Before ISSB

অনেক টপ ক্লাস স্কুল কলেজ ছাড়া গ্রীন কার্ড দেওয়া হয় না। সমস্যাটা  কোথায় হয় গ্রামের স্কুল কলেজে স্টুডেন্টদের মধ্যে অফিসার হওয়ার মতো পার্সোনালিটি ডেভলপ হয় না দেখে নাকি যাদের হয় তাদের ঠিকই নিয়ে ফেলে ?

অফিসার লাইক কোয়ালিটিস যে কারও মধ্যে থাকতে পারে সে গ্রামের কলেজ থেকে হোক কিংবা শহরের স্বনামধন্য কলেজের। আইএসএসবি ক্যান্ডিডেটের আচরণ, ব্যক্তিত্ব, চিন্তাধারা, আইডিওলজি, বুদ্ধিমত্তা, ভাষাগত দক্ষতা, নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কখনোই তার ব্যাকগ্রাউন্ডকে নয়

আইএসএসবি ক্যান্ডিডেটকে তার পারফরমেন্স দ্বারা বিচার বিশ্লেষণ করে থাকে তার পরিচয় দ্বারা নয়।

কোচিং তো অনেকেই করে,  আইএসএসবি তাদেরকেও গ্রীন কার্ড দিয়ে থাকে। তাহলে কোচিং করার উদ্দেশ্য কী ? আইএসএসবি কি চায় ? আইএসএসবি আবার কোচিং না করতে নিরুৎসাহিত করে কেনো ?

কোচিং করাটা ব্যক্তির ব্যক্তিগত ব্যাপার। কোচিং করেও গ্রীন কার্ড পেয়ে থাকে ; কোচিং না করেও গ্রীন কার্ড পেয়ে থাকে। কোচিং মূলত একজন ক্যান্ডিডেটকে প্র্যাকটিস করার ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ দিয়ে থাকে। কোনও কোচিং ১০০% প্রোপার গাইডলাইন  দিতে পারে না। আইএসএসবি এমন একজন ক্যান্ডিডেটকে চায় যার মধ্যে পটেনশিয়াল লিডারশিপ গুণাবলি নিহিত রয়েছে। যে ছেলে/মেয়ের মধ্যে পটেনশিয়াল লিডারশিপ গুণাবলি নিহিত রয়েছে সে কোচিং করেও গ্রীন কার্ড পায় কিংবা না করেও পেয়ে থাকে। আর এই গুণাবলীগুলো কেউ কেউ জন্মগত বা পরিবার কিংবা পারিপার্শ্বিক পরিবেশ কতৃক পেয়ে থাকে। আবার কেউবা নিজেকে মডিফাই করে থাকে। লিডারশিপ গুণাবলি আমরা কখনোই অপরকে অনুসরণ করে আয়ত্ত করতে পারবো না সে যতই গ্রীন কার্ড হোল্ডার বা উচ্চ পদস্থ অফিসার হোক না কেন। আমরা নিজেকে আত্নশুদ্ধি ও মডিফাই করে তা অর্জন করতে পারি। 

আইএসএসবি কোচিং করা থেকে বিরত থাকতে বলে কারণ অনেকসময় খুব কোয়ালিফাইড, সুপ্ত প্রতিভা ও লিডারশিপ গুণাবলির ধারককৃত ক্যান্ডিডেটরা ভুল গাইডলাইন দ্বারা নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখতে পারে না। আবার কেউবা নিজের স্বকীয়তা গোপন করে  আর্টিফিশিয়াল ক্যারেক্টার তৈরি করে অফিসার হওয়ার  ব্যর্থ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে অর্থাৎ নিজের স্বকীয় সত্তাকে লুকিয়ে ফেলে যা নিজেকে মিসগাইড করার মত বলে বিবেচনা করা হয়।

কোচিং করলে আইএসএসবিতে প্রকাশ করা উচিত? কি কি এসপেক্ট শেয়ার করবো ?

কোচিং করে থাকলে অবশ্যই স্বীকার করিবেন। ক্যান্ডিডেটের পারফরম্যান্স দ্বারা সাইকোলজিস্ট, ডিপি ও জিটিও জাজ করতে পারে কোন কোন ক্যান্ডিডেট কোচিং

করে আসছে। তাই স্বীকার করাটাই উত্তম. কোচিং থেকে যা যা শিখেছেন সেগুলোই শেয়ার করবেন। আর একটু বৃহৎ দৃষ্টিত চিন্তা করেন। এসব নিয়ে প্যারা খাওয়ার কিছু নেই।

অফিসারের ছেলে হলে এমনি নিয়ে ফেলে এতো কিছু দেখে না ?

আইএসএসবি সবাইকে সমানভাবে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। অফিসারের ছেলে হলে আর তার মধ্যে কোয়ালিটিস না থাকলে গ্রীন কার্ড দিয়ে দিবে বিষয়টি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন।

ডিপি/জিটিও কি ডাইনিং রুমে বসে থাকে?

