Essay Writing




Powered by Froala Editor

শিক্ষাগুরুর অবদান

Powered by Froala Editor

বর্ণমালার প্রথম বর্ণটির উচ্চারণ করতে পারা সহজ নয়। এর পেছনে আছে শিক্ষক, পিতা-মাতার অক্লান্ত প্রচেষ্টা। ধীরে ধীরে সকল বর্ণ চিনতে পারা, পড়তে পারা, কার, ফলা, বিরাম চিহ্ন ইত্যাদি আয়ত্বে আসে। প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলে লেখাপড়ায় হাতেখড়ি। দুচারটি টঙ দোকান নিয়ে ছিলো বাজার। বাজারের পাশে স্কুল। দোকানে রঙবেরঙের ভুনভুনি, ঘাসের দুধ, নাবিস্কো চকলেট, ছোন পাপড়ি এরকম হাতে গোনা কয়েকটা খাবার পাওয়া যেত। প্যাকেটের লেখাগুলো বানান করে করে পড়তে চেষ্টা করতাম।

স্কুলের পথে রিকশা চলত। রিকশাচিত্র আমাদের কাছে খুব আকর্ষনীয় ছিল। গাঢ় উজ্জ্বল রঙের হাতে আঁকা ছবি থাকত। রিক্সার দুইপাশে, সামনে বাঁধাই করা ভিউ কার্ড থাকত। কবরী, সাবানা, ববিতা, দিতি, চম্পা যার যে নায়িকা প্রিয় তার ভিউ কার্ড থাকত। রিকসার পেছনে সুন্দর সুন্দর রিকশালিপি ছিলো। অনেক কিছু লেখা থাকত। "মা", "মায়ের দোয়া", "দশে মিলে করি কাজ", 'ছোট পরিবার সুখী পরিবার' ইত্যাদি। এক একটা লেখা যেন একএকটা গল্প, সমাজচিত্র। লেখা গুলো বানান করে পড়তাম। শুরুতে পুরো বাক্য বানান করতে না করতেই দূরে চলে যেত। শহরে বেড়াতে গেলে দোকানের সাইন বোর্ডের লেখা বানান করতাম।  প্রতিনিয়ত দক্ষতা বাড়তে থাকে। আজ পলকের মধ্যে বড় বড় বাক্য পড়ে ফেলি। তার মর্মার্থ উদ্ধার করে ফেলি। যার সূচনা হয়েছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেই শিক্ষকদের হাত ধরেই। যারা অসীম ধৈর্য, মেধা, শ্রম দিয়ে প্রথম বর্ণটি উচ্চারণ করতে শিখিয়েছেন। 

বাংলা বিষয়ের স্যার যখন নেচে নেচে 'আমাদের গ্রাম' ছড়া পড়ত, তখন মানসপটে গ্রামের ছবি ভেসে উঠত। আমার গ্রামের সাথে কবির অচেনা গ্রামের তুলনা করতাম। তাদের সেই বুদ্ধিদীপ্ত প্রয়াসে আমার ভিতরে বেড়েছে কল্পনা শক্তি, সৃজনশীলতা,  নান্দনিক বোধ।

সমাজবিজ্ঞানের আপা প্রতিদিন বলতেন গুরুজনদের ভক্তি করবে, বড়দের সালাম দেবে, আদেশ মান্য করবে। আরও কত কথা। সেগুলো তখন 'পড়া'র মতো ছিলো। আজ বুঝি, সেগুলো মানুষ গড়ার মন্ত্র ছিলো। ইংলিশের স্যার বলতেন, 'দরিদ্রকে উপহাস কর না', 'চকচক করলেই সোনা হয় না' ট্রান্সলেশন কর। এ সকল পাঠগ্রহণের মধ্যদিয়ে আমাদের ভাষা ও যোগাযোগ দক্ষতার বিকাশ সাধিত হয়েছে।

নিজেকে প্রকাশ করার যোগ্যতা অর্জন করেছি। তারা আমাকে তৈরি করে না দিলে অন্য প্রাণির সাথে আমার প্রভেদ থাকত কি?

