Powered by Froala Editor
মেট্রোরেল
Powered by Froala Editor
বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ। তবে এই দেশ টি ঘনবসতিপূর্ণ জনবহুল দেশ হওয়ার কারণে এখানে যানজট একটি বড় সমস্যা। সেই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশে মেগা প্রকল্প গুলোর মধ্যে মেট্রোরেল একটি। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে যানজট মুক্ত করতে সরকার এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যা সাধারণ মানুষের জন্য আর্শীবাদ।
মেট্রোরেল একটি বৈদ্যুতিক যান। এই মেট্রোরেল প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য খরচ হয়েছে ২১হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। তার মধ্যে জাইকা দিবে ৭৫% এবং বাকি টা দিবেন সরকার। এটি উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল করবে। তার মধ্যে ১৬টি স্টেশন থাকবে। এই পথটি প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। যেহেতু এটি যানজট রোধ করার জন্য করা হয়েছে সেহেতু এই মেট্রোরেলের পথ হবে উড়ালসড়ক। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন থাকবে। এই স্টেশন গুলো হলো উত্তরা দক্ষিণ, উত্তরা সেন্টার, পল্লবী, আইটেমটি, মিরপুর-১০, ফার্মগেট, তালতলা, কাজীপাড়া, আগারগাঁও ।
এছাড়াও বিজয় সরণি, সোনারগাঁও, জাতীয় স্টেডিয়াম, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, বাংলাদেশ ব্যাংক এসকল স্টেশন গুলো থাকবে। প্রতিটি ট্রেনে মোট ৬টি করে বগি থাকবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল রুটে চলবে ১৪টি ট্রেন। এই ট্রেন টি ১৫০০ জনের মতো যাত্রী বহন করতে পারবে। এই ট্রেনে আসন সংখ্যা রয়েছে ৯৪২ টি এবং ৫৭৪ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে পারবেন। প্রতিটি বগি বেশ প্রশস্ত এবং শীততাপ নিয়ন্ত্রিত । প্রতিটি ট্রেন ৪০মিনিট পর পর ছাড়বে। যার গতি হবে ঘন্টায় ৩২ কিলোমিটার এবং এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশন যেত সময় লাগবে ৩৫ মিনিট। প্রতিটি স্টেশনে ৪০ সেকেন্ড করে থামবে। এই ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০টাকা পর্যন্ত।
এই ট্রেনটি সকল ঢাকাবাসীর সুবিধা কথা ভেবে তৈরি করা হয়েছে। শহরের বাসিন্দাদের জন্য একটি দ্রুত পরিবহন গামী যান। এটি শুধু ট্রাফিক সমস্যার সমাধান করবে তাই নয় বায়ু ও শব্দ দূষণ কমাতেও সাহায্য করবে। এমনকি হাজার হাজার মানুষের কর্ম সংস্থান হবে। এটি শুধু শহরের বাসিন্দাদের উপকারে আসবে তাই নয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
পিতা মাতার প্রতি কর্তব্য
Powered by Froala Editor
আমাদের জন্মদাতা মা-বাবা। এ পৃথিবীতে তাদের মতো আপনজন আর কেউ নেই। তারা আমাদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত। প্রিয় নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত। আর সে বেহেশত অর্জন করার পূর্বশর্ত হচ্ছে তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা, নরম ভাষায় কথা বলা, সম্মানের চোখে দেখা। পিতা-মাতা সব সময় সন্তানের কল্যাণের কথা ভাবেন। তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে কোনো সন্তান কখনও সফলতার পথে এগিয়ে যেতে পারে না। মা-বাবার অবাধ্য সন্তানের ধ্বংস অনিবার্য।
আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন, তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত কর না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উহ্’ শব্দটিও বল না, তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সঙ্গে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বল। তাদের সামনে ভালোবাসার সঙ্গে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বল- হে প্রভু, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৩ ও ২৪)।
মা-বাবার সঙ্গে উত্তম আচরণ করলে মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের দুনিয়া এবং আখেরাতের কল্যাণ দান করবেন। কোরআন ও হাদিসের আলোকে মা-বাবার প্রতি সন্তানের অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো হল- ১. পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করা। ২. সুন্দর ও মার্জিত ভাষায় কথা বলা। ৩. তাদের সুখ-শান্তির জন্য আমাদের ধনসম্পদ ব্যয় করা। ৪. তাদের সঙ্গে বিনম্রভাবে চলাফেরা করা। ৬. যে কোনো বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করা। ৭. তাদের সঙ্গে কর্কশ ও বিশ্রী বাক্যে কথা না বলা। ৮. পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের জন্য আল্লাহতায়ার কাছে মাগফিরাতের দোয়া করা। তাদের ঋণ পরিশোধ করা। তাদের ওসিয়তগুলো পূর্ণ করা।
সর্বোপরি বলতে পারি, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে পূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হওয়া পর্যন্ত মা-বাবা সন্তানের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে থাকেন। সন্তানের জন্য এত ভালোবাসার আর কেউ নেই। কিন্তু অতি দুঃখের সঙ্গে আজকাল দেখা যায়, পিতা-মাতা বার্ধক্যে উপনীত হলে অনেকে তাদের বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগারে পাঠিয়ে দেন। যা একজন সন্তানের কাছ থেকে কোনোভাবেই কাম্য নয়। এতে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে। জমিন অভিশাপ করে। তাই আসুন! মা-বাবা দু’জন বা কোনো একজন বেঁচে থাকলেও তাদের সেবা-যত্ন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত অর্জন করি।
লেখক : মাদ্রাসা শিক্ষার্থী
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
গ্রামীণ ব্যাংক
Powered by Froala Editor
গ্রামীণ ব্যাংক হলো একটি বাংলাদেশের ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান যা গ্রামীণ অঞ্চলে সেবা প্রদান করে। এটি গ্রামীণ এলাকার মানুষের জন্য বিশেষভাবে উন্নত বিত্তীয় সেবা সরবরাহ করে। গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্দেশ্য হলো গ্রামীণ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখা।
গ্রামীণ ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের বিত্তীয় সেবা প্রদান করে, যেমন ঋণ, সঞ্চয়, ঋণের সম্প্রদান, বীমা সেবা ইত্যাদি। এছাড়াও, এটি গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও তথ্য সরবরাহ করে যাতে তারা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নত করতে পারেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের গ্রাহকদের মাঝে প্রধানতঃ গ্রামীণ কৃষক, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী, গ্রামীণ উদ্যোগপ্রেরণা কর্মী, নৌকা ও পিসির মালিকগণ ইত্যাদি রয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত করা এবং তাদের জীবনযাপনে সাহায্য করা। এটি বিভিন্ন বিত্তীয় সেবা প্রদান করে যাতে গ্রামীণ মানুষের সাথে বাজেটের উপযোগী হোক এবং তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হতে সাহায্য করে।
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
মাদকাশক্তি ও আমাদের যুব সমাজ
Powered by Froala Editor
বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ পুরুষ, ১৬ শতাংশ নারী। সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী ও শিশু-কিশোররাও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, দেশজুড়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ নানাভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী দেশে আসক্তদের শতকরা ৯০ ভাগকে কিশোর-তরুণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তাদের শতকরা ৪৫ ভাগ বেকার ও ৬৫ ভাগ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট। আর উচ্চশিক্ষিতের সংখ্যা ১৫ শতাংশ। তবে আরো বেশ কয়েকটি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, অবৈধ মাদকদ্রব্য আমদানির জন্য প্রতিবছর ১০ হাজার কোটিরও বেশি টাকার মুদ্রা বিদেশে পাচার হচ্ছে।
বর্তমানে মাদকাসক্তদের পরিসংখ্যানের কোনো তথ্য না থাকলেও বেসরকারিভাবে দেশে প্রায় ৭৫ লাখের বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে এবং মাদকসেবীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই যুবক, তাদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ বেকার।
৫০ শতাংশ অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। কিছুদিন আগেও যারা ফেনসিডিলে আসক্ত ছিল, তাদের বেশির ভাগই এখন ইয়াবা আসক্ত। সম্প্রতি ইয়াবা আমাদের দেশের তরুণসমাজকে গ্রাস করেছে। প্রতিদিন যেমন ইয়াবা ধরা হচ্ছে, তেমনি প্রতিদিন হাজার হাজার পিস ইয়াবা তরুণরা গ্রহণ করছে।
একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, মাদকসেবীরা গড়ে প্রতিদিন অন্তত ২০ কোটি টাকার মাদক সেবন করে থাকে; হিসাব অনুযায়ী মাসে ৬০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে সারা দেশে প্রায় ৩০ লাখ মাদক কারবারি প্রতিদিন কমপক্ষে প্রায় ২০০ কোটি টাকার মাদক কেনাবেচা করে। আরো একটি ভয়ংকর চিত্র হচ্ছে, সারা দেশের ছড়িয়ে পড়া ইয়াবার শতকরা ৮৫ ভাগই ভেজাল, যার ফলে এসব ইয়াবা গ্রহণকারী মাদকাসক্ত নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে; তার মধ্যে কিডনি, লিভার ছাড়াও মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাদক গ্রহণকারীদের কাছে ইদানীং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সিসা। সিসা সেবন সিগারেটের মতোই ক্ষতিকর।
সিসা অথবা হার্বাল তামাকের কারণে মানুষ উচ্চমাত্রার কার্বন-মনোক্সাইডজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, একবার সিসা সেবনে একটি সিগারেটের চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বেশি কার্বন-মনোক্সাইড গ্রহণ করা হয়ে থাকে। উচ্চমাত্রার কার্বন-মনোক্সাইডে মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে এবং অচেতন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া যায়। এটি সহজেই অনুমান করা যায় যে দেশে মাদকাসক্তির কারণে যুবসমাজের নিজেদের জীবন শুধু বিপন্ন হয় না, এতে গোটা পরিবার বা সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তা ছাড়া ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণের কারণে দেশে এইডস আক্রান্তের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশে এইচআইভি (পজিটিভ) রোগীর সংখ্যা তিন হাজার ৬৭৪ জন। এর মধ্যে এইডস রোগী এক হাজার ৪১৪ জন।
