা হয় না। এই অবব্যস্থাপনা দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করে, কারণ যারা ক্ষমতায় রয়েছে তারা তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যক্তিগত লাভের জন্য সম্পদ এবং সুযোগ-সুবিধাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। 
 
 দুর্নীতির জন্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। দারিদ্র্য একটি দেশ বা সমাজের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামোকে দুর্বল করে দেয়। দরিদ্রতাই এক সময় গিয়ে চারিত্রিক অবনতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়।

Powered by Froala Editor

See More