'দুয়ে দুয়ে চার হয়' কিংবা 'একের এক নামলে হাতে কিছু থাকে না' বাস্তব দুনিয়ার এত সুগভীর সমীকরণ কত সহজে তারা হৃদয়ে গ্রথিত করে দিয়েছেন।

মন্দ ভালোর পার্থক্য করতে শিখিয়েছেন। 

ক্লাস শুরুর আগে সমাবেশ হত। জাতীয় সঙ্গীত হত। শপথ হত। অন্যকে অগ্রাধিকার দেয়া, পরমত সহিষ্ণুতা,  ত্যাগের মনোভাব, মিলেমিশে বাস করার মানসিকতা গল্পের ছলে অন্তরে গেঁথে দিয়েছেন যারা তারাই মহান শিক্ষাগুরু।

শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত মেধার বিকাশ ঘটে মাধ্যমিক শিক্ষায়। প্রাথমিক স্তরে অর্জিত মৌলিক জ্ঞান সম্প্রসারিত ও সুসংহত হয়। বড় হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগাধ জ্ঞান সমুদ্রে অবগাহন করি। জ্ঞানের সেই অন্তহীন সমুদ্রে সাঁতার কাটতে শিখিয়েছেন মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকরা। তাঁরা যে জ্ঞানের বীজ বপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচর্যায় তা বিশাল মহীরুহে পরিণত হয়।  সুপ্রবৃত্তি ও কুপ্রবৃত্তির পার্থক্য করতে শিখিয়েছেন। উচিত-অনুচিতের বিচার করতে শিখিয়েছেন। কেউ তার প্রিয় শিক্ষকের মুখ নিসৃত কোন উক্তি-উপদেশকে জীবনের পাথেয় করেছেন। এক শ্রেণির মানুষকে অর্থনীতি ও উৎপাদন স্তরে একটি পর্যায়ের দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিরূপে তৈরি করেন তাঁরা। 

তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সান্নিধ্যে বিকশিত হয় বুদ্ধিচর্চা, মননশীলতা, চিন্তার স্বাধীনতা। পার্থিব-অপার্থিব জ্ঞানের মাধ্যমে বিশ্বব্রহ্মন্ডে যা কিছু  শ্বাশত সত্য আর যা কিছু শ্বাশত মিথ্যা তা চিনতে পারি। অনেকের মধ্যে তুলনা করে  শ্রেষ্ঠটি নির্বাচন করতে পারি। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সমস্যা সনাক্ত করা, বিশ্লেষণ করা, সমস্যা থেকে উত্তরণের দক্ষতা অর্জনের দীক্ষা শিক্ষকরাই দিয়েছেন। আজ আমরা যা কিছুই করছি সবই শিক্ষকরা আমাদের ভিতর যে প্রোগ্রাম ইনস্টল করে দিয়েছেন  তা কাজে লাগিয়ে করছি। আমরা কখনো কখনো বৈশ্বিক উচ্চতায় শিক্ষাগুরুকে ছাড়িয়ে যাই। কিন্তু সেই উচ্চতার ভিত শিক্ষকের হাতেই গড়া।

শিখনের শুরুতে বাই-সাইকেলকে ডানপিটে বালকের মতো মনে হয়। ডানে নিতে চাইলে বামে চলে। বামে নিতে চাইলে ডানে চলে। রাস্তায় পথচারী থাকলে সোজা তার দিকে ছোটে! কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। পথিক আত্মরক্ষার  জন্য এপাশ-ওপাশ করলে সাইকেল এপাশ-ওপাশ করে সোজা পথিকের গায়ে! আছাড় খেয়ে শরীরে যত্রতত্র আঘাত লাগে। পাদানিটা বিট্রয় করে। মনে হয় কেউ যেন গ্রিজ দিয়ে পিচ্ছিল করে রেখেছে। পা পিছলে যায়। জঙ্ঘাস্থির সাথে যেন জন্মান্তরের শত্রুতা পাদানির। রক্তাক্ত হয়ে যায়। কিন্তু যখন সাইকেল চালানোর কলাকৌশল আয়ত্বে এসে যায় তখন কী সহজ মনে হয়। হাতল ছেড়ে দিলেও সাইকেল দুষ্টুমি করে না। যেন মন বুঝে চলে। 