একটি সূত্র জানায়, দেশের প্রায় ৫১২টি পয়েন্টে প্রতিদিন হেরোইন, আফিম, প্যাথেডিন, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রি হয়। এ ছাড়া ভারত থেকে প্রতিদিন বাংলাদেশে আসছে ১০ লাখ বোতল ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। সর্বত্র হাত বাড়ালেই মিলছে এসব। সংঘবদ্ধ চোরাচালানি চক্র সব সময় বেপরোয়াভাবে ফেনসিডিল আনছে। বাস, ট্রাক, ট্রেনে সেই ফেনসিডিল ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। বাংলাদেশে মাদকাসক্তরা তাদের আসক্তির পেছনে বছরে খরচ করে কমপক্ষে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী একজন মাদকাসক্ত তার নেশার পেছনে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা খরচ করে। তবে বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই দৈনিক খরচ ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। পক্ষান্তরে এই নেশার টাকার জোগান দিতে আসক্তরা বেছে নেয় বিভিন্ন অন্যায় পথ। যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে খুন, ছিনতাই, ডাকাতির মতো ঘটনা। নেশার জন্য বাবা খুন হচ্ছে সন্তানের হাতে। সেই খুনের দায় বহন করে ছেলেটি হয় জেলে, না হয় অন্ধকার জগতে প্রবেশ করছে। এভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে মাদক মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে অবাধ ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে।
এখানেই শেষ নয়, ৪০ বছর বয়সের পরে আকস্মিক মৃত্যুর ৫০ শতাংশই ঘটে মাদকাসক্তির কারণে। আর সেই লোকটি মৃত্যুর আগে রেখে যায় কিছু উত্তরসূরি। মাদকাসক্তদের ৫৯ শতাংশই আসে এমন পরিবার থেকে, যাদের মাসিক আয় এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী মাদকাসক্তদের ৩০ শতাংশই শুধু নেশার খরচ জোগান দিতে নানা অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ে। এসব জরিপে যে তথ্যটি সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ও ভয়ের কারণ, তা হচ্ছে দেশে মাদকাসক্তদের ৯১ শতাংশই কিশোর তরুণ ও যুবক বয়সী। আর এই আসক্তির ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে ছাত্র ও শিক্ষিত বেকারদের মধ্যে।
আমাদের দেশে মহিলাদের মধ্যেও মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। এটি উদ্বেগের কারণ। নারী আসক্তদের ৯০ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। বাকি ৩৫-৪৫ বছরের মধ্যে। মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা পাঁচজন নারী। তাদের মধ্যে ছাত্রী, গৃহিণী, ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী রয়েছে।
একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জীবনীশক্তি ধ্বংসকারী ইয়াবা সেবনকারীরা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ছে এবং যৌনশক্তি হারিয়ে ফেলছে চিরতরে। কিডনিসংক্রান্ত নানা জটিলতায়ও ভুগছে তারা। বিভিন্ন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ইয়াবা আসক্তদের ওপর পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে প্রায় ১৫ হাজার মাদকাসক্ত চিকিৎসা পাচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৯ হাজার ইয়াবাসেবী। একটানা মাত্র দুই-আড়াই বছর ইয়াবা সেবনের ফলেই তারা মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাদের নার্ভগুলো সম্পূর্ণ বিকল হয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে দেশে ইয়াবা আসক্তির সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
সর্বনাশা মাদকের কারণে যুবসমাজ যে শুধু মেধাশূন্য হচ্ছে তা-ই নয়, এ মাদকাসক্তদের মধ্যে মনুষ্যত্বও লোভ পাচ্ছে।
সম্প্রতি আমাদের দেশের সংবাদপত্রে প্রতিদিন যেসব খুন, সন্ত্রাস, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনাসহ অপরাধের যেসব খবর ছাপা হচ্ছে, তার সব ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে দেশের তরুণ যুবসমাজ এর একটি অংশ।
মাদকনির্ভরশীল ব্যক্তির চিকিৎসার সব পর্যায়ে পরিবারের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রয়োজন। মাদকনির্ভরশীল ব্যক্তি স্বভাবতই চিকিৎসা নিতে চায় না। কারণ সে বুঝতেই পারে না যে তার চিকিৎসার প্রয়োজন। আবার অনেকেই শারীরিক যন্ত্রণার ভয়ে মাদক চিকিৎসায় অনীহা পোষণ করে। এ ক্ষেত্রে পরিবারের স্ত্রী, বাবা-মায়েদের উচিত নেশার নেতিবাচক দিক এবং জীবনের সম্ভাবনাময় বিষয়গুলো তুলে ধরে প্রতিনিয়ত সহমর্মিতামূলক আচরণের মাধ্যমে তাকে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী করে তোলা। এমনভাবে আচরণ করতে হবে, যাতে সে বুঝতে পারে, আমরা তাকে ভালোবাসি, তার সুন্দর ও সুস্থ জীবনের জন্য আমরা সহযোগিতা করতে চাই। বেশির ভাগ মাদকাসক্তির জবষধঢ়ংব হয় পরিবারের বৈরী ও সন্দেহমূলক আচরণের কারণে। মাদকনির্ভরশীল ব্যক্তিকে সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে না পারলে যেকোনো সময় তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। মাদকাসক্তি চিকিৎসায় ব্যক্তির নিজ ও তার পরিবারের সার্বিক সহযোগিতাসহ সেবাপ্রদানকারী সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভালো করা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। তবে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের এই সচেতনতা ও সহযোগিতা যুবসমাজকে যুবশক্তিতে পরিণত করবে।
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা
Powered by Froala Editor
বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবায় সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাত, বিভিন্ন এনজিও ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। সরকারি খাতে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নীতি প্রণয়ন, পরিকল্পনা এবং ব্যষ্টিক এবং সামষ্টিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনের ব্যাপারে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। মন্ত্রণালয়ের অধীনে চারটি অধিদপ্তর যথাক্রমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, নার্সিং সেবা পরিদপ্তর ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর নাগরিকদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে থাকে। স্বাধীনতার পর হতে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সেবার উপর প্রভূত কাজ করেছে। সরকার সকল জনগণ বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মৌলিক স্বাস্থ্য সুবিধাসমূহ নিশ্চিত করার লক্ষে স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়নে কাজ করে যাচ্ছে।স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও প্রজনন স্বাস্থ্যসহ পরিবার পরিকল্পনার বর্তমান অবস্থা বিশেষ করে নারী, শিশু ও প্রবীণদের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং শারীরিক, সামাজিক, মানসিক ও আত্মিক সুস্থতার ক্ষেত্রে টেকসই উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাত (এইচএনপি) সেক্টরের মূল লক্ষ্য। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অধীনে জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি, জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নীতি এবং জাতীয় জনসংখ্যা নীতি বাস্তবায়িত হচ্ছে। স্বাস্থ, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সেবায় গ্রাম ও শহর উভয় ক্ষেত্রে এনজিও সমূহের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তারা মূলত: পরিবার পরিকল্পনা, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য অধিক্ষেত্রে কাজ করে থাকে। সাম্প্রতিককালে এনজিওসমূহ তাদের সেবার পরিধি বাড়িয়েছে এবং শহরে প্রাথমিক সেবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন কাজ করছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত পুন:গঠনের ক্ষেত্রে ১৯৮২ সালে প্রণীত ঔষধ নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিলো ক্ষতিকর, মূল্যহীন ও অপ্রয়োজনীয় ঔষধ বাজার থেকে অপসারণ করা এবং স্বাস্থ্য সেবার সকল স্তরে প্রয়োজনীয় ঔষধ ন্যায্য মূল্যে সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ১৯৮২ সালের জাতীয় ঔষধ নীতি সাফল্যজনকভাবে রূপায়নের ফলে বাংলাদেশে ফার্মাসিউটিকাল খাতে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) সমূহ অর্জনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কিছু সূচক যেমন: শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, শিশু ও মায়েদের টীকা দেয়া, ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি দূরীকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অসাধারণ অর্জন সাধিত হয়েছে। অন্যান্য সুচকসমূহে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকায় সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য সমন্বিত প্রয়াস গ্রহণ করতে হবে।
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ
Powered by Froala Editor
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। শিল্প বিপ্লবের পর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন পৃথিবীতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নজিরবিহীন উন্নতির ফলে গোটা বিশ্ব আজ গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি দূরকে এনেছে চোখের সামনে, পরকে করেছে আপন, আর অসাধ্যকে সাধন করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বের সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূল হাতিয়ার। যে জাতি তথ্যপ্রযুক্তিতে যত বেশি দক্ষ, তাদের সার্বিক অবস্থাও তত বেশি উন্নত। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত হতে এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব পরিমণ্ডলে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় ও উজ্জ্বল করতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। কারণ একবিংশ শতাব্দীর সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ দুইই আবর্তিত হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তিকে ঘিরে।
তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, ব্যবস্থাপনা এবং বিতরণের জন্য ব্যবহৃত প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির সমন্বয়কে তথ্যপ্রযুক্তি বলা হয়। কম্পিউটিং, মাইক্রো ইলেকট্রনিক্স, টেলিকমিউনিকেশন ইত্যাদি বিষয় তথ্যপ্রযুক্তির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
তথ্যপ্রযুক্তি ও বর্তমান বাংলাদেশ/তথ্যপ্রযুক্তিতে আমাদের বর্তমান অবস্থা : গত দুই দশকে বিশ্বজুড়ে ঘটেছে অভাবনীয় সব পরিবর্তন। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ সময় ও দূরত্বকে জয় করেছে। বিশ্বকে এনেছে হাতের মুঠোয়। বাংলাদেশও তথ্যপ্রযুক্তির এ জীয়নকাঠির স্পর্শে ধীরে ধীরে জেগে উঠছে। গত দশ বছরে এ দেশে তথ্যপ্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটেছে। তথ্যপ্রযুক্তি যে বাংলাদেশের জন্যও সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি, এ কথা আজ সবাই উপলব্ধি করছে।
তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপারে খুবই আগ্রহ প্রকাশ
করছে।
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
নারীর ক্ষমতায়ন
Powered by Froala Editor
ক্ষমতায়ন বলতে বোঝায় যে কোনো মানুষ অর্থাৎ নারী-পুরুষ উভয়ই নিজের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, নিজস্ব বিষয়গুলো নির্ধারণ করে, দক্ষতা অর্জন করে, আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, সমস্যার সমাধান করে এবং আত্মনির্ভরশীলতা তৈরি করে।
ষাট ও সত্তর দশকের দিকে নারীদের ওপর অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিবিধ নেতিবাচক প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতায়ন বিষয়টির উদ্ভব ঘটে। জাতিসংঘের মতে, ‘নারীর ক্ষমতায়ন এমন একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা নারী কল্যাণ, সমতা এবং সম্পদ আহরণের সমান সুযোগ অর্জনের লক্ষ্যে লিঙ্গ বৈষম্য অনুধাবন, চিহ্নিতকরণ ও বিলোপ সাধনের জন্য একজোট হওয়া।’ নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন বলতে বোঝায় ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যক্তির অধিকার এবং রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সর্বজনীনতা সংরক্ষণ করে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে নারীর স্বাধীন ও সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নিশ্চিত করা।
নারী ও পুরুষের পারস্পরিক নির্ভরশীলতাই সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য। গোটা পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক অংশই নারী। আবহমানকাল থেকে নারী ও পুরুষের হাত ধরেই পৃথিবী সভ্যতার পথে এগিয়ে চলছে। সভ্যতার এ অগ্রযাত্রায় নারী ও পুরুষের উভয় অংশের অবদানই কোনো অংশে কম নয়। কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘নারী সৃষ্টির আধার, প্রাকৃতিক, জৈবিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের ইতিবাচক রূপান্তরে বা বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় নারী জড়িয়ে আছে আবহমানকাল থেকেই।’
পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় যুগ যুগ ধরেই নারীসমাজ শোষিত ও অবহেলিত হয়ে আসছে। ধর্মীয় গোঁড়ামি, সামাজিক কুসংস্কার, নিপীড়ন ও বৈষম্যের বেড়াজালে নারীদের সর্বদা রাখা হয়েছে অবদমিত। নারীদের মেধা ও শ্রমশক্তিকে সমাজ ও দেশ গঠনে সম্পৃক্ত করা হয়নি। নারীদের সঠিক মূল্যায়ন ও যথাযথ সম্মান দেয়া হয়নি। এছাড়া নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে গ্রহণ করা হয়নি কোনো যুগোপযোগী পদক্ষেপ। অথচ মানুষের মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে পুরুষের পাশাপাশি সহায়তা করে নারী। এটি কোনো একমুখী প্রক্রিয়া নয় বরং দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়া। তাই দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নারীর সার্বিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা জরুরি।
বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিধান সন্নিবেশিত হয় ১৯৭২ সালে। সংবিধানের ২৮(১) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জš§স্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না।’ ২৮(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার লাভ করবেন।’ ২৮(৪)-এ উল্লেখ আছে, ‘নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের কোনো অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন হতে এই অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করবে না।’ ২৯(১)-এ রয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে।’ ৬৫(৩) ধারায় নারীর জন্য জাতীয় সংসদে আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে এবং এ ধারার অধীনে স্থানীয় শাসনসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে।
আশার কথা হচ্ছে, নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বের অন্যতম দেশ বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক প্রণীত বৈশ্বিক জেন্ডার গ্যাপ সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ছিল ৭১তম, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র দেশ, যেখানে বিগত ৫০ বছরে নারী সরকারপ্রধান সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় ছিল (২৭ বছর)। মানব উন্নয়ন, প্রত্যাশিত গড় আয়ু বৃদ্ধি, প্রজনন হার হ্রাস, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় জেন্ডার সমতা অর্জন, বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক এবং সর্বোপরি মাথাপিছু আয়ে ও সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ সূচকে প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।
বেইজিং নারী উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনায় নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে যে ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত হয়েছে তার একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক বাস্তবায়ন কৌশল প্রণয়নের লক্ষ্যে ও বেইজিং ঘোষণা বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের ফলে বাংলাদেশের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি, ২০১১ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে, যার প্রধান লক্ষ্য হলো নির্যাতিত ও অবহেলিত এ দেশের বৃহত্তম নারী সমাজের ভাগ্যোন্নয়ন করা।
সমাজ অগ্রগতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক শিক্ষার হার, নারীর ক্ষমতায়ন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে উৎকর্ষ অর্জন এবং অবাধ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। নারীর ক্ষমতায়ন প্রকাশিত হয় নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ, কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের হার, অবনমিত মাতৃমৃত্যু ও বাল্যবিবাহের হার দ্বারা। একবিংশ শতাব্দীতে নারীর ক্ষমতায়ন একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রগুলো হলো পারিবারিক, সামাজিক সক্ষমতায় রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে, অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় পরিকল্পনা প্রণয়নে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে, শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডে, গবেষণামূলক কর্মকাণ্ডে, সৃজনশীল উদ্ভাবনীতে সেবা সার্ভিস ইত্যাদিতে।
অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নারীর ক্ষমতায়ন একটা অপরিহার্য অংশ। জাতীয় উন্নতির কর্মকাণ্ডে নারীকে বাদ দিয়ে কোনোভাবেই উন্নয়ন সম্ভব নয়। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীরা অগ্রসর হলেও নারীর সার্বিক অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে আরও জোড় দিতে হবে। বাল্যবিবাহ (৫৪ শতাংশ) রোধসহ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় নারীদের অধিকতর অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ ও সর্বক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ঘর থেকে বাহির এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে সর্বত্রই নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী পঙ্ক্তি ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’Ñএটাই আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করুক।
সবশেষে নারী ও পুরুষের সম্মিলিত প্রয়াসই আদর্শ সমাজ গঠনের একমাত্র অবলম্বন।
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
কোচিং-ই আমাদের শিক্ষার্থীদের বিপথগামী করছে
Powered by Froala Editor
বলতে দ্বিধা নেই যে কোচিং প্রথা শিক্ষাব্যবস্থায় এক দুষ্ট ব্যাধি। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা-সমালোচনা চলছে, চলছে পরীক্ষার পাঠক্রম নিয়ে কিংবা সহজে জিপিএ পাওয়া নিয়ে। আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় কোচিং প্রথার যৌক্তিকতা নিয়ে। আমি শিক্ষা ভুবনের মানুষ নই, কিন্তু একজন সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে উল্লিখিত বিষয়ে কিছু যুক্তিসংগত ভাবনাচিন্তা তো করতেই পারি।
যত দূর মনে পড়ে, কয়েক দশক আগে যখন নোটবই পড়া নিষিদ্ধ করা হয়, তখন ওই ব্যবস্থা গ্রহণের পেছনে যুক্তি ছিল একটাই, সংক্ষিপ্ত পথে অর্থাৎ নোট বইয়ের সাহায্যে পরীক্ষায় পাস চলে, কিন্তু জ্ঞানার্জন হয় না। তাই টেক্সট বই পড়ার দিকে ছাত্রদের টেনে আনতে বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা নোট বই নিষিদ্ধ, মনোযোগ দিয়ে টেক্সট বই পড়ো। অথচ এখন চলছে নোট বইয়ের চেয়ে দুষ্ট কোচিং।
