Powered by Froala Editor
টাকা পয়সাই শুধুমাত্র সংসারে সুখ-শান্তি বয়ে আনতে পারে
Powered by Froala Editor
মানুষ টাকার পেছনে ছুটছে, মানুষ সুখের পেছনে ছুটছে। তাহলে কি 'টাকা' 'সুখের' সমার্থক? যার টাকা আছে, সেইই কি সুখী? উত্তরটা আসলে আপেক্ষিক এবং পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। জীবনে স্থিতিশীল হওয়ার জন্য, জীবন নির্বাহ করার জন্য টাকা অবশ্যই দরকার।
কথায় আছে, সংসারে অভাব আসলে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়। কথাটা সর্বজনীন সত্যতা না থাকলে অনেকাংশে কথাটা সত্য। নিত্য জীবনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা, সন্তানের চাহিদা পূরণ, সুরক্ষিত জীবন যাপনের জন্য টাকাই মূল। এই জিনিসটি বাদে সংসারের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। ধ্বংসের মুখের পড়ে বাচ্চা ও নিজেদের ভবিষ্যৎ। মানসিক অশান্তিতে ধরা দেয় সংসারে অশান্তি।
সকলেরই স্বপ্ন থাকে একটি সুন্দর জীবনের। যেই জীবনে থাকবে শান্তি। সেই শান্তি কীভাবে আসবে? হয়ত একটি ভালো সংসার, একটি ভালো চাকরি, যেখানে থাকবে না কোন অভাব। এ সব স্বপ্ন পূরণের একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে অর্থ। একটি পরিমিত পরিমাণের অর্থ উপার্জন সংসারে এনে দেয় স্থিতিশীলতা, ভারসাম্য, মানসিক শান্তি এবং সুখ।
তবে একটি কথা আমাদের সকলেরই জানা আছে। অর্থই সকল অনর্থের মূল। এ কথা সত্য যে মানুষ সুখের খোঁজে, শান্তির খোঁজে টাকার পিছনেই দৌড়ায়। অনেকে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে যান। অবৈধ পথে রোজগার করেন। ফলে ধনীরা হয় ধনী, গরিবরা হয় আরও গরিব। কোন এক বিখ্যাত ব্যক্তি বলেছিলেন যে, টাকা আপনাকে মখমলের বিছানা এনে দিতে পারে কিন্তু ঘুম নয়, টাকা আপনাকে লোভনীয় খাবার এনে দিতে পারবে কিন্তু মুখের স্বাদ নয়, টাকা দিয়ে আপনি সবচেয়ে দামী রোবট কিনতে পারবেন কিন্তু মানুষের আসল ভালোবাসা কিনতে পারবেন না। অনেক অভাবী পরিবার দিনের রোজগারে দিনে খেয়ে রাতে শান্তির ঘুম দেয়, অল্প উপার্জনে, অল্প সঞ্চয়ে, অল্প চাহিদায় তারা দিব্যি সুখে জীবন কাটিয়ে দিতে পারে। সেই অভাবের সংসারেও ভালোবাসা থাকে, আনন্দ থাকে। আবার অনেক বড়লোক কিংবা অর্থবিত্ত পরিবারে সুখ থাকে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে মাদকাসক্ত, মানসিক ব্যাধি, সম্পর্কজনিত সমস্যা ইত্যাদি। কিংবা কোন মরণব্যাধি রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায় না। প্রচুর অর্থ খরচ করেও এরকম কিছু সমস্যা থাকেই যেগুলোর সমাধান করা যায় না। আবার অনেকেদের চাহিদা এত বিপুল পরিমাণে থাকে যে যত অর্থ সংসারে আসুক না কেন সেখানে শান্তি আসতে পারে না। হয়তবা কিছুদিন পর পর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তা পূরণের জন্য মানসিক অস্থিরতা লেগে থাকে।
টাকা জীবন ধারণের জন্য অন্যতম প্রধান নিয়ামক। অর্থ ব্যতীত বেঁচে থাকা সম্ভব না। জীবনের প্রায় সকল চাহিদা অর্থ দিয়ে পূরণ করা যায়। তবে সুখ জিনিসটি অর্থ দিয়ে ক্রয় করা যায় না। ক্রয়বিক্রয়ের মাধ্যমে সাময়িক শান্তি পাওয়া যায়, সুখ পাওয়া যায় তবে তা ক্ষণস্থায়ী। সুখ নির্ভর করে নিজের মানসিক চিন্তা ধারার ওপরে। নিজেকে প্রশ্ন করে জানতে হবে যে আমার সকল সুখ কেবল অর্থ এবং অর্থ সংবলিত জিনিসেই সীমাবদ্ধ নাকি তার বাইরের কিছু ও আমাকে সুখী করে? তাহলেই বুঝতে পারা যাবে জীবন ও সংসারে শুধু টাকা সুখ আনতে পারে না কি না।
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
অধৈর্যশীলতাই শহরগুলোতে অসহনীয় যানজটের প্রধান কারণ
Powered by Froala Editor
ধরুণ আপনি এখন বিজয় স্মরণির জ্যামে বসে আছেন, আপনার লক্ষ্য রাস্তা ধরে এগিয়ে বামে মোড় নিয়ে তেজগাঁও রোডে ঢুকে যাওয়া। কিন্তু কিছুদুর এগিয়ে দেখতে পেলেন বামে মোড় নেয়ার স্থানে কয়েকটি গাড়ি সিগন্যালে দাঁড়িয়ে আছে। যার জন্য আপনি যেতে পারছেন না এবং আপনার মত অপেক্ষারত শত শত গাড়ি, যারা অন্য রোডে যাবে তারা সিগন্যালের জন্য দাঁড়িয়ে রইলো।
উপরোক্ত ঘটনায় হয়ত মনে হতে পারে এটি রাস্তার নিয়ম না মানার ফল কিন্তু আমার মতে এটি কতিপয় মানুষের অধৈর্যশীলতার উদাহরণ। ঢাকা শহর কিংবা অন্য ব্যস্ততম শহরগুলোতে রাস্তায় প্রায়শই এমন চিত্র দেখা যায়। মাঝ রাস্তায় বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানো নিত্যদিনের একটি উদাহরণ। কারো হয়ত অত্যন্ত ব্যস্ততা আছে কিংবা কেউ অফিস যেতে দেরি করে ফেলেছেন, তিনি দ্রুত বাস স্টপে না গিয়ে সহজেই রাস্তার সাইডে দাঁড়িয়ে হাত নাড়িয়ে বাসকে থামিয়ে সেটায় উঠে যেতে পারবেন। এর ফলে পিছনে থাকা গাড়িগুলোকে গতি কমিয়ে দিতে হয় অথবা থেমে যেতে হয় এবং এর ফলে কী হয় তা সবারই জানা।
বর্তমান সময়ে আরেকটি জনপ্রিয় যানবাহন হচ্ছে মোটরসাইকেল। প্রবল যানজটের এই যুগে রাস্তার যেকোন পাশ দিয়ে অনায়াসে চলে যেতে পারে এই দ্বিচক্রযান। ২০২১ সালে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিগত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ মোটর সাইকেল বিক্রি বেশি হয়েছে। শুধু যাতায়াত নয়, পেশাগত কারণেও বাড়ছে এর সংখ্যা। কিন্তু রাস্তায় বর্তমানে যানজট সৃষ্টির অন্যতম বড় ভূমিকা পালন করে মোটরসাইকেল। বড় রাস্তায় সিগন্যাল পড়লে দেখা যায়, সাইড দিয়ে মোটর সাইকেলগুলো সারিবদ্ধভাবে চলে যাচ্ছে। কিন্তু সামনে গিয়ে তারা আর যেতে পারেনা ফলে সেখানেই রাস্তা বন্ধ হয়ে একটা জটলা তৈরি হয়ে যায়। এর ফলে অন্য রাস্তা অভিমুখী যানবাহন যেতে না পারায় তৈরি হয় যানজট। মোটরসাইকেল চালকের অধৈর্য্যশীলতা এবং অস্থিতিশীলতার জন্য অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় জনসাধারণের। ঠিক এমনটা ঘটে রিকশাগুলোর ক্ষেত্রেও। এক রিকশা আরেক রিকশার সাথে প্রতিযোগিতা, বারবার লেন পরিবর্তন, নিয়ম না মেনে চালানো কিংবা যত্রতত্র পার্কিং করা, এসকল অস্থিতিশীল কর্মকান্ডের জন্য তৈরি হয় চরম বিশৃঙ্খলা।
যেসকল এলাকায় বা শহরে জনগণের সংখ্যা বেশি, মূলত সেসকল জায়গাগুলোতে যানজটের প্রবণতা দেখা যায়। এতক্ষণ আমরা দেখেছি, রাস্তায় থাকা যানবাহন কীভাবে যানজট সৃষ্টি করতে পারে অস্থিতিশীলতার জন্য। তবে রাস্তায় যারা পথচারী আছেন তাদের অধৈর্য্যশীলতার পরিচয় হরহামেশা পাওয়া যায়। হয়ত কোন ব্যস্ততম রাস্তায় পথচারীদের রাস্তা পার হওয়ার সুবিধার্থে ফুটওভারব্রীজ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে অন্য চিত্র দেখা যায়। ব্যস্ততা হোক কিংবা অন্য কারণ, পথচারীকে বেশিরভাগ সময় ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তার ডিভাইডার ক্রস করে হাত উঁচু করে গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পার হতে দেখা যায়। ঠিক তখনই উচ্চগতিতে চলা গাড়িকে ধীরগতিতে রূপান্তর করে কিংবা থামিয়ে পথচারী পার হওয়ার জন্য জায়গা করে দিতে হয়। যার অধৈর্যশীলতার ফলশ্রুতিতে স্বল্প পরিসর থেকে ভয়াবহ যানজট তৈরি হয়ে যায়।
উন্নত দেশ লন্ডন একটি জনবহুল দেশ হওয়া সত্ত্বেও যানজট নিরসনে তারা সফল। সেই দেশের নাগরিকদের মধ্যে আছে সচেতনতা, আছে অধৈর্য্যশীলতার পরিচয় দিয়ে যানজট সৃষ্টি না করার মানসিকতা। লন্ডনের মত উন্নত দেশগুলোর যানজট নিরসনে সফলতার পেছনের কারণ জানতে গেলে বোঝা যাবে যে যানজট সৃষ্টিতে অধৈর্য্যশীলতা ও অস্থিতিশীলতা কত বড় ভূমিকা পালন করে। মূলত এই কারণ থেকে উঠে আসে রাস্তায় নিয়ম লঙ্ঘন করা, যথেচ্ছা আচরণ করা, ট্রাফিক আইন না মানা সহ বেশিরভাগ কারণ।
বাংলাদেশে সবচেয়ে জনবহুল শহর তার রাজধানী ঢাকা। পরিসংখ্যান বলে, ঢাকা শহরে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১১ ভাগ বসবাস করে। অর্থাৎ ধারণ ক্ষমতার অনেক বেশি মানুষ এই অতিমহানগরীতে। যানজট তৈরি হওয়ার শুরুর কারণ এটি। যখন কোন শহরে ধারণক্ষমতার বেশি মানুষ থাকে, সে তুলনায় রাস্তার স্বল্পতা থাকে তখন একটু অসাবধানতায় রাস্তায় তৈরি হয়ে যায় বড়সড় যানজট। অপরদিকে আরেক গবেষণা বলছে, বিগত বছরের তুলনায় রাস্তায় ৬৭% ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে যা রাস্তার ৪০ শতাংশ জায়গা দখল করে থাকে। একই রাস্তায়, দুইটি প্রাইভেট গাড়ির জায়গায় যখন একটি বাসে ৬০ জন যেতে পারে সেখানে ব্যক্তিগত গাড়িতে যেতে পারছে সর্বোচ্চ ৭-৮ জন মানুষ। জনবহুল এই শহরে এর ফলে তৈরি হচ্ছে অকল্পনীয় যানজট।
ওপরে লন্ডন শহরের উদাহরণ দেয়া আছে। সেই শহরেই পথচারী হাঁটার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ও পরিসরে ফুটপাত। আছে গাড়ি পার্কিং করার নির্দিষ্ট জায়গা এবং বাস থামার জন্য নির্দিষ্ট বাসস্টপেজ। যখন বাংলাদেশের চিত্র কল্পনা করা হয় তখন লক্ষ্য করা যায়, এখানে ফুটপাতে বসে রয়েছে অসংখ্য ভাসমান দোকান, নেই হাঁটার পর্যাপ্ত জায়গা। রাস্তার পাশেই দেখা যায় অনেকাংশ জায়গা জুড়ে পার্ক করা রয়েছে গাড়ি। এসকল কর্মকাণ্ড রোধ করার জন্য নিয়ম আছে, আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ করার উদাহরণ সচরাচর কম দেখা যায়।