সাঁতার শেখার সময় বড়রা বলেন মুখ বন্ধ কর, নিঃশ্বাস বন্ধ রাখ, নাক দিয়ে শ্বাস নেও, হাত দিয়ে পানি ঠেলে সামনে যাও, পা ভাসিয়ে রাখ ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু শিক্ষানবিশের অবস্থা হয় করুণ। মাথা উঁচু রাখতে রাখতে পা ডুবে যায়। পা সচল করতে গেলে মাথা ডুবে নাকে-মুখে পানি যায়। যখন সাঁতার কাটা আয়ত্ত্বে এসে যায়,তখন পানিতে নামলেই শরীর ভেসে থাকে। হাত-পাকে কোন কমান্ড দিতে হয় না। নিজেরাই যা যা করা দরকার তাই করে। কত সহজ পানিতে ভেসে থাকা। সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটার মতো শিক্ষা গ্রহণের দিনগুলোও মন থেকে বিস্মৃত হয়ে যায়। ফিকে হয়ে যায় শিক্ষাগুরুর মুখচ্ছবি। 

যিনি প্রথম সাঁতার শিখিয়েছেন তিনি হয়ত কোনদিন উপজেলা পর্যায়েই চ্যাম্পিয়ন হননি। কিন্তু আপনি আজ অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতেছেন।মনে করুন, আপনি যখন পানিকে যমের মতো ভয় পেতেন সেদিন তিনিই বলেছিলেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বিশেষ দক্ষতায় তুমি পানিতে ভেসে থাকতে পার।

যিনি আপনাকে নবম শ্রেণির গণিত পড়িয়েছেন তিনি হয়ত দ্বাদশ শ্রেণির উচ্চতর গণিতের কিছুই জানেন না। কিন্তু আজ আপনি রকেট বিজ্ঞানের জটিল জটিল অংক মিলাচ্ছেন, তার ভিত সেই শিক্ষকের হাতেই গড়া। আপনি জাঁদরেল আমলা। চাকরি বিধি আত্মস্থ, ম্যানার-এটিকেট  করায়ত্ব। আপনার স্কুল শিক্ষক হয়ত এসবের কিছুই জানেন না। কিন্তু আইন-বিধির মৌলিক পাঠ তিনিই দিয়েছিলেন। ধনি-গরীব, উঁচু-নিচু সবাইকে একই ইউনিফর্ম পরিয়েছেন, একই কক্ষে বসিয়েছেন। বলেছেন, সকল মানুষ সমান। শিক্ষক ইতিহাস, ঐতিহ্য,  সংস্কৃতি, দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত করেন, দেশকে ভালোবাসতে শেখান।

আজ যে বিজ্ঞানী মঙ্গল গ্রহে নবযান পাঠাচ্ছেন তিনি কোন শিক্ষকের কাছেই মহাকাশ বিজ্ঞানের মৌলিক পাঠ নিয়েছেন। যিনি সমুদ্র গভীরের রহস্য উন্মোচন করছেন, একদিন কোন শিক্ষকের কাছেই পাতালপুরীর গল্প শুনে তার অনুসন্ধিৎসা জেগেছিল।

যিনি আজ সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন তিনি হয়ত তার শিক্ষকের আবৃত্তি শুনে শুনে কবিতাকে ভালবেসেছিলেন। যিনি আজ গবেষণাকর্মে বিশ্ব নন্দিত তিনি কোন শিক্ষকের কাছেই শিখেছেন কিভাবে গবেষণা করতে হয়। আপনি হয়ত শিক্ষককে ভুলে গেছেন, কিন্তু শিক্ষক আপনাকে ভোলেননি। তিনি আজও ছাত্রদের আদর্শ ছাত্রের দৃষ্টান্ত দিতে আপনার কথা বলেন। আপনি তাকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন এটাই তার গৌরব। তাই মানুষের জীবনে পিতা-মাতার সাথে আরেকজন  গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হচ্ছেন শিক্ষক। এই তিনজনের সাথে কারো তুলনা চলে না।