আমি দেশ বিভাগপূর্ব সময়ের স্কুলছাত্র। নিজ অভিজ্ঞতা থেকে দুটো কথা বলতে পারি। প্রথমত, তখনকার নোট বইগুলো ছিল মোটা মোটা, শিক্ষণীয় তথ্যাদি তাতে খুব একটা কম ছিল না। দ্বিতীয়ত, তা সত্ত্বেও অধিকাংশ ছাত্র টেক্সট বই পাঠে খুব একটা অমনোযোগী ছিল না। আর টেস্ট পেপার নামীয় পূর্ববর্তী বছরগুলোর প্রশ্নের উত্তর পাঠ কিছুটা সহায়ক ভূমিকাই রেখেছে।
দীর্ঘ সময় পর নোট বই নিষিদ্ধ হওয়ায় ভেবেছি, হয়তো ভালোই হলো, ছাত্রছাত্রীরা বাধ্যতামূলকভাবে মূল বই পড়বে, অনেক কিছু জানবে। কিন্তু কিছু সময় পর দেখা গেল কোচিং শিক্ষা হাঁটি হাঁটি পা পা করে দিব্যি আপন অবস্থান নিশ্চিত করছে। শিক্ষকদের বড়সড় অংশ এই শিক্ষা-বাণিজ্যে এতটাই মন দিচ্ছে যে দ্রুত বিত্ত আহরণে ক্লাসে শিক্ষাদানে তাদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে।
প্রথাটা সাংগঠনিক রূপ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী মহলে মহামারির মতো ছড়িয়ে যায়। এবং প্রতিটি বিষয়ে কোচিং বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়। কোচিং কারো জন্য পাস করার সিঁড়ি, কারো জন্য পরীক্ষায় ভালো ফল করার অপরিহার্য উপায়। ফলে অভিভাবকদের নাভিশ্বাস অবস্থা, বিশেষ করে যাদের সন্তানসংখ্যা বেশি। তবু সন্তানদের পরীক্ষা বৈতরণী ভালোভাবে পার হওয়ার জন্য এ অর্থনৈতিক চাপ মেনে নেন অভিভাবকরা, অনেকটা বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থী সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে। আবারও অতীতের উল্লেখ করতে হয়। তখনকার ভাষায় প্রাইভেট পড়া’র বিষয়টি (এখনকার ভাষায় কোচিং) ছিল খুবই সীমিত আকারের। বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা অর্থাৎ মাধ্যমিকের ফাইনাল পরীক্ষার দুই-তিন মাস আগে বর্ষ শেষে যে টেস্ট পরীক্ষা হতো তাতে সফল ছাত্রদের কেউ কেউ ইংরেজি ও অঙ্ক এ দুটো বিষয়ের চর্চায় কথিত কোচিংয়ের সাহায্য নিত, তা-ও ওই দুই-তিন মাস। কোচিং-বাণিজ্য শিক্ষার্থীর মেধাবিকাশের অন্তরায় গোটা বছরের শিক্ষা গ্রহণে কোনো ক্লাসের ছাত্রই প্রাইভেট শিক্ষা গ্রহণে অভ্যস্ত ছিল না। এই রীতিই চালু ছিল তখন। তখনকার ছাত্রদের জ্ঞানগম্মি কি খুব কম ছিল? মনে তো হয় না। তবে স্বীকার করতে হয়, একালে পাঠ্য বিষয় বেড়েছে, শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ বেড়েছে আগেকার তুলনায়। কিন্তু সে চাপমুক্তির জন্য তো শিক্ষকরা রয়েছেন। এবং শিক্ষকদের সংখ্যাও কম নয়, বরং অতীতের তুলনায় সংখ্যাটা কিছু বেশিই, আর তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও আগের তুলনায় অধিক। এটা সময় ও সামাজিক অগ্রগতির দান। তা সত্ত্বেও অভিভাবকদের অভিযোগ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেধাবী ছাত্রছাত্রীরও অভিযোগ, কোচিংয়ে না গেলে পরীক্ষার ফল ভালো হবে না, কাঙ্খিত মাত্রায় হবে না। অতএব, অভিভাবকের পকেটে যত টানই পড়–ক, সন্তানের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত অভিভাবকদের অন্য খাতে খরচ কমিয়ে হলেও কোচিংয়ের টাকা জোগান দিতে হয়। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় বেশ কিছু অভিভাবকের কথা জানি, যাঁদের প্রবল অভিযোগ ও ক্ষোভ এই কোচিং ব্যবস্থার প্রতি। তাঁদের কথা, শিক্ষকরা ক্লাসে ভালোভাবে পড়াবেন না, আর কোচিংয়ে টাকা কামাবেন। তাহলে তাঁদের বেতন দেয়া হয় কেন? যুক্তিসংগত কথা। অভিভাবকদের গলায় ফাঁস কোচিং বাণিজ্যের দুষ্টচরিত্র কি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখে পড়ছে না? নিশ্চয়ই পড়ছে। তা সত্ত্বেও তাদের নড়েচড়ে না বসার কারণ কী? বিষয়টা নীতিনিষ্ঠ হিসেবে খ্যাতিমান শিক্ষামন্ত্রীর গোচরে আনতে চাই। চাই এ বিষয়ে তাঁর হস্তক্ষেপ। অবিলম্বে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হোক। বড়জোর সীমিত আকারে সে ব্যবস্থা চালু থাকতে পারে। যুক্তির প্রশ্নে তাই মূল প্রসঙ্গে ফিরি। যে যুক্তিতে নোট বই পড়া নিষিদ্ধ হয়েছে, সেই একই যুক্তিতে নোট বই সদৃশ গাইড বই কেন চালু থাকবে? কেন ব্যাপক হারে কোচিং শিক্ষার বাণিজ্যিক প্রথা চালু থাকবে? সরকার গুচ্ছে টাকা খরচ করে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্য বই তুলে দেয় কি সেগুলোর পাতা না উল্টে কোচিংয়ে শিক্ষার্থীদের সময় ও অর্থ ব্যয় করতে? এ প্রশ্নের জবাব কে দেবেন? এ প্রসঙ্গে অনেক কথা বলার সুযোগ রয়েছে, যা নিয়ে কিছু লেখালেখি চোখে পড়ে। যুক্তিসংগত সেসব কথা শিক্ষকদেরই কেউ কেউ লিখছেন, যাঁদের নীতিবোধ প্রখর। তাঁদের মতে, শিক্ষাব্যবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে ছাত্রদের বাধ্যতামূলক ঝোঁক মূল বই পড়ার বদলে নির্বাচিত লেখকের নোট, গাইড বই পড়া। শিক্ষার্থীরা এ পণ্য কিনতে বাধ্য। ব্যবহার করতে বাধ্য। স্বভাবতই অভিযোগ, শিক্ষকদের অনেকেই ক্লাসে ছাত্রদের শিক্ষাদানে তাঁদের জ্ঞান ও মেধা পুরোপুরি ব্যয় করেন না। কারণ তাহলে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে বা এতটাই সংকুচিত হবে যে কোচিং তার বাণিজ্য শিরোপা হারাবে। বিরাজমান অবস্থায় কোচিং বাণিজ্য এতটা ব্যাপক যে আলাদা কোচিং স্কুল প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা পেয়ে যাচ্ছে। অপেক্ষাকৃত কম ক্ষমতাবান শিক্ষকদের দেখেছি, বড়সড় বাসা ভাড়া নিয়ে নিজ বাসাবাড়িতেই কোচিং স্কুল খুলে বসতে। বছর কয়েকের মধ্যে নিজস্ব বাড়ি, গাড়ি ও জীবনযাত্রার হাল পাল্টে যাওয়া শিক্ষক মহলে এক মহাসত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। নীতি-নৈতিকতায় দায়বদ্ধ শিক্ষকরা জানেন আমাদের গোটা শিক্ষাব্যবস্থা আমূল সংস্কারের অপেক্ষায় রয়েছে। শুধু যে ত্রিধাবিভক্ত শিক্ষাব্যবস্থা একক শিক্ষানীতিতে দাঁড় করানো তাই নয়, একাধিক বিষয় শিক্ষার্থীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে চলেছে। যেমন- বছর বছর সিলেবাস পরিবর্তনের যে নীতি, তার পেছনে যে যুক্তিই থাকুক, তাতে যে প্রতিবছর নতুন বই কেনার বাধ্যবাধকতায় অভিভাবকের ট্যাঁকে টান পড়ে সে কথা কর্তৃপক্ষ কখনো ভেবে দেখেছে বলে মনে হয় না। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কোচিং-বিষয়ক সরকারি নীতিমালা প্রকারান্তরে কোচিং বাণিজ্যকে সমর্থনই নয়, ব্যাপক হারে চালু হতে সাহায্য করছে। তাতে শিক্ষকের দায় কমে যাচ্ছে ক্লাসে যথার্থ শিক্ষাদানে। অন্যদিকে শুধু যে অভিভাবকের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়ছে তা-ই নয়, শিক্ষার্থীর জ্ঞানও সীমাবদ্ধ হচ্ছে। কম পরিশ্রমে কোচিংয়ে প্রাপ্ত অতিসংক্ষিপ্ত নোট, সাজেশন, সম্ভাব্য প্রশ্নমালার ইঙ্গিত নিয়ে ভালো ফল করা শিক্ষার্থী আসলেই কতটা মেধাবী বা কতটা জ্ঞানার্জন করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এসব ক্ষেত্রে ফাঁক ও ফাঁকির একাধিক পথ রয়েছে। যেমন- শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে, তেমনি শিক্ষকের বেলায়ও। অনৈতিকতার এই বেড়াজালে অনেক মাছ ধরা পড়ে এবং সেটা উভয়ের ক্ষেত্রে। তবে শিক্ষকের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ বেশি। অনৈতিকতার মধ্য দিয়ে যে শিক্ষা শুরু, তার পরিণাম কারো জন্যই ভালো হতে পারে না, বিশেষ করে নীতিবান, সত্যিকার মেধাবী জাতি গঠনের কথা যদি বিচারে আনা যায়। শিক্ষার মান, জ্ঞানার্জনের মান, এমনকি মেধার মানও হ্রাস পেলে জাতির জন্য যে তা সমস্যাজনক, সে কথা বুঝতে কারো কষ্ট হওয়ার কথা নয়। অনুন্নত মেধার জাতি হিসেবে অখ্যাতিই তার ভবিতব্য হয়ে ওঠে। এর প্রভাব পড়ে সমাজে। আজ সামাজিক দুর্নীতি নিয়ে স্বদেশে-বিদেশে যেসব কথা চলছে, অভিযোগ উঠছে তার পেছনে তো রয়েছে গোড়ার গলদ। তরুণ শিক্ষার্থীর জন্য অনৈতিক পরিবেশ তার নেতিবাচক মানসপরিম-ল গড়ে তোলার সহায়ক। সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমীর সংখ্যা কতই বা হতে পারে। বাংলাদেশের সমাজ এখন নানা ধারার অনৈতিক বাণিজ্যের উর্বর ভূমি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেমন- কোচিং বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, গ্রেপ্তার বাণিজ্য, অপহরণ বাণিজ্য ইত্যাদি কত কী! এর মধ্যে কেউ কেউ কোচিংকে মহাবাণিজ্য নামে আখ্যায়িত করছেন। কারণ আর কিছুই না। শিক্ষা যেমন জাতি গঠন তেমনি ব্যক্তিক জীবন গঠনেরও ভিত্তি। সে ভিত্তিই যদি দূষিত হয় তাহলে শুধু সমাজ গঠনের সুযোগ থাকে কোথায়? পরিণাম নীতি-নৈতিকতাভ্রষ্ট, সৎশিক্ষাভ্রষ্ট জাতি। সাধারণভাবে এটাই সত্য হয়ে দাঁড়ায়, সৎ ও মেধাবীরা তখন ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচ্য। কখনো পরিত্যক্ত। কোচিংয়ের বড় অভিশাপ হলো শিক্ষার্থীর জ্ঞান সীমাবদ্ধ রেখেই তাকে পাস করিয়ে দেয়া বা ভালো ফলের অধিকারী হওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া। একটি সুশিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে এ বাণিজ্যিক ব্যবস্থার আশু অবসান দরকার। দরকার শিক্ষানীতির আমূল পরিবর্তন ও পূর্ণাঙ্গ টেক্সট পাঠে ফিরে যাওয়া। ভালো ফলাফলের সংক্ষিপ্ত পথ বর্জন করা। তাই শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, দয়া করে শিক্ষার সর্বপর্যায়ে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার ব্যবস্থা নিন। নিশ্চিত করুন শিক্ষায়তনে যথোচিত শিক্ষার ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের। সবচেয়ে জরুরি শিক্ষাঙ্গনের সৎ, সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করা। আর পরিমলদের মতো শিক্ষকদের যেন শিক্ষাঙ্গনে ঠাঁই না হয়। নীতিবান শিক্ষক, জ্ঞানী, দক্ষ শিক্ষকই যোগ্য শিক্ষক, একমাত্র তাঁদেরই এখতিয়ার রয়েছে শিক্ষাদানের, অন্যদের নয়। মনে রাখা দরকার, কোচিং বাণিজ্যে কোচিংদাতা শিক্ষক অর্থে ফুলেফেঁপে উঠলেও তা শিক্ষার্থীর মেধা বিকাশের অন্তরায়, শুধু ভালো রেজাল্টেরই সেতু। এমনটা আকাঙ্খিত নয়। -লেখকঃ আহমদ রফিক কবি, গবেষক ও ভাষাসংগ্রামী
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
বাংলাদেশের উন্নয়নে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা
Powered by Froala Editor