নাহ‌। ডাইনিং রুমে শুধু স্টাফরা খাবার পরিবেশন ও প্রদানের দায়িত্ব পালন করে থাকে। তবে ডাইনিং রুমে সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হয়ে থাকে ।

নামাজের সময় মসজিদে ডিপি স্যারকে দেখা যায়?

ডেপুটি প্রেসিডেন্ট  নামাজ পড়ে থাকলে ওনাকে দেখতে পাবেন।

ডিপি/জিটিওদের দেখলে সালাম দিবো নামাজের সময়?

শরিয়াহ অনুযায়ী নামাজের সময় সালাম দেওয়া ও জবাব দেওয়া নিষিদ্ধ। মসজিদে ওনাদের পাশে আপনি বসে থাকলে নামাজ শুরু হওয়ার আগে সেক্ষেত্রে আপনি সালাম দিতে পারবেন।

আইএসএসবিতে নাকি গোপন ক্যামেরাও দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয়?

জ্বী আপনি আইএসএসবি গেট দিয়ে প্রবেশ করা থেকে বের হওয়া পর্যন্ত দৃশ্যমান ও গোপন ক্যামেরা দ্বারা ক্যান্ডিডেটদের প্রত্যেক মুহুর্তের মুভমেন্ট সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হয়ে থাকে।

ডরমিটরিতেও কি গোপন সাউন্ড সিস্টেম লাগানো থাকে যা দিয়ে আমাকে মনিটর করে?

হ্যা। সিক্রেট ইলেকট্রনিক সাউন্ড  সিস্টেম রয়েছে

চামচ দিয়ে খাওয়া কি বাধ্যতামূলক?

চামচ দিয়ে খাওয়া ভদ্রতা এবং সৌজন্যতার আওতাভুক্ত। আইএসএসবিতে চামচ দিয়ে খাওয়া উচিত।

আমার আগের কিছু এচিভমেন্টের সার্টিফিকেট আইএসএসবি দেখবে না?

আপনার অর্জনকৃত  সহ - পাঠক্রম সংক্রান্ত কার্যক্রমের সার্টিফিকেট নিয়ে যাওয়া উচিত। যদিও আইএসএসবি তা সচরাচর দেখে না।

ধূমপান করে অথচ আইএসএসবি তে স্বীকার করেও গ্রীন কার্ড পেয়েছে। তাহলে আইএসএসবি কি ধূমপান করাটাকে নেতিবাচকভাবে দেখে না?

আইএসএসবি সততাকে সবসময় প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আপনার যেসব নেতিবাচক দিক রয়েছে সেগুলো স্বীকার করা বুদ্ধিমানের কাজ। ধূমপান সামরিক বাহিনীতে স্বাভাবিকভাবেই দেখা হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে শুধুমাত্র ধূমপানের জন্য অফিসারদের আলাদা করে প্রতি মাসে ভাতা প্রদান করে থাকে। এর মানে এই নয় যে তারা ধুমপান প্রোমোট করছে। ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। 

কিছু ক্যান্ডিডেটের খারাপ উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও তারা গ্রীন কার্ড পায় কিভাবে?

আমরা সকলেই মানুষ। আমরা কেউ ভুল ভ্রান্তির উর্ধ্বে নই। সকলের মাঝে মাঝেই কিছু না কিছু খারাপ দিক থেকে থাকে। আইএসএসবিতে সেগুলো স্বীকার করাটাই ভালো। কিছু ক্যান্ডিডেটদের খারাপ উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও গ্রীন কার্ড পায় কারণ তারা তাদের পটেনশিয়াল কোয়ালিটিসগুলো প্রদর্শন করতে পেরেছে বিধায় ফলাফল পজিটিভ আসে। যদিও উক্ত ক্যান্ডিডেট বেশিদূর যেতে পারে না। অনেকসময় দেখা যায় একাডেমীতে তারা জয়েন করতে পারে না কিংবা একাডেমি থেকে ড্রপ আউট হয়ে যায়।

আমার সব টেস্ট ভালো হয়েছে এমনকি ডিপি ভাইভাও তবুও আমি রেড কার্ড পেয়েছি কেন?

আইএসএসবি ত্রিমাত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ক্যান্ডিডেটকে সুপারিশকৃত করে থাকে। আইএসএসবি কখনোই এক বা একাধিক ভালো পারফরম্যান্স কিংবা ত্রুটি বিচ্যুতির উপর ভিত্তি করে জাজ করে না। বরং একজন ক্যান্ডিডেটের চারদিনের সম্মিলিত পারফরম্যান্স, আচরণ, ব্যক্তিত্ব, চিন্তাধারা, আইডিওলজি, বুদ্ধিমত্তা, স্ট্যামিনা, সাহস ও নেতৃত্ব সহ মোট ২০ টি গুণাবলির উপর ভিত্তি করে গ্রীন/ইয়ালো/ রেড কার্ড দিয়ে থাকে। তাই কখনোই এক বা একাধিক ভুলের কারণে রেড কার্ড পেতে পারি বলে মনে করা উচিত নয়। আবার খুব ভালো পারফরম্যান্স করে গ্রীন কার্ড পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করা উচিত নয়।

আমার গ্রুপমেট সব টেস্টেই তেমন ভালো পারফরম্যান্স করতে পারেনি। সবকিছুতেই সে দুর্বল ছিল। কিন্তু তাও সে গ্রীন কার্ড পেয়েছে কিভাবে?