সমাজ অন্ধকার রাতের সাথে তুলনীয়। চারিদিকে অন্ধকার। এখানে প্রকৃতি জগতের মতো কোন সূর্য ওঠে না। শিক্ষিত মানুষ সমাজ  আলোকিত করে। জ্ঞানের আলো, বিজ্ঞানের আলো, মানবতার আলো, সাম্যের আলো, ভ্রাতৃত্বের আলো, ন্যায়ের আলো। এই সকল আলোতে অন্ধকার দূর হয়। সমাজ সুন্দর  হয়। আমরা হয়ে উঠি সামাজিক জীব। সকল জীবের সেরা। প্রকৃতির রাজ্যের সাথে মনুষ্য সমাজের পার্থক্য গড়ে দেয় এই আলোর প্রদীপসম মানুষেরা। অনাদি কাল থেকে যিনি এই প্রদীপ জ্বালিয়ে যাচ্ছেন তিনি হচ্ছেন শিক্ষক। সমাজের বাতিঘর। সকল শিক্ষা-গুরুকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

মোঃ মাহবুব হাসান জুয়েল
বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার
প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান 
বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজ

Powered by Froala Editor

See More

Powered by Froala Editor

শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস

Powered by Froala Editor

জ্ঞানচর্চার সর্বোৎকৃষ্ট স্থান শিক্ষাঙ্গন। এ অঙ্গনই গড়ে তোলে জাতির স্বপ্নময় ভবিষ্যৎ। শিক্ষা যেমন জাতির মেরুদণ্ড তেমনি শিক্ষাঙ্গন জাতির পবিত্র স্থান। তাই জাতির বৃহত্তর স্বার্থে শিক্ষাঙ্গনকে যাবতীয় হীন ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসের ঊর্ধ্বে রাখা উচিত। কারণ সুশিক্ষা বঞ্চিত শিক্ষাঙ্গন যেকোনো জাতির জন্য কলঙ্কজনক। শিক্ষাঙ্গনে জ্ঞানচর্চা ও জ্ঞান আহরণের শান্ত ও অনুকূল পরিবেশ থাকা একান্তভাবে বাঞ্ছনীয় ।

শান্তি-শৃঙ্খলা ব্যাহত করে সশস্ত্র হামলা বা অন্য কোনো উত্তেজনাকর আক্রমণের মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনে ব্যাপক ত্রাস সৃষ্টি করে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট করাই হলো শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস’। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস বর্তমান প্রেক্ষাপটে এক অপ্রত্যাশিত রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে। দেশের কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আজ সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের কারণ : বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোর সাম্প্রতিক অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। সন্ত্রাসের কারণে সবচেয়ে আলোকিত স্থান আজ নৈরাজ্যের অন্ধকারে নিমগ্ন। বিভিন্ন কারণে শিক্ষাঙ্গনে আজ সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের অন্যতম কারণ হলো রাজনৈতিক। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ তাদের দলীয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে কোমলমতি ছাত্রদেরকে বিপথগামী করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে উদ্বুদ্ধ করছে। আজকাল ছাত্ররা ছাত্র-রাজনীতির আদর্শচ্যুত হয়ে রাজনীতির নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ হিসেবে কাজ করতে গিয়ে মাস্তানি, গুণ্ডামির আশ্রয় নিয়ে শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করছে। দেশের ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাও শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের আরেকটি কারণ। দিন দিন বেকার সমস্যা বেড়েই চলছে। পাস করা ছাত্ররা চাকরি না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে সন্ত্রাসের পথে পা বাড়াচ্ছে। শিক্ষকদের আদর্শচ্যুতি, রাজনৈতিক মতাদর্শের অপপ্রয়োগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বল্পতা ও সুযোগ অপেক্ষা অতিরিক্ত ছাত্রসংখ্যা ও হীনদলাদলি প্রভৃতি কারণে শিক্ষাঙ্গনে প্রতিনিয়তই সন্ত্রাস চলছে।