আজ ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস। প্রতিবছর নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ দিবস পালিত হয়। ওই নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এসব দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশের এমন একটি দিবস হলো সশস্ত্র বাহিনী দিবস- আর্মড ফোর্সেস ডে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় বীর সেনানীরা মুক্তিকামী আপামর জনসাধারণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশমাতৃকাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে জল, স্থল ও আকাশপথে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে অপ্রতিরোধ্য আক্রমণ চালিয়েছিল। ১৯৭১ সালে এই দিনে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এই দিনটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনটিকে স্মরণ রেখে ১৯৮৬ সালে প্রথমবারের মতো ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করা হয়।
এর পর থেকে প্রতিবছর এই দিনে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় এই সশস্ত্র বাহিনী দিবস। এই দিনটি পালন করার মাধ্যমে সেই সব মানুষকে স্মরণ করা হয়, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, যাঁরা সম্ভ্রম হারিয়েছেন। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ঢাকা শহরে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বীজ বপন হয় ৭ মার্চের ভাষণ, ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার বীজ বপন করেন। ধীরে ধীরে সেটি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলার মানুষ পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধে অগণিত মানুষ তাঁদের প্রাণ বিসর্জন দেন।
লাখো প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বিমানবাহিনী, সেনা ও নৌ বাহিনী একত্র হয়ে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। যেসব বাংলাদেশি আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করেছিলেন, তাঁরাও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত হন স্বাধীনতাসংগ্রামে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছিল, সেগুলো হলো—‘কে’ ফোর্স ‘এস’ ফোর্স ও ‘জেড’ ফোর্স। মূলত দেশটিকে ১১ সেক্টরে বিভক্ত করে এই স্বাধীনতাসংগ্রামে শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, কৃষক-শ্রমিক-জনতা এবং সেনাবাহিনী একত্র হয়ে কাজ করে। পাশাপাশি নৌসেনাকেও শক্তিশালী করে তুলেছিল বাংলাদেশ। তাদের বিএনএস পদ্মা ও পলাশ নামের দুটি যুদ্ধজাহাজ ছিল এবং এই দুটি যুদ্ধজাহাজের মাধ্যমে তারা পাকিস্তান থেকে সেনাদের জন্য আসা অস্ত্র এবং রেশন আটকাতে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর প্রধান দুটি বন্দরকে কবজা করতে সক্ষম হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বিমানবাহিনী গড়ে তোলা হয়। যেসব বাঙালি পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের এই বাহিনীতে যুক্ত করা হয়। অনেকেই ভলান্টারি অবসরপ্রাপ্ত হিসেবে তৎকালীন বিমানবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেন। তাঁরাই বাংলাদেশের সর্বপ্রথম বিমানবাহিনী প্রস্তুত করেন। সম্মিলিত বাহিনীর সব কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর।
১৯৭১ সালে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্মিলিত হয়েছিল জনতার সঙ্গে। জাতির প্রয়োজনে অর্পণ করা কঠিন দায়িত্ব পালনে সশস্ত্র বাহিনীর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা অনন্য। মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ গঠনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য। তরুণ প্রজন্মের কাছে তাই এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং পরিচালক, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক
Powered by Froala Editor
বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের যেমন নাড়ির সম্পর্ক, তেমনি শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্রেরও আত্মার সম্পর্ক। শিক্ষকরা আমাদের আত্মবোধ গড়ে দেন। তারাই আমাদের বোধহীন জীবনকে সঠিকভঅবে আত্মস্থ করতে শেখান। জ্ঞানহীন মানুষ যদি পশুর সমান হয়ে থাকে, সেই মানুষের মনে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে দেন একজন আদর্শবান শিক্ষক।
পিতা-মাতা-সন্তানের সম্পর্কের মতো ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক এক অবিচ্ছেদ্য সুন্দর সম্পর্ক। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক হওয়া উচিত অভিভাবক ও বন্ধুসুলভ। শিক্ষকরা প্রথমে হবেন অভিভাবক, তারপর বন্ধু। তবে সেই বন্ধুত্বের মধ্যে সীমারেখা থাকা উচিত। আসলে ছাত্র-শিক্ষকের মাঝে সম্পর্ক হওয়া উচিত ‘ফ্রেন্ডলি’; তবে ‘ফ্রেন্ড’ নয়। ফলে অভিভাবক ও বন্ধুত্বের একটি মিশ্রণ থাকবে শিক্ষকের আচরণের মাঝে। শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক হতে হবে পাত্র ও পানির মতো। পাত্র ছাড়া যেমন পানি সংরক্ষণ সম্ভব নয়, তেমনি শিক্ষক-ছাত্র সুসম্পর্ক ছাড়া জ্ঞানার্জন বিতরণও অসম্ভব। একজন শিক্ষকই শিক্ষার্থীর জ্ঞানার্জনের পেছনে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জোগায়, স্বপ্ন দেখায়।
মানুষের জীবনে পিতামাতার পরই শিক্ষকের অবস্থান। তবুও একজন শিক্ষক আমাদের কাছে পিতামাতার সমতুল্য। ছাত্র-শিক্ষকের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক হাজার বছর ধরে চলে আসছে। শুধু শিক্ষা কিংবা জ্ঞানার্জন নয়, একজন ছাত্রের দুর্দিনে ছায়ার মতো পাশে দাঁড়ান একজন শিক্ষক। আমাদের সংস্কৃতিতে শিক্ষক-ছাত্রের মধ্যে রয়েছে এক আশ্চর্য সেতুবন্ধন। যে বন্ধন কেবল পারস্পরিক স্নেহ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর বিশ্বাসের ওপর গড়ে ওঠে। ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক এক অদ্ভূতরকম শক্ত গাঁথুনির।
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
বেকার সমস্যা
Powered by Froala Editor
অপার সম্ভাবনার এ দেশ। এখানে জন্ম নিয়েছেন অনেক জ্ঞানী-গুণী। তারা দেশের সঙ্গে বিশ্বকেও করে গেছেন সমৃদ্ধ। এখনও এ মাটির সন্তানেরা পৃথিবীর দেশে দেশে অনেক দায়িত্বপূর্ণ কাজ, যুগান্তকারী গবেষণায় ব্যস্ত। কিন্তু সেই দেশের তরুণ প্রজন্মের খবর কী? কিছু অংশ বাদ দিলে দেশের তরুণ সমাজের একটা বড় অংশই আজ নানাভাবে সংকটে নিমজ্জিত। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জায়গায় তরুণরা পাচ্ছে না যথাযোগ্য মর্যাদা, কাজ ও মেধার যথার্থ সম্মান। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। এ দেশের কর্মসংস্থানেও তারুণ্যের ভূমিকা রয়েছে অসামান্য। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, তরুণ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ভারতে ৩৫ কোটি ৬০ লাখ, চীনে ২৬ কোটি ৯০ লাখ, ইন্দোনেশিয়ায় ৬ কোটি ৭০ লাখ, যুক্তরাষ্ট্র ৬ কোটি ৫০ লাখ, পাকিস্তানে ৫ কোটি ৯০ লাখ এবং বাংলাদেশে রয়েছে ৪ কোটি ৭৬ লাখ। এই তরুণরাই বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে চলেছে। ইতিহাস সৃষ্টি থেকে প্রতিটি স্তরে সেই তরুণ যুবকরাই জোগান দিয়েছিল। আজও বাংলাদেশের সব অভূতপূর্ব সৃষ্টিগুলোর জন্মই দেন তরুণরা। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশ গঠনেও তরুণদের ছিল ইতিবাচক ভূমিকা। কিন্তু বর্তমান তরুণ সমাজের বড় অংশই বেকার, অনিশ্চিত জীবনের পথে। যার কারণে অনেক তরুণ হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথেও হাঁটেন। আজ তরুণদের বড় একটি অংশ এ দেশের প্রতি মমত্ববোধ হারিয়ে ফেলেছে। যে কারণে আগের মতো স্বেচ্ছাশ্রম আর দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ তারুণ্য খুবই কম দেখা যায়। তারুণ্যের এই পশ্চাৎপদতার জন্য অনেকটা আমাদের দেশের অপরাজনীতিই দায়ী। তরুণদের রাজনীতি বিমুখতাও এ দেশের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে। তরুণদের ওপর চালানো এক জনমত জরিপে দেখা যায়, প্রচলিত এই রাজনীতিকে আমাদের দেশের প্রায় ৬০ ভাগ তরুণ ছেলেমেয়ে পছন্দ করেন না। এ ক্ষেত্রে রাজনীতির নগ্ন রূপকেই তারা দায়ী করেন। তাদের কাছে রাজনীতির সংজ্ঞাটাই হলো ক্ষমতার ভাগাভাগি আর সুবিধাবাদ কেন্দ্রিক দলীয় চর্চা। তারা প্রচলিত রাজনীতিকে এ দেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক বলে উত্থাপন করেন। তরুণদের একটি অংশ রাজনৈতিক দুষ্টচক্রের প্রভাবে জড়িয়ে পড়ছে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের সঙ্গে। হলি আর্টিজানসহ বিভিন্ন ঘটনা আমাদের মাঝে এক ভংকর আতঙ্ক এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করে দিয়েছে। বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িকতাকে ধ্বংস করার আরেকটি চক্রান্ত হলো এই জঙ্গিবাদী আগ্রাসন। কিন্তু এসবের পরিত্রাণ তেমন মেলেনি। তরুণ প্রজন্মকে এই আগ্রাসন থেকে রক্ষা করবে কে? কীভাবে এরা এই আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাবে, সেটা আমাদের সবার জানা বিষয়। এবার শুধু রাষ্ট্রকে এটা নিয়ে ভাবতে হবে। বাংলাদেশে একসময় সবচেয়ে মেধাবী তরুণ ছেলেমেয়েরাই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতেন। সবচেয়ে মেধাবীরা সমাজে নানা ধরনের স্বেচ্ছাশ্রমের দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতেন। একইভাবে সমাজও তাদের এই কাজের স্বীকৃতি দান করত। যে কারণে মেধাবীদের জায়গা সমাজের সর্বস্তরে ছিল। গান, কবিতা, আবৃত্তি, নাচ, খেলাধুলা, সাহিত্য আড্ডা, ছাত্ররাজনীতি সব কিছুতে তাদের ছিল প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের সব ক্ষেত্রে চরম দৈন্যতা লক্ষণীয়। না আছে খেলার মাঠ, না আছে পৃষ্ঠপোষক, না আছে সাহিত্য-আড্ডা, না সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক আন্দোলন। প্রগতিশীল রাজনীতিও আগের মতো শক্তিশালী নয়। যে কারণে সমাজের সব ক্ষেত্রেই জেঁকে বসেছে সুবিধাবাদ, ভোগবাদ আর আত্মকেন্দ্রিকতা। আর এর সব কিছুকেই বাংলাদেশের তারুণ্য ধারণ করছেন। অন্যদিকে রাষ্ট্র ও সরকার তরুণদের সঠিক মূল্যায়ন করছে না। যার কারণে তারা চলে যাচ্ছেন দেশের বাইরে। আজকের তরুণরা দেশকে নিয়ে অনেক চিন্তা করছেন। প্রতিনিয়ত দেশের খবরা-খরব জানতে চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু প্রশাসন, রাষ্ট্র তরুণদের নিয়ে কতটা ভাবে? বর্তমান তরুণ প্রজন্ম কাজে বিশ্বাস করে, কথায় নয়। আজ আমাদের দেশে গড় তরুণ বেকারের সংখ্যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অধিক। এই বেকার তরুণদের চিন্তাচেতনা আর বুদ্ধি যদি কাজে লাগাতে পারে রাষ্ট্র, তবে বাংলাদেশ পরিণত হবে সোনার বাংলায়। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে তরুণ সমাজের বিকল্প নেই। আজকের তরুণরাই আগামী দিনে দেশ পরিচালনা এবং বড় বড় কাজের নেতৃত্ব দেবে। এখন থেকে যদি তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তোলা যায়, তবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আরো সুন্দর হবে। তাই দেশ গঠনে তরুণদের চাওয়াকে যেমন গুরুত্ব দিতে হবে, ঠিক তেমনি তাদের পর্যাপ্ত সুযোগও দিতে হবে। আজ দেশে লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার তরুণ যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যাদের চাইলে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারে সরকার। এ বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে তরুণ সমাজকে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে তরুণরা যত বেশি পড়ালেখা করছে, তাদের তত বেশি বেকার থাকার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) আঞ্চলিক কর্মসংস্থান নিয়ে এক প্রতিবেদনেও এই চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশে এ হার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এ অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। দেশে তরুণদের বিশেষত শিক্ষিত তরুণদের এক বৃহদাংশ বেকার জীবনযাপন করছে এবং সেটা বেড়েই চলছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ বলছে, ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ দুই বছরে মাত্র ছয় লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে অথচ এই সময়ে প্রতি বছর দেশের কর্ম বাজারে প্রবেশ করেছে প্রায় ২৭ লাখ মানুষ। অর্থাৎ মাত্র দুই বছরে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ৪৮ লাখ। অথচ ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর চাকরি বা কাজ পেয়েছে ১৩ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭ এর হিসাব বলছে, দেশে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। প্রতিষ্ঠানটির হিসাব অনুযায়ী, দেশে শ্রমশক্তির মোট পরিমাণ ৫ কোটি ৬৭ লাখ। এর মধ্যে কাজ করছে ৫ কোটি ৫১ লাখ ৮০ হাজার জন। এর অর্থ বেকারের সংখ্যা মাত্র ২৬ লাখ ৮০ হাজার। বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। অর্থাৎ প্রতি দুইজনে একজনের নাম বেকারের খাতায় অন্তর্ভূক্ত। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ৩ কোটি। প্রতিষ্ঠানটি আভাস দিয়েছে, কয়েক বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে ৬ কোটিতে দাঁড়াবে, যা মোট জনসংখ্যার ৩৯ দশমিক ৪০ শতাংশ হবে। আইএলওর হিসাবটিকেই পর্যবেক্ষকেরা বাংলাদেশের প্রকৃত বেকারের সংখ্যা বলে মনে করেন। উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যতটা আগ্রহী, কারিগরি বা কর্মদক্ষতা বাড়ানোর শিক্ষা নিতে তরুণরা ততটা আগ্রহী নন। দ্বিতীয়ত, খুব কম ক্ষেত্রেই কাউকে উদ্যোক্তা হতে দেখা যায়। সবাই চাকরির প্রত্যাশা করেন, কেউ চাকরি সৃষ্টির কথা ভাবেন না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে চাকরির আশায় দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করা এখন সাধারণ বিষয়। সরকারের উচিত বছর বছর নতুন প্রতিষ্ঠান না করে সঠিক জায়গায় বিনিয়োগ করে দক্ষ জনসম্পদ ও উদ্যোক্তা তৈরিতে জোরালো ভূমিকা রাখা। ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) এক পরিসংখ্যানে দেখিয়েছে, বাংলাদেশে শতকরা ৪৭ ভাগ গ্র্যাজুয়েট হয় বেকার, না হয় তিনি যে কর্মে নিযুক্ত এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট হওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। প্রতি বছর বাংলাদেশে ২২ লাখ কর্মক্ষম মানুষ চাকরি বা কাজের বাজারে প্রবেশ করছেন। এই বিশালসংখ্যক কর্মক্ষম মানুষের মাত্র সাত শতাংশ কাজ পাবেন। এর অর্থ হচ্ছে, দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বেকারের তালিকায় নাম লেখাচ্ছেন। দরিদ্র সমাজে চারিত্রিক ও মানসিক; জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতি করতে হলে সত্যিকারের শিক্ষা নিতে হবে। দৃষ্টি করতে হবে প্রসারিত। ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ না থেকে বিশ্বের বিশালতায় উন্মুক্ত করতে হবে নিজেদের। আর আনন্দ মনে তরুণরা এগিয়ে গেলে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
Powered by Froala Editor
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা অতুলনীয় গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির জন্য বাংলাদেশী জনগণ অসংখ্য বিপর্যস্ততা এবং শোষণের মুখোমুখি হয়েছিল। এই প্রতিযোগিতার মধ্যে, সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি একটি মহান ভূমিকা রাখত।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি ও অবস্থান অনুযায়ী প্রতিকূল প্রতিস্পর্ধা করেছিলেন। তারা প্রথমতঃ গুপ্তচর কর্মসূচিগুলি চালিয়েছিলেন, যেগুলি মুক্তিবাহিনীর গতিপথের গোপন থাকতো এবং শত্রুদের প্রাক্তনের উপায়ে নিয়ন্ত্রণ অনুমোদন দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। পরে তারা মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন সাংগঠনিক ও যুদ্ধবিশেষ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছিলেন, সর্বোচ্চ সংগঠন হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে তারা গঠনমূলক ভূমিকা রাখেন। তাদের উদ্যোগে, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রাপ্তির লক্ষ্য অত্যন্ত মহান সাফল্যে চূড়ান্ত হয়।
Powered by Froala Editor
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুফল ও কুফল
Powered by Froala Editor
বর্তমান বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর এক আধুনিক বিশ্বে পরিণত হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অভাবনীয় পরিবর্তন এনেছে। এটি মানুষের সামাজিক ক্ষেত্রে যেমন সুফল বয়ে এনেছে তেমনি কিছু কুফলও রয়েছে। চলুন তাহলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুফল ও কুফল সম্পর্কে জেনে নেই।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুফল
1. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার যেকোনো ধরনের অপচয় রোধ করে।
2. এর প্রয়োগের মাধ্যমে যেকোনো কাজে আগের চাইতে অনেক কম সময় লাগে অর্থাৎ এর মাধ্যমে সময় সাশ্রয়ী ব্যবস্থা তৈরি করা যায়।
3. এর ব্যবহার ও চর্চার ফলে ক্রমান্বয়ে সর্ব ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
4. এর ব্যাপক প্রসারের ফলে যে কোন তথ্যের প্রাপ্যতা এখন সহজ হয়েছে। বিশেষ করে ইন্টারনেটের মত প্রযুক্তির কল্যাণে এখন বিশ্বটাকে পাওয়া যাচ্ছে হাতের মুঠোয়।
5. এর উৎকর্ষতার কারণে এখন তাৎক্ষণিক যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে। ফেক্স, ইন্টারনেট, ই-মেইল ,এসএমএস, এমএমএস ইত্যাদি এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
6. ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে মতামত আদান-প্রদান করা যায়।
7. ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক সাফল্য বয়ে এনেছে।
8. শিল্প প্রতিষ্ঠানে এর ব্যবহার মনুষ্য শক্তির অপচয় কমায়।
9. শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে।
10. যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজতর, দ্রুত, নিরাপদ এবং আরামদায়ক করেছে।
11. ঘরে বসেই চিকিৎসকদের কাছ থেকে সেবা নেওয়া যাচ্ছে।
12. অনেক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে ইত্যাদি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কুফল
1. অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
2. ইন্টারনেটে এমন কিছু অশ্লীল সাইট রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে মানুষের নৈতিক স্থলন ঘটতে পারে।
3. এর ফলে প্রযুক্তিগত সুবিধা এখন এতটাই বেড়েছে যে এর অপব্যবহার করে ব্যক্তির গোপনীয়তা প্রকাশ হয়ে পড়ছে।
4. বেকারত্ব সৃষ্টি হচ্ছে।
5. অতিরিক্ত এর ব্যবহারের ফলে নানা রকম শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
6. এর ব্যবহারের ফলে সব ধরনের সমস্যার সমাধান সহজে পাওয়ার কারণে চিন্তা ও গবেষণার মাধ্যমে নতুন কিছু আবিষ্কার হতে মানুষ দূরে থাকবে। ফলে আমাদের সমাজ ও জাতি মেধাবী প্রজন্ম হতে বঞ্চিত হবে।
7. অনেক সময় মিথ্যা প্রচারণা করে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি করে ইত্যাদি।
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
খাদ্য নিরাপত্তা ও আমাদের সরকারের ভূমিকা
Powered by Froala Editor
দুর্যোগে ও পরবর্তী সময়ে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় নতুন করে বেশ কিছু উদ্যোগ ও কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় এগুলো বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে এরইমধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের (প্রশাসন) নেতৃত্বে সংস্থা প্রধান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সমন্বয়ে মনিটরিং কমিটি এবং অতিরিক্ত সচিবের (বাজেট ও অডিট) নেতৃত্বে মনিটরিং সহায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে এই খাদ্য নিরাপত্তার আওতায় শুধুমাত্র ধান, চাল ও গম সংরক্ষণের বিষয়টি রয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০২১ সালের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য ধারণ ক্ষমতা ২৭ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং রূপকল্প-২০২১ এর সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে আধুনিক খাদ্য গুদাম ও সাইলো নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করায় বর্তমানে দেশে সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের বিদ্যমান ধারণক্ষমতা প্রায় ২১ লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। আরও প্রায় ৫ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার আধুনিক খাদ্য গুদাম ও সাইলো নির্মাণের লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রকল্প বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এছাড়া খাদ্যশস্যের সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ানো এবং বিদ্যমান গুদামের ধারণ ক্ষমতা বজায় রাখতে নতুন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সারাদেশে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দেড় লাখ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন নতুন খাদ্য গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের ৮টি বিভাগে ৫৪টি জেলার ১৩১টি উপজেলায় নতুন এক হাজার মেট্রিক টনের ৪৮টি ও ৫০০ মেট্রিক টনের ১১৪টি খাদ্য গুদাম নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আছে। এরইমধ্যে এই প্রকল্পের ৮২ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