আমরা আমাদের গ্রুপমেটকে  তার গ্রুপ টাস্ক দ্বারা তাকে জাজ করে ফেলি। বরং প্রথমদিন স্ক্রিনিং হওয়ার পর সাইকোলজিক্যাল টেস্ট ও ডিপি ভাইভা পৃথকভাবে প্রত্যেক ক্যান্ডিডেট দিয়ে থাকে। আর এই টেস্টেই থাকে টুইস্ট। সাইকোলজিক্যাল টেস্ট ও ডিপি ভাইভাকে অনেকসময় মাদার অফ গ্রীন কার্ড বলা হয়ে থাকে। এই দুইটি টেস্টে যে যত স্মার্টলি ওয়েতে নিজের পার্সোনালিটি দ্বারা নিজেকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারবে এবং ক্যান্ডিডেট নিজে ও ডিপি, সাইকোলজিস্ট যদি উক্ত ক্যান্ডিডেটের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট থাকে তাহলে কেবল তখনই ঐ ক্যান্ডিডেটের গ্রীন কার্ড পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই গ্রুপমেটের বাহ্যিক ও গ্রুপ টাস্ক দ্বারা তাকে দুর্বল মনে করা উচিত নয়।

যাদের ভাষাগত দক্ষতা থাকে যেমন ফ্রেঞ্চ , জার্মান ইত্যাদি তাদের অধিকাংশকেই দেখি গ্রীন কার্ড পেয়ে থাকে। তাহলে কি ভাষা শিখা প্লাস পয়েন্ট?

ইংলিশ ও বাংলা ভাষার দক্ষতা থাকার পাশাপাশি সেকেন্ডারি কোনও ভাষা শেখা আপনার জন্য অবশ্যই প্লাস পয়েন্ট ও ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। কারণ জাতিসংঘের মিশন ও দেশি বিদেশি সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে আপনার জন্য তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু তাই বলে আপনার মধ্যে পটেনশিয়াল কোয়ালিটিসগুলো না থাকা সত্ত্বেও ভাষাগত দক্ষতার উপর ভিত্তি করে গ্রীন কার্ড দিবে বিষয়টি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন। তবে ল্যাঙ্গুয়েজ জানা থাকলে কিছু বিষয়ে আপনি অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবেন পার্সনালিটির দিক থেকে, মনে রাখবেন আইএসএসবি কোন ব্যক্তি কেন্দ্রিক প্রতিযোগিতা হয়।

ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড কেমন ম্যাটার করে? আইএসএসবি কেমন চায় আমাদের থেকে ?

আইএসএসবি ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডকে প্রাধান্য দিয়ে ক্যান্ডিডেটকে জাজ করে থাকে না । একজন অফিসারের ছেলে/মেয়ে আর একজন কৃষকের ছেলে/মেয়েকে আইএসএসবি সমান দৃষ্টিতে দেখে থাকে‌। ক্যান্ডিডেটের পারফরম্যান্সকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় তার পরিবারকে নয়।

আইএসএসবি ক্যান্ডিডেটের কাছ থেকে পটেনশিয়াল  লিডারশিপ কোয়ালিটিস চায় এবং উক্ত ক্যান্ডিডেট বাহিনীর জন্য মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে উক্ত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে গ্রীন কার্ড দেওয়া হয়।

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব আমার ফ্যামিলির সাথে পরিচিত না থাকলে কি আমি গ্রীন কার্ড পাবো না?

বিষয়টা এমন না, প্রতিদিন অনেক ক্যান্ডিডেট গ্রিনকার্ড পেয়ে যাচ্ছে ফ্যামিলির সাথে কোন গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিত্ব না থাকার পরেও। হ্যা যদি থাকে এটা একটা ভালো দিক হতে পারে। 

আমার বডি ফিটনেস পাতলা  তবে রিকুয়েরমেন্টসে পড়ি , আমি কি গ্রীন কার্ড পাবো?

রিকুয়েরমেন্টস অনুযায়ী মিনিমাম বডি ফিটনেস থাকলেই হবে। আইএসএসবি শুধু শারীরিক ফিটনেসের উপর ভিত্তি করে গ্রীন কার্ড দেয় না সম্মিলিত পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করে গ্রীন/ইয়ালো/রেড কার্ড দেওয়া হয়।