শিক্ষাঙ্গন জ্ঞান বিস্তারের পাদপীঠ। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের পরিণাম ভয়াবহ এবং সুদূর প্রসারী। শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ শান্ত, সুন্দর ও ত্রাসমুক্ত না হলে শিক্ষার মহান উদ্দেশ্য বিঘ্নিত হয়— শিক্ষার গুণগত মানের অবনতি ঘটে। সন্ত্রাসযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থী কখনোই জ্ঞানার্জন করতে পারে না। ফলে তার ভবিষ্যৎ জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের কারণে অনেক উজ্জ্বল প্রতিভা অকালেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এভাবে দেশ, জাতি এবং পরিবার ধ্বংস হচ্ছে। সন্ত্রাসের ফলে ‘সেশনযট’ বাড়ছে, দরিদ্র অভিভাবকদের আর্থিক কষ্ট বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাস করা ছাত্রদের চাকরির জন্য প্রতিযোগিতার সময়সীমা সংকুচিত হচ্ছে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের কারণে ছাত্রসমাজ আজ সামাজিক বিকলাঙ্গতার মুখোমুখী দাঁড়িয়ে হতাশায় দগ্ধ হচ্ছে । সন্ত্রাস দমনের পদক্ষেপ : শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। তাই জাতির বৃহত্তর স্বার্থে শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করা আশু প্রয়োজন। এ . লক্ষ্যে নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে—

১. ছাত্রদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে হবে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর আন্তরিক হতে হবে এবং সুষ্ঠু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

২. শিক্ষাঙ্গনে অবৈধ অস্ত্রের প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ।

৩. শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রবেশী বহিরাগত এবং অপ্রাসঙ্গিকভাবে অছাত্রদের প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে ।

8. শিক্ষকদেরকে ছাত্রদের নিয়ে ঘৃণ্য রাজনীতি পরিত্যাগ করতে হবে।

৫. শিক্ষাঙ্গন থেকে চিহ্নিত মাস্তান ও সন্ত্রাসী ছাত্রদেরকে বহিষ্কার করতে হবে।

৬. সন্ত্রাস দমনে পুলিশ বাহিনীকে সচল এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

৭ .সমাজ থেকে অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি নির্মূল করতে হবে।

৮. ছাত্রদের হতাশামুক্ত ও আদর্শ জীবনগঠনে শিক্ষকদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

৯. শান্তিকামী ছাত্রদের সংগঠিত হয়ে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে শপথ দিতে হবে।

১০. সন্ত্রাস দমনে প্রচার মাধ্যমকে বিশেষভাবে সক্রিয় হতে হবে ।

১১. সন্ত্রাস দমনে ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

১২. সন্ত্রাসীকে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।

১৩. শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস দমনে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ও বিরোধী দলসমূহকে যথাযথ ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।

১৪. যুগোপযোগী শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে এবং শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।

১৫. সন্ত্রাসের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ না রেখে— সন্ত্রাসের মূল কারণ চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে সন্ত্রাস নিরসন করতে হবে।


শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস বর্তমান সমাজের একটি ভয়াবহ সমস্যা। এ সমস্যা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে না পারলে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’ এ সত্য উপলব্ধির মাধ্যমে আন্তরিক সদিচ্ছা নিয়ে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস দমনে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