শহরাঞ্চলের অসহনীয় যানজট বর্তমানে মানুষ তার জীবনের অংশ হিসেবে মেনে নিয়েছেন। তারা হয়ত টেরই পাচ্ছেন না জীবন থেকে কত মূল্যবান সময় অপচয় হয়ে যাচ্ছে। গবেষকদের মতে, যানজটের কারণে প্রতিদিন প্রায় ৩২লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার মধ্যে আমার আপনার সবার মূল্যবান সময় রয়েছে। কিন্তু যতদিন মানুষ ও ওপরমহল উদাসীনতা, অধৈর্য্যশীলতা, অস্থিতিশীলতা, থেকে বের হয়ে এসে যানজট নিরসনে নিজের অবস্থান হতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ না হচ্ছে ততদিন হয়ত এই দুর্ভোগ জীবনের অনাকাঙ্ক্ষিত অভিশাপ হিসেবে রয়ে যাবে।
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য কি অবলিম্বে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা উচিত
Powered by Froala Editor
"সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য কি অবলিম্বে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা উচিত
এই প্রশ্নের উত্তর সহজ নয়। ছাত্র রাজনীতির ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় দিক রয়েছে।
ইতিবাচক দিক:
ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের গুণাবলী, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করার ক্ষমতা বিকাশে সহায়তা করতে পারে।
ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের দেশ এবং সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন হতে এবং তাদের মতামত প্রকাশ করতে উৎসাহিত করতে পারে।
ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে শিখতে এবং ভবিষ্যতে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করার জন্য প্রস্তুত করতে সহায়তা করতে পারে।
ছাত্র রাজনীতি অনেক জায়গায় বন্ধ রয়েছে। ঢাকা শহরের নামিদামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নেই। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ বলতে সেখানে কোনো ছাত্রলীগ নেই, ছাত্রদল কিংবা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট নেই সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইন করে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে পারে। কিন্তু এর পরিণতি হবে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টিগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে জোড়ালো অবস্থান। আশির দশকে মাসের পর মাস বিশ্ববিদ্যালয় অনির্ধারিত বন্ধ থাকত। ক্যাম্পাসে গোলাগুলিসহ নানা প্রতিকূল অবস্থা থেকে আমরা পরিত্রাণ পেয়েছি। ষাট এবং সত্তর দশকে রাজনীতিতে আদর্শিক একটি বিষয় ছিল। সে সময় গোটা বিশ্ব দুইভাবে বিভক্ত ছিল। একটি ধনবাদী সমাজ ব্যবস্থা। শোষণহীন সমাজ বিনির্মাণসহ নানা মতাদর্শ চর্চা হত। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর থেকে শুরু করে ইরানের ইসলামী বিপ্লব, আফগানিস্তানের তালেবান উত্থান-পতন, আলকায়দা, আইএস ইত্যাদি ছাড়া আদর্শভিত্তিক কোনো আলোচনা আর নেই। ছাত্র রাজনীতিকে উদ্বুদ্ধ করার মত কোনো আদর্শ আমাদের সামনে নেই।
নেতিবাচক দিক:
ছাত্র রাজনীতি সহিংসতা, অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক দলাদলির দিকে পরিচালিত করতে পারে।
ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা থেকে বিরত রাখতে পারে এবং তাদের ক্যারিয়ারের সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে এবং তাদের স্বাধীন চিন্তাভাবনার ক্ষমতাকে সীমিত করতে পারে।রাজনৈতিক বিষয় থাকলেও ছাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত সবার আগে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করা। কিন্তু আসলে তারা নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ক্ষমতার অপব্যবহারে ব্যস্ত থাকে।'সাধারণত শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক কর্মসূচী ও সমাবেশে যোগ দিতে আগ্রহী হয় না। কিন্তু, হলের সিট বাঁচাতে এবং বড় ভাইদের চোখে ভালো থাকতে তারা বাধ্য হয়।
"
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
শুধুমাত্র কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির মাধ্যমে আমাদের জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব
Powered by Froala Editor
বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ দেশ। বাংলাদেশের আবওহাওয়ার জন্য ব্রিটিশরা ভারতবর্ষে এসেছিলো ব্যবসা করতে, লুট করতে। তারা জানত, এই অঞ্চলে চাইলে সোনা ফলানো যাবে। মোট কথা, এই দেশ কৃষি প্রধান দেশ। কিন্তু উন্নয়নের জোয়ারে বাংলাদেশ ক্রমেই শিল্পপ্রধান দেশ হয়ে উঠছে। চলতি বছরের অর্থনৈতিক খাতে কৃষির অবদান ছিলো তাই শিল্পক্ষেত্রের চেয়ে কম। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে কৃষিতে বিনয়োগ কমে যাওয়া। কৃষিতে বিনিয়োগ কেবল খাদ্য নিরাপত্তার উন্নতি এবং টেকসই উন্নতির জন্য সবচেয়ে কার্যকরী কৌশল। এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও অপরিহার্য।
প্রাচীন কৃষি সমাজ থেকে আধুনিক জনসমাজে রূপান্তরিত হওয়ার এই প্রক্রিয়ায় বা আধুনিকায়নে, সনাতন সমাজের কৃষি অর্থনীতি যে অবদান রেখেছে তা নিঃসন্দেহে ধারণা করা যায়। কৃষি খাতের আধুনিকায়ন ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানো ছাড়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন সম্ভব হতো না। কৃষির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সমাজের শিল্পায়ন ও আধুনিকায়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমাজের উন্নয়ন, পরস্পর নিবিড় সম্পর্কিত। তবে ১৯৫০ সালের পর থেকে কৃষি খাতকে অবহেলা করে শিল্পায়নের দিকে মনোযোগ দেয়া হয়। যা সফল ও হয়। কৃষিকাজ করে লোকসানের মুখ দেখা কৃষক তখন শিল্প প্রতিষ্ঠানে অধিক মজুরি পাওয়া শুরু করে। তবে ক্রমেই কৃষিকাজে অবহেলিত ও বঞ্চিত হওয়া কৃষক শ্রমিক হিসেবেও তার ন্যায্য থেকে বঞ্চিত হয়। যার ফলে ধনী আরো ধনী হয় এবং গরীব হয় আরো গরীব।
ক্রমেই গড়ে ওঠা এই পুঁজিবাদ সমাজে সাম্যতা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে কৃষিখাতের অবদান অনস্বিকার্য। কৃষিখাতে দ্রুত উন্নতি সম্ভব কারণ অল্প বিনিয়োগে অধিক লাভ করা যায় যা শিল্পক্ষেত্রে কিছুটা কঠিনই বটে। একারণে বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নতুন করে কৃষি নিয়ে আগানোর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে।
অপরদিকে, শিল্পখাতের উন্নয়নের সম্প্রসারণে বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তবে কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। অধিক বিনিয়োগ, কৃষিকাজের সরঞ্জামের আধুনিকায়ন, কৃষকের প্রাপ্য পাওনা নিশ্চিতকরণ, দূর্নীতি রোধে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে কৃষিখাতের অবদান বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে অধিক প্রতিপন্ন হবে।
তবে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে বাংলাদেশকে পরিকল্পিত পরিবর্তন আনতে হবে সকল ক্ষেত্রে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এখন উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, পরিবহন, কৃষি এবং নির্মাণ-এই পাঁচ খাতের অবদান ৬৭ শতাংশ। এছাড়া পোশাক শিল্প থেকে আসে জিডিপির একটি বড় অংশ। তুলনামূলক পিছিয়ে রয়েছে সেবা খাত। এই খাতেও উন্নয়ন প্রয়োজন। অপরদিকে কৃষিখাত অবদান রাখছে ১০ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ কৃষিখাতে উন্নয়নের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে যার অবদান কমপক্ষে ২০ শতাংশ পার হয়ে যাবে।
বলা যায়, লোশন, শ্যাম্পু, ঘড়ি ছাড়া মানুষ একদিন বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু খাদ্য ছাড়া একদিন ও না। এই মৌলিক চাহিদা পূরণে যখন বাংলাদেশের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে তখন দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে কৃষিখাতের ভূমিকা সবার আগে থাকা উচিত।
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
কর্মজীবী মা শিশুর মানসিক বিকাশের প্রধান বাঁধা
Powered by Froala Editor
পক্ষে
● শিশুর ৯৫ শতাংশ বিকাশ ঘটে মাতৃগর্ভে; বাকি ৫ শতাংশ বিকাশ সম্পন্ন হয় জন্মের ৫ বছরের মধ্যে। বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় মানসিক ও সামাজিক বিকাশ আজীবন চলতে থাকে। জাতিসংঘের ১৯৮৯ সালের শিশু অধিকার কনভেনশন (সিআরসি) অনুসারে, ‘১৮ বছরের কম বয়সী সব মানুষই শিশু।’ এ সময়ে শিশু পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে শিখে যায়। একজন কর্মজীবী মা সন্তানকে সেই পরিমাণ সময় দিতে পারে না; যতটা একজন গৃহিণী মা দিতে পারেন।
● শিশুর বেড়ে ওঠায় মা-বাবার ভূমিকা অনস্বীকার্য, বিশেষ করে মায়ের। কর্মজীবী মা-বাবার সন্তানরা একাকী বেড়ে ওঠে, হয়ে ওঠে নিঃসঙ্গ, সময় কাটে চুপচাপ পরিবেশে। সঙ্গী হয় মোবাইলে গেমস খেলা, টিভিতে কার্টুন দেখা আর খেলনার সঙ্গে। এসব ভার্চুয়াল উপকরণনির্ভর জীবনযাপনে শিশুরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
● সন্তানরা শিখবে শুধু মায়ের কাছ থেকে। সেই মা-ই যদি কর্মজীবী হয়, তবে সন্তানরা কার কাছ থেকে শিখবে? কে খেয়াল রাখবে সন্তানদের ও পরিবারের?