দুর্যোগে এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে দেশে খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে খাদ্য মজুত ক্ষমতা বাড়াতে ‘আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ’ প্রকল্পটি প্রায় দুই হাজার কোটি ব্যয়ে জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ২০২০ মেয়াদে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। দেশের ৮টি কৌশলগত স্থান- চট্টগাম, আশুগঞ্জ, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মধুপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল এবং মহেশ্বরপাশায় ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার ৮টি আধুনিক স্টিল সাইলো (গুদাম) নির্মাণ করা হবে। এরইমধ্যে এগুলোর ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় দেশের দুর্যোগপ্রবণ ১৯ জেলার ৬৩ উপজেলায় ৫ লাখ পারিবারিক সাইলো বিতরণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
সারাদেশে পুরাতন খাদ্য গুদাম মেরামত এবং নতুন অবকাঠামো নির্মাণেও একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রায় ৩১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ থেকে ২০২১ মেয়াদে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পটির আওতায় দেশের ৬২ জেলার ২১৪ উপজেলায় খাদ্য অধিদফতরের ২৩৭ স্থাপনায় প্রায় ৩ লাখ ২১ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার ৫৫০টি খাদ্য গুদাম মেরামত ও ২০টি নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।
নিরাপদ খাদ্যের জন্য বাংলাদেশে খাদ্য সুরক্ষার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নেওয়া হয় একটি প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ৫ বছরের কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া নিরাপদ খাদ্য আইন বাস্তবায়নের জন্য জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
নতুন উন্নয়ন প্রকল্প ও কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে সারাদেশে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ২০০টি প্যাডিসাইলো (ধানের গুদাম) নির্মাণ করা হবে। খাদ্যশস্যের পুষ্টিমান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে “প্রিমিক্স কার্নেল মেশিন ও ল্যাবরেটরি স্থাপন এবং অবকাঠামো নির্মাণের প্রকল্পটি এরইমধ্যে একনেকে পাস হয়েছে।
এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা কমিশন এসডিজি ম্যাপিং তৈরি করেছে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। জিরো হাঙ্গার বা ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অতি দরিদ্র ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু রয়েছে। সরকারি পর্যায়ে খাদ্য গুদামের ‘ফুড লস’ কমানোর লক্ষ্যে কাজ চলছে।
দুর্যোগে ও সংকটে খাদ্যপণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, লোকজন মনে করেন খাদ্যপণ্য মানেই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। পেঁয়াজও আমাদের। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। আমরা শুধু নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে আমরা সকল খাদ্যের মালিক। যাকে আমরা বলি ফুড সেফটি। এখানে আমরা সব ফুডে আছি। আরেকটা হচ্ছে ফুড সিকিউরিটি। দু’টো ভিন্ন জিনিস। এই ফুড সিকিউরিটিতে থাকে দানাজাতীয় খাদ্যশস্য চাল ও গম। এ দু’টোতে আছি। আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করি। সরকার যে কার্যপ্রণালী বিধিমালা করেছে সেখানে কোন মন্ত্রণালয় কী কাজ করবে সেটা বলা আছে। বাজারে কীভাবে চাল ও গম পর্যাপ্ত করা যায় সেই কাজটা আমরা করি। সেজন্য নানা উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। সেগুলোর কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। যথাসময়ে সেসব কাজ শেষ হবে বলেও মনে করেন তিনি।
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
অনলাইন ব্যবসা সম্ভাবনা ও সমস্যা
Powered by Froala Editor
বর্তমানে অন্যতম আলোচিত ও সবার আকর্ষণের বিষয়বস্তু হলো ই-কমার্স। জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এটি। এর যাত্রা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সবাই নতুনত্বের সংস্পর্শে এসেছেন। দুই দশক আগেও বাংলাদেশে ই-কমার্সের তেমন ব্যাপকতা ছিল না, কিন্তু বর্তমানে খরচ ও সময় কম হওয়ার কারণে সবাই ই-কমার্সের দিকে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ই-কমার্স ধারণাটি আমাদের সবার কাছে পরিচিত। অনলাইনের মাধ্যমে আমরা যখন কোনো পণ্য কেনাবেচা করি, তখন তাকে ই-কমার্স বলে।
করোনা পরিস্থিতিতে এর প্রসার বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। শাটডাউনের ফলে ধাপে ধাপে দোকানপাট সবকিছু বন্ধ করে রাখার কারণে সবার একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠেছে ই-কমার্স। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে একজন ব্যবসায়ী এখন নিজস্ব দোকান বা শপিং মল থাকার পরেও ই কমার্সের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করছেন। ই-কমার্স মূলত সব ব্যবসায়ীর জন্য অবশ্যপালনীয় একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ই-কমার্সের পথযাত্রা ও বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনা করলেই বাংলাদেশের সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ই-কমার্স সম্ভাবনাময় দিক উম্মোচন করেছে। দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধি, বিকাশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এটা ইতিবাচক দিক। ঘরে বসে অল্প কিছু সময়ের মধ্যে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করার সুবিধা থাকায় বিক্রেতারা যেমন লাভবান হচ্ছেন, ক্রেতাদেরও সরাসরি বাজারে গিয়ে পণ্য ক্রয় করতে হচ্ছে না। প্রায় প্রতি বছর দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান। বাংলাদেশে ই-কমার্সের সম্ভাবনার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাসহ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বেকারত্বের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীসহ যারা করোনার কারণে চাকরি হারিয়েছেন বা কর্মসংস্থান হারিয়েছেন, তারা ই কমার্সের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বেকারত্ব নামক অভিশাপের অবসান ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন।
নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এই সেক্টরে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যায় এবং তাদের কাজের সফলতাও আশানুরূপ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যেসব তরুণ-তরুণী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দূরে সরে ঘরে বসে অনায়াসে দিন যাপন করছিলেন এবং যাদের মাথায় ছিল অনেক চিন্তার ভার, তারা ওই উদ্যোক্তার খাতায় নাম লেখাচ্ছেন। কেননা জীবনের এই পর্যায়ে এসে পরিবারের দায়িত্ব নেয়া এবং বাবা-মায়ের পাশে অর্থনৈতিক সহায়ক হিসেবে থাকা মধ্যবিত্ত সন্তানদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ই-কমার্স করোনা পরিস্থিতিতে এসব শিক্ষার্থীর সম্বল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে আমাদের দেশের সম্ভাবনার হার অনেক বেশি এবং যদি এই ই-কমার্সের প্রসার আগামী দিনগুলোয় আরও বৃদ্ধি করা যায় এবং সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া যায়, তাহলে অর্থনৈতিকভাবে যে বিরাট পরিবর্তন আসবে সেটা সত্যিই সবার জন্য একটা সুখবর।
ই-কমার্স বলতে শুধু অনলাইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটা বোঝায় না, এটা দ্বারা অনলাইনে কেনাকাটা, ওয়েবডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং ও ফেসবুকে কেনাকাটা সবই বোঝায়। ই-কমার্সের ওপর সবার এই নির্ভরতার অন্যতম কারণ হলো পণ্যের সহজলভ্যতা ও পণ্য সম্পর্কে বিশদ তথ্য। পণ্য সম্পর্কে কোনো তথ্য না জেনে আমরা সশরীরেও সেই পণ্যটি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করি না। আর এখানে যেহেতু প্রশ্ন অনলাইনে কেনাকাটার, তাই পণ্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য যাচাই করা একটা বড় বিষয়, যে সুবিধা আমরা ই-কমার্সের কাছ থেকে পেয়ে থাকি। এই বিশ্বাসযোগ্যতার কারণেই মানুষ ই-কমার্সের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। যেমনভাবে বিক্রেতারা তাদের সঠিক তথ্য দিয়ে পণ্যটি বিক্রি করতে সক্ষম হচ্ছেন, ঠিক তেমনিভাবেই একজন ক্রেতা সঠিক তথ্য জানা এবং যাচাই করার মাধ্যমে সেটা ক্রয় করার একটা আস্থাভাজন জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন।