Powered by Froala Editor

See More

Powered by Froala Editor

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

Powered by Froala Editor

যে মাধ্যম ব্যবহার করে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ একে অপরের সাথে তাদের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ইত্যাদি আদান-প্রদান করতে পারে, তাকে সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম বলে। বর্তমান সময়ে সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমগুলো প্রধান অনলাইন নির্ভর। যেমন-ফেইসবুক, টুইটার, লিংকইন, স্কাইপি ইত্যাদি। তবে এগুলাের মধ্যে ফেইসবুক বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় যােগাযােগ মাধ্যম। ২০০৪ সালে মার্কিন প্রযুক্তিবিদ মার্ক জুকারবার্গ এটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় একশ কোটির বেশি মানুষ ফেইসবুকের মাধ্যমে একে অপরের সাথে জড়িত। এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নিজের অনুভূতি শেয়ার করা থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপন প্রচারণা চালানাে যায়। বর্তমানে সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে। কারণ, অধিকাংশ সামাজিক মাধ্যমই বিনামূল্যে সেবা প্রদান করে থাকে। বেশিরভাগ মােবাইল ফোন ব্যবহারকারী এখন তাদের মােবাইল ফোন ব্যবহার করে টুইটার, WhatsApp. মাইস্পেস প্রভৃতি মাধ্যমে নিজেদের সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত তৈরি, বন্ধু তৈরি, ব্যক্তিগত কথােপকথন সংরক্ষণ, ছবি, ভিডিও এবং নিজের লেখা আদান-প্রদান করতে পারে। এ সমস্ত ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি সামাজিক এ যােগাযােগ মাধ্যমের কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। যেমন যুব সমাজ বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা এ ধরনের সামাজিক যােগাযােগের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে তাদের পড়াশােনায় বিঘ্ন ঘটছে। এমনকি কেউ কেউ বিপথে চলে যাচ্ছে, কারণ তারা বন্ধুদের সাথে অশ্লীল ভিডিও আদান-প্রদান করতে পছন্দ করে। পৃথিবীর সবকিছুরই ভালাে মন্দ দুটি দিক থাকে। তবে আমরা যদি যােগাযােগ মাধ্যমগুলাের খারাপ দিকটি গ্রহণ না করে এর ভালাে দিকটি গ্রহণ করি তাহলেই আমরা যােগাযােগকে আরাে সুন্দর, নির্বিঘ্ন ও দ্রুত করতে পারব।

Powered by Froala Editor

See More

Powered by Froala Editor

স্যাটেলাইট চ্যানেলের ভূমিকা

Powered by Froala Editor

আমরা বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে বাস করি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্যে মানুষ অনেক বিস্ময়কর যন্ত্র আবিষ্কার করেছে। এগুলোর মধ্যে একটি অভিনব আবিষ্কার হচ্ছে স্যাটেলাইট টেলিভিশন। অনেকের কাছে এটি আকাশ সংস্কৃতি নামেও পরিচিত। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম। টেলিভিশনের অুনষ্ঠানসমূহ বিনোদনমূলক ও শিক্ষনীয়। বর্তমান টেলিভিশন চ্যানেলগুলো স্যাটেলাইট তথা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এগুলোকে বলা হয় স্যাটেলাইট চ্যানেল। বস্তুত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্যাটেলাইট টেলিভিশনের ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে। এর সাহায্যে আমরা সারা বিশ্বের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো উপভোগ করতে পারি। স্যাটেলাইট চ্যানেলসমূহ আমাদেরকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সভ্যতা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, আবহাওয়া, খেলধুলা, চিত্তবিনোদন ইত্যদির সাথে পরচিয় করিয়ে দেয়। এভাবে স্যটেলাইট চ্যানেলসমূহ আমাদের সংকর্ণিতা দূর করে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে আমরা বিশ্বকে যে এক বৈশ্বিক গ্রাম হিসেবে বিশ্বাস করি, সন্দেহতীতভাবে এক্ষেত্রে স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের অনেক অবদান রয়েছে। কিন্তু স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলসমূহের মন্দ প্রভাবও রয়েছে। প্রায়ই বিদেশি স্যাটেলাইট চ্যানেলে অশ্লীল অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়, যা আমাদের তরুণ সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ সকল চ্যনেলে প্রচারিত সহিংস চলচ্চিত্র দেখে আমাদের শিশুরা আক্রমণাত্মক হয়ে পড়ছে। তা ছাড়া উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীরা এসব পাশ্চাত্যের স্যাটেলাইট চ্যানেলে ভিনদেশি সংস্কৃতি দেখে তা ধারণ করতে গিয়ে নিজেদের সংস্কৃতি ও জীবনাচনণ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ছে। তাই প্রত্যেকেরই স্যাটেলইট টেলিভিশন চ্যানেল ব্যবহারে অধিক সর্তক হওয়া উচিত।

Powered by Froala Editor

See More