● জীবনের বিভিন্ন জটিলতা যেমন দায়িত্ব পালনে ব্যার্থতার ভয়, সন্তানের চিন্তা, সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা, কর্মক্ষেত্রে জটিলতা একজন কর্মজীবী মা’কে মানসিকভাবে দূর্বল করে দেয়।
● ২০১৬ সালে পরিচালিত চাইল্ড ওয়েল কিং সার্ভে ও এমআইসিএসের তথ্যে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের শহরে বস্তির শিশুদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ধীরে ধীরে গ্রামের শিশুদের চেয়ে খারাপের দিকে যাচ্ছে। এর পেছনে বড় একটি কারন হচ্ছে দীর্ঘ সময় ধরে মায়েদের শিশুদের কাছ থেকে দূরে থাকা।
বিপক্ষে
● কর্মজীবী হলেও অনেক মা শিশুর চাহিদা মেটাতে সক্ষম। তারা সচেতন মা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।
● আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক কর্মজীবী মা বাসা থেকেই শিশুর যত্ন নিতে সক্ষম।
● দক্ষ শিশু দেখভালকারী নিয়োগ করে কর্মজীবী মায়েরা শিশুর যত্ন নিশ্চিত করতে পারেন।
● কর্মজীবী মায়েরা শিশুদের আর্থিকভাবে স্বাধীন করে তুলতে পারেন যা তাদের মানসিক উন্নয়নে সহায়ক।
শিশুর প্রারম্ভিক যত্ন ও বিকাশকে অগ্রাধিকার দেয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার একটি জাতীয় নীতিমালা তৈরি করেছে। নীতিমালার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা দরকার। নীতিমালার সফল বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং তার জন্য বিনিয়োগ করা প্রয়োজন, যা বিভিন্ন খাতের সমন্বয় ও পর্যাপ্ত তহবিল সংগ্রহের মাধ্যমে করা সম্ভব। বিনিয়োগের সদিচ্ছা না থাকলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়বে একটা অপেক্ষাকৃত তরুণ জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও।
Powered by Froala Editor
মাস্তানদের প্রতহত করার জন্য আইন প্রয়োগই যথেষ্ট নয়
উক্তির পক্ষে যুক্তি
মাস্তানরা হল এমন ব্যক্তি যারা শক্তি, ভয় দেখানো বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে অন্যদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে। তারা সাধারণত অপরাধমূলক কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকে, যেমন চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অপহরণ, খুন ইত্যাদি। মাস্তানদের প্রতিরোধ করার জন্য আইন প্রয়োগের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি মাস্তানদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদেরকে শাস্তি দিতে পারে। এছাড়াও, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি মাস্তানদের আস্তানা ও কার্যকলাপের উপর নজরদারি করে তাদেরকে প্রতিহত করতে পারে। সভ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। সর্বপ্রকার অসভ্য ও অনৈতিক কাজ দমনে সরকারকে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌম ক্ষমতাকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। কারণ এর ওপরই জনকল্যাণ নির্ভর করে। কেবল আইন প্রণয়ন করলেই চলবে না, সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
এজন্য রাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ, এমনকি নির্মম হতে হবে। সপ্তদশ শতাব্দীর দার্শনিক টমাস হব্সের ভাষায় বলতে গেলে ‘লেভিয়াথান’ হতে হবে। লেভিয়াথান অর্থ বৃহৎ ভয়ংকর এক দানব। হব্স বিশ্বাস করতেন, রাষ্ট্রীয় শক্তি কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে ক্রমেই দেশ প্রকৃতির রাজ্যে রূপান্তরিত হতে পারে। বর্তমানে এ দেশে ধর্ষণসহ ভয়ংকর সব অপরাধ দমনে রাষ্ট্র ও সরকারের ‘লেভিয়াথান’ হওয়ার বিকল্প আছে বলে মনে হয় না। তবে তা অবশ্যই ন্যায়ের স্বার্থে, জনকল্যাণের স্বার্থে।
উক্তির বিপক্ষে যুক্তি
আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মাস্তানদের প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন প্রয়োজন। মাস্তানদের প্রতিরোধ করার জন্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা । মাস্তানি একটি সামাজিক সমস্যা। মাস্তানদের উৎপত্তি হয় দারিদ্র্য, বেকারত্ব, শিক্ষার অভাব, সামাজিক বৈষম্য ইত্যাদি কারণে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন প্রয়োজন। সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, শিক্ষার অভাব, সামাজিক বৈষম্য ইত্যাদি সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। এতে মাস্তানির মতো সমস্যাও কমে যাবে। সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষকে সহিংসতা, অপরাধমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সচেতন করা সম্ভব। এতে মাস্তানির মতো সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিশোর গ্যাং বা মাদক নির্মুলে সমাজিক ভাবে নানা কর্মসূচীর সাথে সাথে ক্রীড়া চর্চা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বেশি করে আয়োজন করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের একাডেমিক ক্যালেন্ডারে সারাবছরব্যাপি এসব কর্মসূচী আয়োজন করতে হবে। তবেই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম এসব অসঙ্গতি থেকে সরে আসবে। আমাদের মনে রাখতে হবে অপরাধ নির্মুলে শুধু আইন প্রয়োগই যথেস্ট নয়। তাদের যথাযথ মোটিভেশন প্রয়োজন। কারণ একজন কিশোর বা মাদক ব্যবসায়ী জেল বা সংশোধনাগার থেকে বের হলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ঘটনা খুবই কম দেখা যায়।
যুবসমাজের অবক্ষয়ের জন্য সমাজব্যবস্থাই দায়ী
গত ৮ অক্টোবর ঢাকার হাজারীবাগে ১০ তলা ভবন থেকে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। মীর জাওয়াদ বিন জসিম নামের ওই শিক্ষার্থী ঢাবির উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষে পড়তেন। শুধু একজন জাওয়াদ নয়, জানা গেছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত গড়ে ৪৫ দশমিক ১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এত আত্মহত্যার কারণ কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর কারণ সমাজের স্রোতের সাথে তাল মিলাতে না পারা, সামাজিক চাপ মোকাবিলা না করতে পারা, অসুস্থ প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।
অবক্ষয় শব্দটির অর্থ কী? ক্ষয়প্রাপ্তি, নিম্নগতি, বিনাশ। যুবসমাজের ক্ষয়প্রাপ্তি ঘটছে, হচ্ছে বিনাশ। যার একটা ছোট উদাহরণ দেয়া হয়েছে। ছোট উদাহরণ এজন্য বলছি যে, যারা আত্মহত্যা করে ফেলেছে তাদের সংখ্যা গণনা করা যায় কিন্তু যারা প্রতিনিয়ত নিজেদের সাথে যুদ্ধ করে চলেছে কিংবা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েও এগোতে পারছে না তাদের সঠিক সংখ্যা গণনা করা সম্ভব নয়। তবুও পরিসংখ্যান বলছে, প্রায়ই ৫০ শতাংশ তরুণ-তরুণী মানসিক অবসাদে ভোগে ও একবার হলেও তারা আত্মহত্যার কথা ভেবেছে। তাহলে সমাজ ব্যবস্থা এই তরুণ সমাজের অবক্ষয়ের জন্য কীভাবে দায়ী?