এমন অনেক পণ্য আছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। যেহেতু ই-কমার্স চালু হওয়ার আগে আমাদের কোনো জিনিসের প্রয়োজন হলে সেটা সম্পর্কে আমরা সশরীরে তথ্য যাচাই করতাম, তাই আমাদের অজানা অনেক পণ্য থেকে যেত। এমন পণ্যগুলো সম্পর্কে আমরা এখন ই-কমার্সের মাধ্যমে খুব সহজেই জানতে পারছি। ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে দূরত্ব অনেক বড় একটা বিষয়। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে একজন মানুষের যদি কোনো পণ্যের প্রয়োজন হয়, সেটা রাজধানী ঢাকা শহরে এসে ক্রয় করা তার পক্ষে যতটা কঠিন ছিল, এখন সেটা অনায়াসে সে ক্রয় করতে পারে। ই-কমার্সের সুবাদে এসব মানুষের জন্য এক নতুন জগতের দ্বার উšে§াচিত হয়েছে।
যদি কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়, তাহলে ই-কমার্স এক্ষেত্রে অনেক বড় অবদান রাখছে। বিগত কয়েক বছরে ই-কমার্সের মাধ্যমে যে পরিমাণ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে, সেটা অভাবনীয় বিষয়। নতুন করে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০ হাজার মানুষের। মূলত ই-কমার্সের প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতার আরও একটি দিক হলো করোনাকালে ক্রেতাদের চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করা। নিত্যপণ্য ও খাদ্যসামগ্রী ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষেত্র বিশেষে ৩০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। যদি বিগত বছরগুলোর দিকে একটু লক্ষ করি তাহলে দেখতে পাব, ২০১৯ সালেও দেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ২৫ শতাংশ। ২০২০ সালে এসে সেই প্রবৃদ্ধি ৭০ থেকে ৮০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ বছর দেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা বহুগুণ বেড়ে গেছে গত বছরে তুলনায়। অর্জিত সুনাম, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তারা গ্রাহকদের জন্য মানসম্মত, উন্নত ও দ্রুত সেবা নিশ্চিত করছে। ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ জানিয়েছে, ২০২০ সালের শেষ আট মাসে (এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর) ই-কমার্সে শুধু নিত্যপণ্য লেনদেন হয়েছে তিন হাজার কোটি টাকার। বর্তমানে প্রতিদিন এক লাখ ৬০ হাজারের বেশি ডেলিভারি দিতে হচ্ছে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে।
এতগুলো দিক বিবেচনার পরেও মনে প্রশ্ন আসতে পারে, বাংলাদেশে ই-কমার্সের সম্ভাবনা কতটা? ই-কমার্সের মধ্যে অনেকে সংশয় ও সফলতা থাকলেও বাস্তবতা বলছে, এখানে ই-কমার্সের সম্ভাবনা অনেক দূর পর্যন্ত প্রসারিত। আগামী দিনগুলো অনেক সম্ভাবনাময় ই-কমার্সের জন্য। বলা যায়, এ দেশের খুচরা ব্যবসার সিংহভাগ ক্রমেই ই-কমার্সের আওতায় চলে আসবে, এমনকি করপোরেট ব্যবসারও অনেক কিছু। বিষয়টা এমন নয় যে, ই-কমার্স জগতে কেউ না জেনে বুঝে প্রবেশ করে সফলতা অর্জন করছে। কিছু সংশয় রয়েছে যেটার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তবে এগুলো কাটিয়ে উঠে যদি যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে সফলতা অর্জনের এই পর্যায়কে আরও উন্নত করা যায়, তাহলে এটার সম্ভাবনা আমাদের দেশে সর্বোচ্চ হবে। ই-কমার্সের ক্ষেত্রে যে ঘাটতি রয়েছে সেটি হলো, সরকার কর্তৃক প্রদত্ত পর্যাপ্ত ও কার্যকর নীতিমালা, যেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরশীলতার পরিচয় হবে। এই নীতিমালা গ্রহণের পর সেটা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে ই-কমার্সের যে সম্ভাবনা রয়েছে, তা অর্জন করা সম্ভব হবে।
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
খাদ্য উৎপাদন ও বাংলাদেশ
Powered by Froala Editor
খাদ্য উৎপাদনে নীরব বিপ্লব বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে উন্নীত করেছে। কৃষিজমি কমতে থাকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যানুযায়ী, সবজি ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। ধান ও আলু উৎপাদনে যথাক্রমে চতুর্থ ও সপ্তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও দুর্যোগসহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে বাংলাদেশের নাম। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন তিন গুণেরও বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচ গুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে দশ গুণ।
দুই যুগ আগেও দেশের অর্ধেক এলাকায় একটি ও বাকি এলাকায় দুটি ফসল হতো। বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে দুটি ফসল হচ্ছে। সরকারের যুগোপযোগী পরিকল্পনা, পরিশ্রমী কৃষক এবং মেধাবী কৃষিবিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণবিদদের যৌথ প্রয়াসেই এ সাফল্য। আর এভাবেই প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ।
খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্যকে বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কামাল মুজেরী বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণা পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ এখন খাদ্য উৎপাদনে বিশ্বের জন্য উদাহরণ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কৃষির প্রচুর সম্ভাবনা রয়ে গেছে। সেসব সম্ভাবনা ব্যবহার করা প্রয়োজন। কৃষিকে আধুনিকায়ন করতে হবে। একরপ্রতি উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে। ব্যবহার করতে হবে উন্নত প্রযুক্তি। শুধু কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেই চলবে না, কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে হবে। কৃষককে ভর্তুকিসহ উন্নত সার ও বীজের নিশ্চয়তা দিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন দেশে কৃষিভিত্তিক শিল্পের ওপর জোর দেয়া।
প্রাকৃতিক উৎসের মাছে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় : প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে তৃতীয়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা এফএও প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। চীন ও ভারত যথাক্রমে এক ও দুই নম্বর অবস্থানে আছে। দুই বছর আগে প্রাকৃতিক উৎসের মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম। দ্য স্টেট অব ফিশ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার-২০১৮ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে দেখা যায়, চাষের ও প্রাকৃতিক উৎসের মাছ মিলিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন চতুর্থ। চার বছর ধরে বাংলাদেশ এ অবস্থানটি ধরে রেখেছে। আর শুধু চাষের মাছের হিসাবে বাংলাদেশ পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে।
সবজি উৎপাদনে তৃতীয় : দেশে রীতিমতো সবজি বিপ্লব ঘটে গেছে গত এক যুগে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্যমতে, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। এক সময় দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোরেই কেবল সবজির চাষ হতো। এখন দেশের প্রায় সব এলাকায় সারা বছরই সবজির চাষ হচ্ছে। এখন দেশে ৬০ ধরনের ও ২০০টি জাতের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। বর্তমানে ১ কোটি ৬২ লাখ কৃষক পরিবার রয়েছে, এ কৃষক পরিবারগুলোর প্রায় সবাই কমবেশি সবজি চাষ করেন।
ধান উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ : আমন, আউশ ও বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনে বছরে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন উৎপাদনের রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বে গড় উৎপাদনশীলতা প্রায় তিন টন। আর বাংলাদেশে তা ৪ দশমিক ১৫ টন। এফএও’র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ৫৩ লাখ টন ধান উৎপাদন হয়েছে, যা বিশ্বে চতুর্থ। এ সময় ১৪ কোটি ১৩ লাখ টন নিয়ে শীর্ষ রয়েছে চীন। ১১ কোটি ৩৫ লাখ টন নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে ভারত এবং ৪ কোটি ৪৭ লাখ টন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া।
আলু উৎপাদন বিশ্বে সপ্তম : এক দশক আগেও দেশে আলুর উৎপাদন ছিল অর্ধ লাখ টনের নিচে। এখন তা প্রায় এক কোটি টনের কাছাকাছি। এ সাফল্য বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে আলু উৎপাদনকারী শীর্ষ দশ দেশের কাতারে। স্বীকৃতিটি দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। সংস্থাটির তথ্য অনুয়ায়ী, ৮৩ লাখ টন আলু উৎপাদন নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম স্থানে অবস্থান করছে। ৮ কোটি ৮৪ লাখ টন আলু উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষস্থানে রয়েছে চীন। ৪ কোটি ২৩ লাখ টন নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। এরপর রাশিয়া (৩য়), ইউক্রেন (৪র্থ), যুক্তরাষ্ট্র (৫ম), জার্মানি (ষষ্ঠ)। উৎপাদনে বিস্ময়কর সাফল্যই কেবল নয়, আলু এখন দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসলও। মাধ্যম হয়ে উঠেছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও।
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
বাংলাদেশের সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়
Powered by Froala Editor
মানসিক বিকাশ ও নৈতিক চরিত্র গঠনে সামাজিক মূল্যবোধ ও পারিবারিক সুশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। মূলত মায়ের কোলে শিশুর শিক্ষার হাতেখড়ি। পরিবার থেকেই শিশু প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে। ফলে পরিবার মানব সন্তানের প্রথম শিক্ষা নিকেতন। সন্তানের মূল্যবোধ, চরিত্র, চেতনা ও বিশ্বাস জন্ম নেয় পরিবার থেকেই। বাবা-মা যেমন আদর্শ লালন করেন, তাদের সন্তানরাও সেটা ধারণ ও লালন করার চেষ্টা করে। পরিবার হলো প্রেম-প্রীতি ভালোবাসা ও মায়া-মমতায় ভরা এমন একটি সুসজ্জিত বাগানের মতো যেখানে প্রতিটি সদস্য তার চারিত্রিক গুণাবলি বিকশিত করার পর্যাপ্ত সুযোগ পায়। নৈতিক গুণাবলিসমৃদ্ধ হয়ে তারা পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে সুশোভিত ও মোহিত করে। এটা এমন এক নিরাপদ আশ্রয়স্থল যা বাইরের যাবতীয় পঙ্কিলতা ও আক্রমণ থেকে শিশুসন্তানকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম।
Powered by Froala Editor