বর্তমান বিশ্ব দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। প্রযুক্তির এই যুগে উন্নত বিশ্বের সাথে সমান গতিতে এগিয়ে চলতে গেলে আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে চিন্তাধারায়, পরিবর্তন করতে হবে পুরানো ঘুণে ধরা নিয়ম। আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীরা যখন প্রযুক্তির কল্যাণে কিংবা আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য নিজেদের পরিবর্তিত করতে চাচ্ছে তখনই বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে আমাদের সমাজের পুরানো মতধারা, গৎ বাঁধা নিয়ম ও কুসংস্কার। এর সাথে অন্যমাত্রায় যোগ হয়েছে প্রজন্মগত ব্যবধান। একুশ শতকে পৃথিবীতে হয়েছে অনেক পরিবর্তন, হয়েছে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, পৃথিবী এসেছে হাতের মুঠোয়। সমাজের প্রবীণ ব্যক্তিগণ এখনো অনেকেই সেই উন্নয়নের সাথে পুরোপুরি পরিচিত হতে পারেননি। কিংবা মেনে নিতে পারেনি আধুনিকায়ন। অনেকের চোখে এই আধুনিকায়ন সার্বিক অবক্ষয়। এই মতবিরোধের দোলাচালে পড়ে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যুবক-যুবতীরা। তারা এগোতে পারেছেনা। শুরুতেই তাদের সামনে দিয়ে দেয়া হচ্ছে নিয়ম ও বিবেকের বেড়িবাঁধ। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মত পার্থক্য, বাক স্বাধীনতায় বাঁধা, বিরোধ, বুঝতে না পারা এনে দিচ্ছে বিষন্নতা।
একজন শিল্পী যখন তার সম্পূর্ণ নিজের ভাবনা রঙ তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলেন তখন তা হয় সর্বশ্রেষ্ঠ, কিন্তু যখনই তাকে অনেক নিয়ম এবং শর্ত দেয়া হয় শিল্পকর্ম সৃষ্টির জন্য তখন তার শৈল্পিক স্বত্বা পুরোপুরি প্রকাশ পায়না। সমাজের যুবক-যুবতীরা প্রত্যেকে একেকজন সম্ভাবনাময় শিল্পী। তারা তাদের নিজেদেরকে প্রকাশ করতে চায়, নতুন কিছু করতে চায়, পরিবর্তন আনতে চায়। তাদের সেই সত্ত্বা প্রকাশে যখন বাঁধা দেয়া হয়, নিয়মের বেড়াজালে আটকে রাখা হয়, তখন তাদের অবক্ষয় ঘটে। এছাড়া দুর্নীতি কবলিত সমাজব্যবস্থা যুবসমাজের উন্নয়ের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। ছোট থেকে শিখে আসা মূল্যবোধের প্রয়োজনীয়তা কিংবা পরিবার থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার প্রতিফলন যখন তারা বাইরের দুনিয়ায় দেখতে পায় না তখন জীবনের প্রতি চলে আসে ঘৃণা, অবজ্ঞা, অবসাদ। এরূপ সমাজব্যবস্থার ঘূর্ণিতে নিজেদের হারিয়ে ফেলছে যুবসমাজ।
বর্তমান সময়ে আত্ম নিয়ন্ত্রণ একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তির আধুনিকতা আমাদের এনে দিয়েছে উন্নয়নের জোয়ার তেমন পরিচয় করিয়ে দিয়েছে অন্ধকার জগতের সাথে। এই সময়ের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আধুনিকতা থেকে ভালো উপকরণ আস্বাদন করে নেয়া। একটি উদাহরণ হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর অত্যাধিক নির্ভর হয়ে পড়া, ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার না জানা। এর ফলে হচ্ছে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সমস্যা, মূল্যবান সময় নষ্ট, নেশা জাতীয় দ্রব্যের প্রতি নির্ভরতা ও সহজলভ্যতা, বই বিমুখীতা, নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকর্ষণ ইত্যাদি। এখানেই আসে আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গ। প্রযুক্তি আমাদের মস্তিষ্ক নিয়ে ক্রমাগত পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। যুবকরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। মস্তিষ্কের এই খেলায় তারা নিজেদের হারিয়ে ফেলছে। তারা বুঝতে পারছে যে তারা ঠিক কাজ করছে না কিন্তু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে তারা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এছাড়া, ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা, চাকরির বাজারে অসুস্থ প্রতিযোগিতা যুবসমাজকে অন্ধকারে ঠেলছে। বর্তমানে অপসংস্কৃতি চর্চা যুবসমাজের অবক্ষয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে। বিশ্ব যখন হাতের মুঠোয়, তখন খুব সহজেই অন্য দেশের সংস্কৃতি চর্চা করা সম্ভব। এবং অপসংস্কৃতি আত্মস্থ করার ফলে যুবসমাজ দ্বিধায় পড়ে যাচ্ছে এবং নিজ দেশের সংস্কৃতির সাথে অন্য দেশের সংস্কৃতির মিশ্রণে তারা নিজেদের মূল হারিয়ে ফেলছে। অবক্ষয়ের আরেকটি কারণ হচ্ছে সুস্থ বিনোদনের অভাব। অত্যাধিক প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ায় যুবসমাজ বাইরে বের হতে পারছে না। তাদের যোগাযোগ দক্ষতা কমে যাচ্ছে, এর ফলে তাদেরকে গ্রাস করছে একাকিত্ব।
যুবসমাজের অবক্ষয় এখন বর্তমানে একটি প্রধান চিন্তার বিষয়। একটি দেশের যুবসমাজ যখন ভেঙে পড়ছে তখন সেই দেশের উন্নতির মাত্রা কমে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে, যুব সমাজের অবক্ষয়ের জন্য সমাজব্যবস্থা দায়ী? নাকি একটি নৈতিক, আদর্শ সমাজ গঠনে যুবসমাজের অবক্ষয় রোধ করা জরুরি? আমার মতে, দু’টিই সঠিক। একটি অপরটির পরিপূরক। একটি দেশের সমাজব্যবস্থা যখন যুবসমাজকে এগিয়ে যেতে বাঁধা দেয় তখন সেই সমাজের আরো অবনতি হয়, দেশের উন্নয়নে বাঁধা আসে। তাই, এসকল সমস্যার প্রতি জোরদার নজর প্রদানের মাধ্যমে এবং সমাজের সকলের সুষ্ঠু পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশকে, এই যুবসমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব।
নিরাপত্তাহীনতাই বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের অবনতির কারণ
পক্ষে
● নিরাপত্তাহীনতা পর্যটন শিল্পের অবনতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। পর্যটকরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হলে তারা কোনও দেশে ভ্রমণ করতে চায় না। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক সহিংসতা, অপরাধপ্রবণতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারণে নিরাপত্তা সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যাগুলো পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বাধা দেয়।
● নিরাপত্তাহীনতার কারণে পর্যটকরা বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। তারা চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, ধর্ষণ, খুন ইত্যাদির শিকার হতে পারে। এছাড়াও, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পর্যটকদের মৃত্যু, আহত হওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে।
● নিরাপত্তাহীনতার কারণে পর্যটন শিল্পের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। পর্যটকদের সংখ্যা কমে গেলে পর্যটন শিল্পের আয় কমে যায়। এতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান ইত্যাদির ক্ষতি হয়।
বিপক্ষে
নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের অবনতির জন্য অন্যান্য কারণও রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
● পর্যটন শিল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাব।
● পর্যটন শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তির অভাব।
● পর্যটন শিল্পের প্রচার-প্রচারণার অভাব।
● পর্যটন শিল্পের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশের অভাব।
মতামত
নিরাপত্তাহীনতা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের অবনতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তবে, এটি একমাত্র কারণ নয়। অন্যান্য কারণগুলোও পর্যটন শিল্পের অবনতি ঘটাতে ভূমিকা পালন করে।
নিরাপত্তাহীনতা সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরের মানুষের সচেতনতা ও সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকারকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, সামাজিক সহিংসতা দমন, অপরাধপ্রবণতা কমানো, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা ইত্যাদি পদক্ষেপ নিতে হবে। সমাজের সকল স্তরের মানুষকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করতে হবে। এছাড়াও, পর্যটন শিল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি তৈরি, প্রচার-প্রচারণা ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয় প্রয়োজন। নিরাপত্তাহীনতা সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি অন্যান্য কারণগুলোও সমাধান করা হলে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের উন্নতি সম্ভব।
Powered by Froala Editor
অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা নারী সমাজের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়
Powered by Froala Editor
পক্ষে
● অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বহুমুখী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
● অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর পরিবারগুলিতে মেয়েদের শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয় করার সুযোগ কম থাকে। এর ফলে মেয়েদের শিক্ষার হার কম হয় এবং তারা কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
● অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে নারীরা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে পিছিয়ে পড়ে। এর ফলে তারা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হয় এবং তাদের জীবনযাত্রার মান হ্রাস পায়।
● অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর পরিবারগুলিতে মেয়েদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কম থাকে। এর ফলে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হতে পারে না এবং তাদের সামাজিক অবস্থান দুর্বল থাকে।
● অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর নারীরা রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এর ফলে তারা তাদের অধিকার রক্ষার জন্য সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না।
● অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর নারীরা সামাজিক অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এর ফলে তারা সমাজের উন্নয়নে তাদের সম্ভাব্য অবদান রাখতে পারে না।
● অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা নারী সমাজের উন্নয়নের প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করে।
● অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীলতা নারীদের ক্ষমতায়নে বাধা সৃষ্টি করে। তাদের জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা সীমিত থাকে।
● অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে নারীরা কম উপার্জনের কাজে নিবদ্ধ থাকেন যা তাদের ক্ষমতায়নে বাধা সৃষ্টি করে।
● অর্থাভাব নারী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ সীমিত করে। শিক্ষার অভাব তাদের ক্ষমতায়নে বড় বাধা।
● অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকায় নারীরা নিজেদের জন্য স্বাস্থ্য, পোষণ বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয়তা মেটাতে ব্যর্থ হয়।
বিপক্ষে
● অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা নারী সমাজের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হলেও, এটি একমাত্র অন্তরায় নয়। নারী সমাজের উন্নয়নের জন্য অন্যান্য অন্তরায়গুলিও দূর করা প্রয়োজন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
● সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কারণে নারীদের উপর বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। এর ফলে নারীদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হয়।
● পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের উপর পুরুষদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। এর ফলে নারীদের স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়ন সীমিত থাকে।
● যুদ্ধ ও সহিংসতা নারীদের জীবন ও সম্পদকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে নারীদের উন্নয়নের সুযোগ কমে যায়।
● সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কারণে নারীদের উপর বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। এর ফলে নারীদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা দূর করা হলেও, লিঙ্গ বৈষম্য থাকলে নারীরা পুরুষদের সমতুল্য সুযোগ-সুবিধা পাবে না।
● পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের উপর পুরুষদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। এর ফলে নারীদের স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়ন সীমিত থাকে। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা দূর করা হলেও, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা থাকলে নারীরা পুরুষদের সমতুল্য অধিকার পাবে না।
যুদ্ধ ও সহিংসতা নারীদের জীবন ও সম্পদকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে নারীদের উন্নয়নের সুযোগ কমে যায়। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা দূর করা হলেও, যুদ্ধ ও সহিংসতা থাকলে নারীরা উন্নতি করতে পারবে না।
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
মেট্রোরেলই ঢাকা শহরের যানজট নিরসনের একমাত্র সমাধান
Powered by Froala Editor
২০১৬ সালের ২৬ জুন এমআরটি-৬ প্রকল্পের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে শুরু হয় স্বপ্নের ঢাকা মেট্রোর নির্মাণকাজের সূচনা। নকশাগত ত্রুটি, কোভিড মহামারি, হোলি আর্টিজান হামলায় জাপানি প্রকৌশলীদের মৃত্যুসহ বিভিন্ন কারণে কয়েক দফা পিছিয়েছে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ। নানা কারণে বেড়েছে নির্মাণ ব্যয়ও। অবশেষে বহু প্রতিক্ষার পরে ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ সালে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। তবে তা ছিলো আংশিক, পরবর্তীতে মিরপুর, উত্তরার সকল স্টেশন এবং ২০২৩ এর অক্টোবরে মতিঝিল স্টেশন চালু করা হয়।
ঢাকা শহরের অসহনীয় যানজট সম্পর্কে আমরা সকলে অবগত। ঢাকা মহানগরে যানজট-শাসন-ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়, ২০০৪ সালে ঢাকার রাস্তায় প্রতি ঘণ্টায় গাড়ির গতিসীমা ছিল গড়ে ২১ দশমিক ২ কিলোমিটার, ২০১৬ সালে তা ঘণ্টায় ৬ দশমিক ৮ কিলোমিটারে এসে দাঁড়ায়। দিনের পর দিন যেন আরো বেড়ে চলেছে যানজটের প্রকট। যানজট মোকাবিলায় তৈরি হয়েছে বাইপাস, এক্সপ্রেসওয়ে, উড়াল সড়ক। তবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের দরকার ছিলো মেট্রোরেলের। আধুনিক বিশ্বের প্রায় সকল দেশে এই যানটি বিদ্যমান। দ্রুতগতি ও দ্রুতসময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য এর বিকল্প কম। মিরপুর থেকে মতিঝিল যেতে যেখানে ২ ঘণ্টা কিংবা তার বেশি সময় লাগত, সেখানে মেট্রোরেল দিয়ে সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান গণামাধ্যমকে বলেন, ঢাকার মতো একটি জনবহুল শহরে মেট্রোরেল ছাড়া যানজটের তেমন কোনো সমাধান নেই। বক্তব্যটি যুক্তিযুক্ত।
বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। দেশের প্রধান প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং শিল্প, উন্নত কর্মসংস্থান, বাসস্থান, শিক্ষা ঢাকা কেন্দ্রিক হওয়ায় জীবনের এক পর্যায় উন্নত জীবনযাপনের লক্ষ্যে প্রায় সবাইকেই ঢাকায় আসতে হয়। সুতরাং ধারণক্ষমতার অনেক বেশি জনসংখ্যা ঢাকায়। তারওপর রাস্তায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা। পরিসংখ্যান বলছে বিগত বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে ঢাকার রাস্তায়। যানজট তৈরির জন্য যা একটি আশংকাজনক কারণ। এমতাবস্থায় বিকল্প পন্থা অবলম্বন করা ছাড়া উপায় থাকে না। এই বিকল্প পন্থা হচ্ছে মেট্রোরেল। যা একটি যানজটমুক্ত দ্রুত গতির যাতায়াত সমাধান। স্বাভাবিকভাবে জনসংখার বিরাট একটি অংশ মেট্রোরেল ভ্রমণ করলে রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের যানজট কমে যাবে। প্রতিদিন মেট্রোতে যাতায়াত করতে পারে প্রায় ৬ লাখ মানুষ। যা ২০৫১ সালে ১৩ লাখে পৌঁছে যাবে।
তবে মেট্রোরেল ঢাকাবাসীদের আশার কথা শুনালেও তা ঠিক কতটা আশা পূরণ করতে পারছে তা ভাবার বিষয়। তবে কি বহু প্রতিক্ষিত মেট্রোরেল আমাদের এত ভোগান্তির সমাধান করতে পারবে না? উত্তর হ্যাঁ কিংবা না দেয়ার আগে জেনে নেয়া দরকার ঢাকা শহরের এত জ্যামের কারণ কী কী এবং কতগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। ঢাকা শহরের যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এর অধিক জনসংখ্যা। অপরদিকে ঢাকা শহর বিকেন্দ্রীকরণ হ্রাস একটি বড় কারণ যা আগেই বলা হয়েছে। অপরদিকে রাজধানীর অসহনীয় যানজটের আরেকটি বড় কারণ শহরটির দুর্বল পরিবহন ব্যবস্থাপনা ও যোগাযোগ অবকাঠামো। ঢাকার রাস্তা যে পরিমাণ গাড়ি ধারণে সক্ষম, তার চেয়ে ৩০-৪০ শতাংশ বেশি গাড়ি চলে। আবার যানজটের একটি বড় কারণ হলো সড়কের সংস্কার ও উন্নয়নের কাজ যথাসময়ে ও সঠিকভাবে সম্পন্ন না হওয়া। এর ফলে পরিবেশ ও জনজীবন ব্যবস্থা দু’টিরই ক্ষতি হয়।
উপরে যেকয়টি কারণ বলা হয়েছে সেগুলো যানজটের অন্যতম কারণ। এখন যদি বলা হয়ে এইসব সমস্যার একমাত্র সমাধান কি মেট্রোরেল? উত্তর সম্ভবত না বোধকই হবে। যতদিন রাজধানীর এই বড় বড় সমস্যার সমাধান না হচ্ছে ততদিন মেট্রোরেলে অর্ধেকাংশ যাত্রী উঠলেও যানজটের সমস্যার সমাধান হবেনা। অন্যদিকে, বর্তমানে মেট্রোরেল যে রুটে যাত্রা করছে সেসকল রুটের বাইরের স্থানে মেট্রোরেল না থাকায় যানজট কমছে না। মেট্রোরেলে যাত্রা করেও অনেককে আবার গন্তব্যে পৌঁছাতে সাধারণ যানবাহন ব্যবহার করতে হচ্ছে। অপরদিকে শহরের একটা বড় অংশজুড়ে আছে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত আয়ের মানুষ। দৈনিক মেট্রোরেলের ভাড়া তাদের জন্য বহন করা বেশ কষ্টেরই বটে। সুতরাং তাদের জন্য মেট্রোরেল ঠিক কতটা স্বস্তির খবর নিয়ে আসে সেটা চিন্তার বিষয়।
সকল আলোচনা-সমালোচনা থেকে বোঝা যায় মেট্রোরেল যানজট নিরসনের অন্যতম সমাধান হতে পারে তবে তা সঠিক অনুসন্ধান, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পদক্ষেপ নেয়ার পর।
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব
Powered by Froala Editor
বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ দেশ। বাংলাদেশের আবওহাওয়ার জন্য ব্রিটিশরা ভারতবর্ষে এসেছিলো ব্যবসা করতে, লুট করতে। তারা জানত, এই অঞ্চলে চাইলে সোনা ফলানো যাবে। মোট কথা, এই দেশ কৃষি প্রধান দেশ। কিন্তু উন্নয়নের জোয়ারে বাংলাদেশ ক্রমেই শিল্পপ্রধান দেশ হয়ে উঠছে। চলতি বছরের অর্থনৈতিক খাতে কৃষির অবদান ছিলো তাই শিল্পক্ষেত্রের চেয়ে কম। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে কৃষিতে বিনয়োগ কমে যাওয়া। কৃষিতে বিনিয়োগ কেবল খাদ্য নিরাপত্তার উন্নতি এবং টেকসই উন্নতির জন্য সবচেয়ে কার্যকরী কৌশল। এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও অপরিহার্য।
প্রাচীন কৃষি সমাজ থেকে আধুনিক জনসমাজে রূপান্তরিত হওয়ার এই প্রক্রিয়ায় বা আধুনিকায়নে, সনাতন সমাজের কৃষি অর্থনীতি যে অবদান রেখেছে তা নিঃসন্দেহে ধারণা করা যায়। কৃষি খাতের আধুনিকায়ন ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানো ছাড়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন সম্ভব হতো না। কৃষির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সমাজের শিল্পায়ন ও আধুনিকায়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমাজের উন্নয়ন, পরস্পর নিবিড় সম্পর্কিত। তবে ১৯৫০ সালের পর থেকে কৃষি খাতকে অবহেলা করে শিল্পায়নের দিকে মনোযোগ দেয়া হয়। যা সফল ও হয়। কৃষিকাজ করে লোকসানের মুখ দেখা কৃষক তখন শিল্প প্রতিষ্ঠানে অধিক মজুরি পাওয়া শুরু করে। তবে ক্রমেই কৃষিকাজে অবহেলিত ও বঞ্চিত হওয়া কৃষক শ্রমিক হিসেবেও তার ন্যায্য থেকে বঞ্চিত হয়। যার ফলে ধনী আরো ধনী হয় এবং গরীব হয় আরো গরীব।
ক্রমেই গড়ে ওঠা এই পুঁজিবাদ সমাজে সাম্যতা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে কৃষিখাতের অবদান অনস্বিকার্য। কৃষিখাতে দ্রুত উন্নতি সম্ভব কারণ অল্প বিনিয়োগে অধিক লাভ করা যায় যা শিল্পক্ষেত্রে কিছুটা কঠিনই বটে। একারণে বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নতুন করে কৃষি নিয়ে আগানোর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে।
অপরদিকে, শিল্পখাতের উন্নয়নের সম্প্রসারণে বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তবে কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। অধিক বিনিয়োগ, কৃষিকাজের সরঞ্জামের আধুনিকায়ন, কৃষকের প্রাপ্য পাওনা নিশ্চিতকরণ, দূর্নীতি রোধে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে কৃষিখাতের অবদান বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে অধিক প্রতিপন্ন হবে।
তবে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে বাংলাদেশকে পরিকল্পিত পরিবর্তন আনতে হবে সকল ক্ষেত্রে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এখন উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, পরিবহন, কৃষি এবং নির্মাণ-এই পাঁচ খাতের অবদান ৬৭ শতাংশ। এছাড়া পোশাক শিল্প থেকে আসে জিডিপির একটি বড় অংশ। তুলনামূলক পিছিয়ে রয়েছে সেবা খাত। এই খাতেও উন্নয়ন প্রয়োজন। অপরদিকে কৃষিখাত অবদান রাখছে ১০ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ কৃষিখাতে উন্নয়নের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে যার অবদান কমপক্ষে ২০ শতাংশ পার হয়ে যাবে।
বলা যায়, লোশন, শ্যাম্পু, ঘড়ি ছাড়া মানুষ একদিন বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু খাদ্য ছাড়া একদিন ও না। এই মৌলিক চাহিদা পূরণে যখন বাংলাদেশের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে তখন দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে কৃষিখাতের ভূমিকা সবার আগে থাকা উচিত।
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
জেষ্ঠ্যতার অভিজ্ঞতা নয়, তারুণ্যের শক্তিই উন্নয়নের প্রভাবক
Powered by Froala Editor
পক্ষে যুক্তি:
● তারুণ্য হল জীবনের একটি সময় যখন মানুষ নতুন জিনিস শিখতে এবং নতুন ধারণা তৈরি করতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। তারা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি উৎসাহী।
● তারুণ্য হল জীবনের একটি সময় যখন মানুষ সবচেয়ে বেশি শক্তি ও উদ্যম রাখে। তারা নতুন লক্ষ্য অর্জনের জন্য সবচেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী।
● তারুণ্য হল জীবনের একটি সময় যখন মানুষ নতুন আশা ও স্বপ্ন দেখে। তারা একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য কাজ করতে সবচেয়ে বেশি উদ্বুদ্ধ।
● বয়স্করা তাদের জীবনে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়। এই অভিজ্ঞতা থেকে তারা অনেক কিছু শিখে এবং জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উপায় শিখে। এই অভিজ্ঞতা তাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
● তরুণরা সাধারণত নতুন ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসে। এই নতুন ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
● তরুণরা সাধারণত উদ্যোগী ও সাহসী হয়। এই উদ্যোগ ও সাহস উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
● তরুণরা সাধারণত পরিবর্তনের প্রবণতা রাখে। এই পরিবর্তনের প্রবণতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
● তারুণ্য হল শক্তি ও উদ্ভাবনের প্রতীক। তারুণ্যরা নতুন ধারণা, নতুন পদ্ধতি ও নতুন সমাধান নিয়ে আসে। তারা পুরনো ধারণা ও পদ্ধতিকে চ্যালেঞ্জ করে নতুনত্বের পথ তৈরি করে।
● তারুণ্য পরিবর্তনের প্রেরণা। তারা সমাজের সমস্যাগুলিকে সমাধান করার জন্য উদ্যমী হয়। তারা নতুনত্বের মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন আনতে চায়।
● তারুণ্য আত্মবিশ্বাস ও সাহসী। তারা নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে ভয় পায় না। তারা তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য দৃঢ়সংকল্প।
বিপক্ষে যুক্তি:
● জেষ্ঠ্যতা হল জীবনের একটি সময় যখন মানুষ অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এই অভিজ্ঞতা তাদেরকে সমস্যা সমাধানে এবং নতুন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাহায্য করে।
● জেষ্ঠ্যতা হল জীবনের একটি সময় যখন মানুষ অনেক জ্ঞান অর্জন করে। এই জ্ঞান তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে এবং সঠিক পথ বেছে নিতে সাহায্য করে।
● জেষ্ঠ্যতা হল জীবনের একটি সময় যখন মানুষ নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করে। এই গুণাবলী তাদেরকে অন্যদেরকে অনুপ্রাণিত করতে এবং একটি লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করতে সাহায্য করে।
● বয়স্করা সাধারণত তারুণ্যের তুলনায় বেশি জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে। এই জ্ঞান ও দক্ষতা তাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
● বয়স্করা সাধারণত তারুণ্যের তুলনায় বেশি নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করে। এই নেতৃত্বের গুণাবলী তাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
● জেষ্ঠ্যরা অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান সমৃদ্ধ। তারা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এই অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান তারা তারুণ্যদের সাথে শেয়ার করতে পারে।
● জেষ্ঠ্যরা নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা প্রদান করতে পারে। তারা তারুণ্যদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে।
● জেষ্ঠ্যরা স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্য প্রদান করতে পারে। তারা তারুণ্যদেরকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করতে পারে।
জেষ্ঠ্যতার অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের শক্তি উভয়ই উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জেষ্ঠ্যদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান উন্নয়নের পথকে সুগম করে। অন্যদিকে, তারুণ্যের শক্তি ও উদ্ভাবন উন্নয়নকে গতিশীল করে। উভয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করা সম্ভব। উন্নয়নের প্রভাবক হিসেবে জেষ্ঠ্যতার অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের শক্তি উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জেষ্ঠ্যতার অভিজ্ঞতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করে, অন্যদিকে তারুণ্যের শক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রে গতিশীলতা ও পরিবর্তনকে নিশ্চিত করে। উভয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব।একটি দেশের উন্নয়নের জন্য তারুণ্যের শক্তি গুরুত্বপূর্ণ। তারুণ্য হল উদ্ভাবনের সময়। তারা নতুন জিনিস শিখতে এবং নতুন ধারণা তৈরি করতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। তারা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি উৎসাহী। তবে, উন্নয়নের জন্য জেষ্ঠ্যতার অভিজ্ঞতাও গুরুত্বপূর্ণ। জেষ্ঠ্যতা হল অভিজ্ঞতার সময়। তারা অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এই অভিজ্ঞতা তাদেরকে সমস্যা সমাধানে এবং নতুন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাহায্য করে। জেষ্ঠ্যতা হল জ্ঞানের সময়। তারা অনেক জ্ঞান অর্জন করে। এই জ্ঞান তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে এবং সঠিক পথ বেছে নিতে সাহায্য করে। জেষ্ঠ্যতা হল নেতৃত্বের সময়। তারা নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করে। এই গুণাবলী তাদেরকে অন্যদেরকে অনুপ্রাণিত করতে এবং একটি লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। সুতরাং, একটি দেশের উন্নয়নের জন্য তারুণ্যের শক্তি এবং জেষ্ঠ্যতার অভিজ্ঞতা উভয়ের সমন্বয় প্রয়োজন।
Powered by Froala Editor
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু, তবে ধর্মান্ধ নয়
উক্তির পক্ষে যুক্তি
বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের কিছু উদাহরণ -
বাংলাদেশের মানুষ প্রতিদিন নামাজ পড়ে। তারা রমজান মাসে রোজা রাখে এবং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উদযাপন করে। বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষকে সম্মান করে। তারা বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব পালন করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পহেলা বৈশাখ, দুর্গাপূজা, বড়দিন, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। তারা মনে করে যে, ধর্ম শান্তি ও সম্প্রীতির প্রচার করার জন্য ব্যবহার করা উচিত। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় রীতিনীতি ও অনুষ্ঠান পালনে অত্যন্ত ভক্তিশীল। তারা ধর্মীয় স্থানগুলোতে গিয়ে প্রার্থনা করে।
এই যুক্তিগুলো থেকে বোঝা যায় যে, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু হলেও তারা ধর্মান্ধ নয়। তারা ধর্মের গুরুত্বকে বুঝে এবং ধর্মের শিক্ষাকে অনুসরণ করে নৈতিক ও সুশীল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে চায়।
উক্তির বিপক্ষে যুক্তি
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু হলেও তারা ধর্মান্ধ নয় এই উক্তির বিপক্ষে কিছু যুক্তিও রয়েছে।
বাংলাদেশে ধর্মের নামে সহিংসতা ও অন্যায়ের ঘটনা ঘটেছে। যেমন হিন্দুদের উপর হামলা, বৌদ্ধ মন্দির ভাঙচুর, বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি।
বাংলাদেশের কিছু ধর্মীয় নেতা ধর্মের নামে সহিংসতা ও বিভাজনের প্রচার করে থাকেন।
এই যুক্তিগুলো থেকে বোঝা যায় যে, বাংলাদেশের মানুষ সবসময় ধর্মভীরুতা ও ধর্মান্ধতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে না। কিছু ক্ষেত্রে তারা ধর্মের নামে সহিংসতা ও অন্যায়ের সাথে জড়িত হয়।
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু, তবে ধর্মান্ধ নয় এই উক্তিটি মোটামুটি সঠিক। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মের গুরুত্বকে বুঝে এবং ধর্মের শিক্ষাকে অনুসরণ করে নৈতিক ও সুশীল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে চায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে তারা ধর্মের নামে সহিংসতা ও অন্যায়ের সাথে জড়িত হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করা প্রয়োজন। ধর্মীয় নেতা ও শিক্ষকদেরকে ধর্মের নামে সহিংসতা ও বিভাজনের প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচির মাধ্যমে ধর্মীয় সহনশীলতা ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। দেশের ৯০% এরও বেশি মানুষ মুসলিম। মুসলমানদের পাশাপাশি এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা বাস করে। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় রীতিনীতি ও অনুষ্ঠান পালনে অত্যন্ত ভক্তিশীল। তারা ধর্মীয় উৎসবগুলোকে অত্যন্ত আনন্দের সাথে উদযাপন করে। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু হলেও তারা ধর্মান্ধ নয়। তারা ধর্মের নামে সহিংসতা বা অন্যায়ের সাথে জড়িত হয় না। তারা ধর্মের শিক্ষাকে শান্তি, সম্প্রীতি ও সহনশীলতার প্রচার করার জন্য ব্যবহার করে।
সমুদ্র সম্পদের ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে খনিজ সম্পদের সীমিত ব্যবহার করা সম্ভব
পক্ষে
● সমুদ্র সম্পদের ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে খনিজ সম্পদের সীমিত ব্যবহার করা সম্ভব। সমুদ্র খনিজ সম্পদের একটি বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে তেল, গ্যাস, খনিজ, এবং ধাতু। এই সম্পদগুলিকে খনন এবং ব্যবহার করার জন্য নতুন প্রযুক্তিগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে উন্নত হচ্ছে।সমুদ্র তেল এবং গ্যাসের বিশ্বের বৃহত্তম উৎস।
● ২০২০ সালে, বিশ্বের মোট তেলের উৎপাদনের প্রায় ৩০% এবং গ্যাসের উৎপাদনের প্রায় ৩০% সমুদ্র থেকে এসেছে। সমুদ্র প্রচুর পরিমাণে খনিজ ধারণ করে, যার মধ্যে রয়েছে তামা, লোহা, ম্যাঙ্গানিজ, এবং নিকেলের মতো ধাতু। এই খনিজগুলি বিদ্যুৎ উৎপাদন, নির্মাণ, এবং অন্যান্য শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্র প্রচুর পরিমাণে ধাতু ধারণ করে, যার মধ্যে রয়েছে সোনা, রূপা, প্ল্যাটিনাম, এবং প্যালেডিয়ামের মতো মূল্যবান ধাতু। এই ধাতুগুলি বৈদ্যুতিন, গহনা, এবং অন্যান্য শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
● সমুদ্র সম্পদের ব্যবহার বৃদ্ধি করা খনিজ সম্পদের উপর নির্ভরতা হ্রাস করার একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। তবে, সমুদ্র সম্পদ পরিবেশের জন্য সম্ভাব্য হুমকিও সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তেল ও গ্যাসের খনন তেল ছড়িয়ে পড়ার কারণ হতে পারে, যা পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। খনিজ ও ধাতু উত্তোলনও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সমুদ্র ও এর সম্পদকে কতভাবে ও কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে বিভিন্ন দেশে চলছে গবেষণা ও কর্মযজ্ঞ।
● ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিশ্বের বিভিন্ন উপকূলীয় দেশ ও দ্বীপের সরকারগুলো অর্থনীতির এক নতুন ক্ষেত্র হিসেবে সমুদ্রের দিকে নজর দিচ্ছে এবং ব্লু ইকোনমির ওপর নির্ভর করে দেশের প্রবৃদ্ধি নীতি গ্রহণ করেছে। ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি এখন সমুদ্র অর্থনীতির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। খাদ্য, খনিজ, জ্বালানি ও ওষুধের কাঁচামালের উৎস হিসেবে সমুদ্রের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের মতো দেশগুলো বহু বছর ধরে সামুদ্রিক অর্থনীতির ওপর নির্ভর করে আসছে। চীনে সমুদ্র অর্থনীতির টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। এগুলো হলো সমুদ্র কৌশলকে জাতীয় কৌশল হিসেবে গড়ে তোলা, জমি ও সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, সামুদ্রিক সম্পদ বিকাশে অত্যাধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার, সামুদ্রিক পরিবেশের জন্য উপযুক্ত আইন প্রণয়ন এবং সমুদ্র রক্ষার নতুন ধারণা তৈরি করা। বাংলাদেশও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারে।
বিপক্ষে
● সমুদ্র সম্পদ পরিবেশের জন্য সম্ভাব্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। তেল ও গ্যাসের খনন তেল ছড়িয়ে পড়ার কারণ হতে পারে, যা পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। খনিজ ও ধাতু উত্তোলনও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সমুদ্র সম্পদগুলি খনিজ সম্পদের বিকল্প হিসাবে সীমিতভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
● সমুদ্র খনিজ সম্পদের একটি বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে, তবে এই সম্পদগুলি সবসময় খনন করা সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ, কিছু খনিজ সম্পদ সমুদ্রের গভীরতম অংশে অবস্থিত, যেখানে এগুলি খনন করা খুব ব্যয়বহুল বা প্রযুক্তিগতভাবে অসম্ভব। সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে খনিজ সম্পদের উপর নির্ভরতা হ্রাস করা যেতে পারে, তবে এটি সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা সম্ভব নয়। খনিজ সম্পদগুলি এখনও অনেক শিল্পের জন্য অপরিহার্য, এবং সমুদ্র সম্পদগুলি এই চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে না।
● সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের সম্ভাব্য সুবিধা এবং ঝুঁকিগুলি বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। টেকসই উপায়ে সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার করা সম্ভব, তবে এটি করার জন্য সতর্ক পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন প্রয়োজন। তেল ও গ্যাসের খনন তেল ছড়িয়ে পড়ার কারণ হতে পারে, যা পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ২০১০ সালের মেক্সিকো উপসাগরের তেল ছড়িয়ে পড়ার প্রায় ২০০ মিলিয়ন গ্যালন তেল ছড়িয়ে পড়েছিল, যা মেক্সিকো উপসাগরের পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। খনিজ ও ধাতু উত্তোলনও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। খনিজ ও ধাতু উত্তোলন প্রায়শই জল দূষণ, মাটি দূষণ, এবং বায়ু দূষণের কারণ হয়। সমুদ্র সম্পদগুলি সবসময় খনন করা সম্ভব নয়। কিছু খনিজ সম্পদ সমুদ্রের গভীরতম অংশে অবস্থিত, যেখানে এগুলি খনন করা খুব ব্যয়বহুল বা প্রযুক্তিগতভাবে অসম্ভব। সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে খনিজ সম্পদের উপর নির্ভরতা হ্রাস করা যেতে পারে, তবে এটি সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা সম্ভব নয়। খনিজ সম্পদগুলি এখনও অনেক শিল্পের জন্য অপরিহার্য, এবং সমুদ্র সম্পদগুলি এই চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে না।
সমুদ্র সম্পদের ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে খনিজ সম্পদের সীমিত ব্যবহার করা সম্ভব। তবে, এই প্রক্রিয়াটিতে পরিবেশগত ঝুঁকি রয়েছে এবং সমুদ্র সম্পদগুলি সবসময় খনন করা সম্ভব নয়। সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের সম্ভাব্য সুবিধা এবং ঝুঁকিগুলি বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।
পুথিগত বিদ্যার উপর নির্ভরশীলাতাই বেকারত্বের অন্যতম কারণ
পক্ষে যুক্তিগুলো হল:
● অনেকেই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেও কর্মসংস্থান পায় না। কারণ তারা বাস্তব জীবনের চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে না। তারা শুধুমাত্র পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান অর্জন করে।
● পুথিগত বিদ্যা অর্থাৎ শুধুমাত্র বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করলে বাস্তব জীবনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না।
● পুথিগত বিদ্যার উপর নির্ভরশীলাতা শিক্ষার্থীদেরকে বাস্তবমুখী করে গড়ে তোলে না।
● পুথিগত বিদ্যা গ্রামীণ এলাকায় বেকারত্বের প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব হল শহরাঞ্চলে অভিবাসন। যাদের বেশিরভাগই তরুণ এবং অবিবাহিত এবং তাদের টার্গেট করা শহর ঢাকা।
বিপক্ষে যুক্তিগুলো হল:
● পুথিগত বিদ্যা মানুষের জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করে। এটি মানুষের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
● পুথিগত বিদ্যা বেকারত্বের একমাত্র কারণ নয়। অন্যান্য কারণগুলোও বেকারত্ব ঘটাতে ভূমিকা পালন করে।
● পুথিগত বিদ্যার পাশাপাশি বাস্তব জীবনের চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন। এজন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা জরুরি।
● অর্থনৈতিক মন্দা দূর করা, শিল্পায়নকে উৎসাহিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারের উদ্যোগ বৃদ্ধি করা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি দূর করা হলে বেকারত্ব কমানো সম্ভব।
মোটকথা, পুথিগত বিদ্যার উপর নির্ভরশীলাতা বেকারত্বের অন্যতম কারণ। তবে, এটি একমাত্র কারণ নয়। অন্যান্য কারণগুলোও বেকারত্ব ঘটাতে ভূমিকা পালন করে। পুথিগত বিদ্যার পাশাপাশি বাস্তব জীবনের চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন। এজন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা জরুরি। অর্থনৈতিক মন্দা দূর করা, শিল্পায়নকে উৎসাহিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারের উদ্যোগ বৃদ্ধি করা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি দূর করা হলে বেকারত্ব কমানো সম্ভব। পুথিগত বিদ্যার উপর নির্ভরশীলতা কমাতে শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জনের জন্য উৎসাহিত করা প্রয়োজন। এছাড়াও, অর্থনৈতিক মন্দা, শিল্পায়নের অভাব, শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির অভাব দূর করার জন্য সরকার ও সমাজের সকল স্তরের মানুষের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
Powered by Froala Editor
শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য পরিবারের চেয়ে কি পরিবেশের ভূমিকাই বেশি?
Powered by Froala Editor
পক্ষে
● পরিবেশের ভূমিকা বিতার্কিক শিশুর সঠিক বিকাশে অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরা তাদের চারপাশের পরিবেশ থেকে অনেক কিছু শেখায়। তারা তাদের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক, এবং অন্যান্যদের কাছ থেকে শিখতে পারে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত যে শিশুর শারীরিক বিকাশের মতো মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে তার জীবনের প্রথম বছরগুলো।
● যে শিশুটি জীবনের প্রথম সাত-আট বছর তার বিকাশের জন্য সহায়ক পরিবেশ পায়, সে অন্য শিশুদের (যারা সহায়ক পরিবেশ পায়নি) চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান, সামাজিক ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়। তার কথা বলার দক্ষতা, সামাজিক দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস প্রভৃতির বিকাশ ঘটে, যা পরবর্তী জীবনে তাকে সুখী ও সুন্দর থাকতে সহায়তা করে। শিশুরা জীবনের প্রথম বছরগুলো পরিবারের সঙ্গেই কাটায়। পরবর্তী সময়ে স্কুল, শিক্ষক, খেলার সাথি যুক্ত হয়ে শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। বর্তমানে স্কুল বয়সি শিশুরাও গৃহবন্দি অবস্থায় সময় কাটাচ্ছে। আমরা একটু সচেতন হয়ে শিশুদের বিভিন্ন কাজে, খেলায় নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে তাদের সময়টা আরো উপভোগ্য করে তুলতে পারি।
● শিশুর সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য বয়স অনুযায়ী কী বলতে হবে, কী কী করতে হবে, কোন কাজ কীভাবে করতে হবে—এগুলো জানা জরুরি। এমন কিছু কথা আছে যেগুলো শিশুর সঙ্গে বললে তার মেধা, বুদ্ধি, বোঝার ক্ষমতা অনেক গুণ বৃদ্ধি পায় এবং তা পরবর্তী শিক্ষাজীবনে সহায়ক হয়; আবার অনেক কথা ও কাজ, যা আমরা সচরাচর শিশুদের বলি বা তাদের সঙ্গে করে থাকি, যেগুলো শিশুদের হতাশা, ক্ষোভ ও মানসিক বিপর্যয়ের কারণ হয়।
বিপক্ষে
● নরম কাদা মাটিসদৃশ শিশুরা শৈশবে যে পরিবেশে বেড়ে ওঠে, তার প্রভাব তার জীবনে স্থায়ী হয়ে যায়। এ কারণে পরিবার হচ্ছে শিশুর প্রথম বিদ্যালয়। প্রতিদিন মা-বাবার ঝগড়ার প্রত্যক্ষদর্শী অনেক শিশুর মধ্যে পরবর্তীকালে ব্যক্তিত্বের অস্বাভাবিকতাও দেখা যায়। সমাজে মানিয়ে চলতে অসুবিধা হয় তাদের। গর্ভকালে যেসব মা নির্যাতনের শিকার হন অথবা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকেন, তাঁদের সন্তানও জন্মের পর নানা জটিলতায় ভোগে।
● নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই মেডিক্যাল সেন্টারের ট্রমাটিক স্ট্রেস স্টাডিজ বিভাগে সম্পন্ন এক গবেষণায় দেখা যায়, মাতৃগর্ভে থাকার সময় যাদের মা মানসিক আঘাতের শিকার হয়েছিলেন, সেই শিশুরা সহজেই মানসিক চাপে ভেঙে পড়ে এবং তাদের মধ্যে অ্যাংজাইটি বা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিস-অর্ডার হওয়ার আশঙ্কা বেশি। ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পারিবারিক কলহের মধ্যে বেড়ে ওঠা অথবা মাকে নির্যাতিত হতে দেখা শিশুদের জীবনের প্রথম দিকের বছরগুলোতে তারা হয় বিশেষভাবে অরক্ষিত ও অসহায়। এসব শিশু পরবর্তীকালে হিংস্র, ঝুঁকিপূর্ণ বা অপরাধমূলক আচরণ করতে পারে। বিষণ্নতা বা তীব্র দুশ্চিন্তায় ভোগার ঝুঁকিতেও পড়তে পারে এসব শিশু।’ শিশুর মানসিক বিকাশে মা-বাবার ভালোবাসা ও সান্নিধ্যের কোনো বিকল্প নেই।
● পরিবারে মাকে নির্যাতিত হতে দেখলে শিশু নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। শিশুর মা-বাবার বন্ধুত্বপূর্ণ ও মধুর সম্পর্ক শিশুর মধ্যে পরম সুখ ও নিরাপত্তাবোধ জাগায়। বাবাকেও তাই শিশুর মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখতে হবে। ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টারের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ইশরাত শারমীন রহমান বলেন, ‘পারিবারিক নির্যাতন দেখে বেড়ে ওঠা শিশুরা এমন ধারণা নিয়ে বেড়ে ওঠে যে অন্যকে আঘাত করা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। সে যে কাউকে আঘাত করতে পারে। আবার সেও অন্যের কাছ থেকে আঘাত পেতে পারে। তাই বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই তাদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।’
পরিবেশ এবং পরিবার উভয়ই শিশুর সঠিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিবেশ শিশুকে বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। পরিবার শিশুর মৌলিক দক্ষতা, মূল্যবোধ, এবং আত্মবিশ্বাস গঠন করে। পরিবেশের ভূমিকা শিশুর বিকাশে বেশি হতে পারে, কারণ শিশুরা পরিবারের বাইরে বেশি সময় ব্যয় করে এবং বিভিন্ন ধরনের মানুষকে দেখে এবং তাদের কাছ থেকে শিখে। তবে, পরিবারের ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। পরিবার শিশুর প্রথম স্কুল এবং শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
অপরিকল্পিত নগরায়নই কি ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার কারণ?
Powered by Froala Editor
অপরিকল্পিত নগরায়নই রাজধানীর জলাবদ্ধতার মূল কারণ
অধিক বৃষ্টিপাতের ফলে ঢাকার নানা স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট আকারে দৃশ্যমান হয় এবং গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়। মূলত রাজধানীর বৃষ্টির পানি ঢাকা ওয়াসার খাল এবং নর্দমার লাইনের মাধ্যমে নদীতে পৌঁছানোর কথা থাকলেও নর্দমার পানি চলাচলে বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে । ফলে ভারী বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা ঢাকাবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী এবং যাতায়াতের পথে জীবন্ত মরণফাঁদ। এ কারণে প্রায়শই রিকশা, ভ্যান, সিএনজি, প্রাইভেট কার অতিরিক্ত জলাবদ্ধতার মধ্যে ম্যানহোলের গর্তে পড়ে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটছে।
রাজধানী ঢাকা বিশ্বের অন্যতম জনবহুল মেগা সিটি। ঢাকা মহানগরের জনসংখ্যা অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে ফলে শহরটি তাদের অভ্যন্তরীণ সংস্থান এবং ব্যবস্থাপনার সীমাবদ্ধতার কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নাগরিক সুবিধা মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে জলাবদ্ধতার মতো হাজারো সমস্যা নাগরিক জীবনকে বিষিয়ে তুলছে। দিনে মশা রাতে মাছি, এ নিয়ে ঢাকায় আছি- এটি ঢাকাবাসীর পুরোনো দিনের প্রবাদ। ঠিক তেমনিভাবে বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা ঢাকাবাসীর নিত্যদুর্ভোগের সাথী। এ থেকে যেন নিস্তার নেই, দিনকে দিন এ সমস্যা আরো প্রকট হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকা শহরে বর্ষার সময় (মে থেকে অক্টোবর) পানি দূষণ, যানজট, বায়ু ও শব্দদূষণ, বর্জ্য নিষ্কাশন, কালো ধোঁয়া ইত্যাদির মতো জলাবদ্ধতাও সাধারণ ও নিয়মিত সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। এই জলাবদ্ধতা ঢাকা শহরে যদিও মুষলধারে ঝড় বৃষ্টিপাতের কারণে ঘটে এবং এ কারণে বেশ কয়েক দিন ধরে রাস্তাঘাট ডুবে থাকে।
বর্ষাকালে ঢাকা শহরে ভারীবর্ষণ হয়, কারণ এটি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের বিস্তৃত প্লাবনভূমিতে অবস্থিত। কিন্তু অপরিকল্পিত নগর উন্নয়ন কার্যক্রম এবং দ্রুত জনসংখ্যার বৃদ্ধির কারণে জলাধারগুলোতে এবং প্রাকৃতিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সামান্য হেরফের বা কোনো যত্ন না থাকায় প্রাকৃতিক পয়ঃনিষ্কাশন পথগুলোতে নগরীর জলপ্রবাহ সঠিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে না এবং এ কারণে সেসব জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তাই শহরের বিভিন্ন অংশ বেশ কয়েক দিন ধরে জলাবদ্ধ হয়ে থাকায় সংশ্লিষ্ট এলাকাটিকে সম্পূর্ণ অচল করে দিচ্ছে। অনিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নগরবাসীর সচেতনতার অভাবে ঢাকার বেশিরভাগ ড্রেনগুলো ভারী বর্জ্য এবং প্লাস্টিকের আবর্জনায় আবদ্ধ। এই জলাবদ্ধতা ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের জন্য বিরাট বোঝা এবং বৈরী সামাজিক, শারীরিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব তৈরি করে। নির্মম সত্য হচ্ছে ঢাকা শহরজুড়ে ৬৫টি প্রাকৃতিক খাল ছিল, কিন্তু বর্তমানে এ সংখ্যা মাত্র ২৬, কারণ তাদের বেশিরভাগই আবর্জনায় ভরপুর ও অবৈধ দখলদারদের দখলে। নগরটি এমনভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে যাতে পানি ব্যবস্থাপনার কোনো পরিকল্পিত সংযোগ বিবেচনা করা হয়নি। বর্তমানে এর কোনো সুষ্ঠু ও যথাযথ কোনো স্বল্পমেয়াদি প্রতিকারও নেই। এ মেগা-সিটিতে উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে প্রাকৃতিক সংযোগগুলো এরই মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে উঠেছে এবং এটিকে একটি কংক্রিট জঙ্গলে পরিণত করা হয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন সমস্যা সৃষ্টি করেছে, কারণ ঢাকার মোট ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৩৩০ বর্গকিলোমিটার এরই মধ্যে ঘরবাড়ি, জলের প্রবাহের পথে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এখন সমস্যার ক্ষেত্রগুলো যদি সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খোঁজা হয়, তবে সঠিক সমাধান খুব কঠিন নয়। বক্স কালভার্টগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পানি খুব ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয়- সম্ভবত স্বাভাবিক প্রবাহের গতির পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ হতে পারে। জলাবদ্ধতা মোকাবিলার জন্য জনসেবা সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, সমন্বয় এবং জনসচেতনতা বাড়াতে প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিতে হবে। দিন দিন এই শহরে আগমনকারী জনসংখ্যা উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে; কিন্তু সে হারে পরিকল্পিত নাগরিক সুবিধা বাড়ছে না। অধিক জনসংখ্যা এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন পদ্ধতির জন্য পুরো নগর জীবনে নেমে আসছে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব। যেমন- পরিবেশ দূষণ, বাসস্থান ও খাদ্যের অভাব, পরিবহন সংকট, যানবাহন সংকট ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র অভাব, বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়া।
জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি এবং অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে অনেক বড় বড় শহরের সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা বর্তমানে সংশ্লিষ্ট নগর কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। সুতরাং স্থায়ী জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার কার্যকর পরিচালনা এবং টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য সংশ্লিষ্ট নগর কর্তৃপক্ষ এবং সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, সমন্বয় এবং সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।
ঢাকা মহানগরীতে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ছাড়াও সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকা, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, জলাভূমি, নিম্নাঞ্চল, খাল ও নদী ভরাট ও দখল, খাল ও নালা-নর্দমা আবর্জনায় ভরাট এবং নিয়মিত পরিষ্কার না করা, সংস্থাগুলোর দায়িত্বে অবহেলা, সমন্বয়হীনতা, জনসচেতনতার অভাব রাজধানীর জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ।নগরীতে যতগুলো প্রাকৃতিক খাল আছে তার অনেকাংশ দখল ও ভরাট হওয়ার কারণে বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারছে না। জলাশয় ও ডোবা বৃষ্টির পানির আধার হিসেবে কাজ করে থাকে। অবৈধভাবে অনেক জলাশয় ভরে সেখানে ঘরবাড়ি, আবাসন প্রকল্প, অফিস ভবন অথবা শপিংমল করা হয়েছে। ঢাকা অতিদ্রুত নগরায়ণের ফলে বৃষ্টির পানির সব অংশই নর্দমা ও প্রাকৃতিক খালের মধ্যে যাচ্ছে এবং মাটির নিচে তেমন পানির প্রবাহ যেতে পারছে না।কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে ময়লা-আবর্জনায় নর্দমা ও প্রাকৃতিক খাল ভরাট হয়ে বৃষ্টির পানি প্রবাহের ক্ষমতা অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত একাধিক সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্নয়হীনতা এ সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।ঢাকা মহানগরীতে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, জলাভূমি, নিম্নাঞ্চল, খাল ও নদী ভরাট ও দখল, খাল ও নালা-নর্দমা আবর্জনায় ভরাট এবং নিয়মিত পরিষ্কার না করা, সংস্থাগুলোর দায়িত্বে অবহেলা, সমন্বয়হীনতা, জনসচেতনতার অভাব রাজধানীর জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ।
Powered by Froala Editor
Powered by Froala Editor
দারিদ্র্য নয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই দুর্নীতির প্রধান কারণ
Powered by Froala Editor
পক্ষেঃ
বাংলায় একটি কথা আছে, যে যত বেশি পায়, সে তত বেশি চায়। বাংলাদেশের দুর্নীতির অন্যতম প্রধান জায়গা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা খাত। দুর্নীতিগ্রস্ত সেবকের নিকট যেকোন ক্ষেত্রে কাজ হাসিল করতে পকেট থেকে দুই-চার পয়সা বের করলেই নিমিষে কাজ হয়ে যায়। এই কাজে যারা জড়িত তাদের নিকট টাকার পরিমাণ কম থাকে না, তবুও টাকার লোভ তাদের সততা, বিবেক, মনুষ্যত্বকে আস্তরণ দিয়ে ঢেকে রাখে।
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যেমন স্বার্থপরতা, অনিয়ন্ত্রিত আকাঙ্ক্ষা এবং অন্যায়ের প্রতি সহনশীলতা দুর্নীতির জন্য অন্যতম প্রধান কারণ। এই বৈশিষ্ট্যগুলির অধিকারী ব্যক্তিরা দুর্নীতির জন্য আরও বেশি প্রকট হতে পারে, কারণ তারা অনৈতিক কাজগুলো করার সময় বিপরীতপাশে থাকা মানুষগুলোর কথা চিন্তা করে না। অবৈধ পথে রোজকার করার স্বাদ একবার পেয়ে গেলে তা থেকে বেরিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব বটে।
বাংলাদেশের দুর্নীতি কবলিত দেশগুলোর মধ্যে ১২ তম হওয়ার পেছনে দেশের রাঘব বোয়ালদের হাত বেশি। তার একটি বড় উদাহরণ অর্থ পাচার। দারিদ্রকে দুর্নীতির হাতিয়ার করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করে যাচ্ছে ক্ষমতার অপব্যবহার করা এক গোষ্ঠী। এছাড়া বিভিন্ন চাকরি নিয়োগ প্রক্রিয়া, গুরুত্বপূর্ণ কাজে প্রাইভেট ও সরকারি প্রায় সকল ক্ষেত্রেই দুর্নীতির চিত্র অহরহ দেখা যায়। নীতি নৈতিকতাহীন এসকল মানুষকে সঠিক পথে আনতে শুধু সামাজিক মূল্যবোধই নয়, দরকার যথাযথ আইন প্রয়োগের সুবব্যবস্থা।
বিপক্ষেঃ
দারিদ্র্য দুর্নীতির অন্যতম কারণ হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, দারিদ্র্য মানুষকে দুর্নীতির দিকে ঠেলে দেয়। দারিদ্র্যগ্রস্ত মানুষ প্রায়ই তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে সংগ্রাম করে। তারা সচরাচর এমন পরিস্থিতিতে থাকে যেখানে তাদের জীবন বা জীবিকার জন্য দুর্নীতিতে জড়িত হতে হয়।
বাংলাদেশে প্রায় ৪০% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এখনো সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা তাদের অধিকার কিংবা চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করতে পারছেনা। কারণ বাংলাদেশে সরকারের সম্পদ এবং সুযোগ-সুবিধাগুলি প্রায়ই সঠিকভাবে বিতরণ করা হয় না। এই অবব্যস্থাপনা দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করে, কারণ যারা ক্ষমতায় রয়েছে তারা তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যক্তিগত লাভের জন্য সম্পদ এবং সুযোগ-সুবিধাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে।
দুর্নীতির জন্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। দারিদ্র্য একটি দেশ বা সমাজের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামোকে দুর্বল করে দেয়। দরিদ্রতাই এক সময় গিয়ে চারিত্রিক অবনতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়।
Powered by Froala Editor